চাইতে হবে আল্লাহর কাছেই - মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত

পৌষের শেষ দুপুর এখনো মাঘ মাস শুরু হয়নি। মেঘের আড়ালে সারাবেলা সূর্য লুকিয়ে থাকায় দুপুর পেরিয়েও শীতের প্রকোপটা অন্য দিনের চাইতে একটু বেশিই মনে হচ্ছিল। এর মাঝে এক পশলা বৃষ্টি নামলো হঠাৎ করে। এমন সময় লোহার শিকলের ফাঁক দিয়ে ঝিরঝির বৃষ্টি দেখছি আর আনমনে মুখ দিয়ে উচ্চারিত হচ্ছিল সুরসম্রাট শিল্পী মশিউর রহমানের গাওয়া বিশিষ্ট গীতিকার আসাদ বিন হাফিজের লেখা জনপ্রিয় একটি গানের দু’এক লাইন-“পৃথিবী না জানুক আমি তো জানি, আমি কি পাপ করেছি হায়, আমার পাপের করলে বিচার বাঁচার নাই উপায়” যখনই একান্তে নিজেকে নিয়ে ভাবি, আত্ম-সমালোচনা করি তখনই এ গানটির কথা মনে চলে আসে। গানের লাইনগুলো উচ্চারণের সাথে সাথে শিহরণ দিয়ে লোমকূপ নাড়া দিয়ে যায়। দুনিয়ার আদালতে মিথ্যা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ অভিযোগের বিপরীতে সাহস করেই বলতে পারি আমি অপরাধী নই অভিযোগের সাথে দূরতম সম্পর্কও নেই আমার। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন, রাসূল সা.-এর অনুসরণ, শিরকমুক্ত জীবনগঠন, ফরজ ওয়াজিব হালাল হারাম মেনে চলা, কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, অন্যের হক ও অধিকার ক্ষুন্ন না করা, এসব প্রশ্নে যখন নিজেকে নিজেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাই, তখন গানের লাইনগুলো নিজ অনুভূতিকে প্রচণ্ড নাড়া দেয়। নিজের কৃতকর্মের অনুশোচনায় মহান আল্লাহ তায়ালাকে ডেকে বারবার পানাহ চাই। জানা অজানা, সগিরা (ছোট) কবিরা (বড়) গোনাহ পাপের জন্য কায়মনোবাক্যে নিবেদন করি অসীম দয়াময় আল্লাহর কাছে। মানুষ যখন পাপমোচনের তাগাদা অনুভব করে তখন নিজেকে সঁপে দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছেই নিবেদন করে। কারণ মানুষের যত চাওয়া সব নিবেদনের জায়গাদাতা একমাত্র আল্লাহরই নিকট। আবার মানুষ যখন বিপদ আপদ মুসিবতে পতিত হয় তখনও উত্তরণের জন্য আল্লাহর কাছেই ধরনা দেয়। পাপমোচন, বিপদ আপদ কিংবা মুসিবত ছাড়াও মানুষের যেকোনো চাহিদা পূরণের প্রত্যাশায় মানুষ দু’হাত তুলে আল্লাহর নিকটই প্রার্থনা করে। মানুষ যে আল্লাহর কাছেই চাইবে কিংবা তার সকল চাহিদা যে আল্লাহকেই জানাবে এবং তাতে আল্লাহ সাড়া দিবেন সেটিও আল্লাহই আমাদের বলে দিয়েছেন। কুরআনুল কারিমে এসেছে “তোমাদের প্রভু বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকের (দোয়ার) জবাব দেবো (দোয়া কবুল করবো)। (সূরা মুমিন : ৬০)

চারিত্রিক দৃঢ়তা বয়ে আনে সফলতা

চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু এই সম্পদের মান বা মূল্য নির্ধারণের কোনো মূল্যায়নসূচক নেই। মূল্য দিয়ে চরিত্রকে মূল্যায়ন করা যায় না বলেই এটিকে অমূল্য সম্পদ বলা হয়। মানুষের সার্বিক জীবনব্যবস্থায় এই অমূল্য সম্পদের কার্যকারিতা অনেক শক্তিশালী। তাই মানবজীবনে চরিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী বিষয়। ঈমানের পরে চরিত্রকেই ইসলামে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যার চরিত্র দুর্বল, সে খাঁটি ঈমানদার নয়, প্রকৃত বিশ্বাসী নয়। চরিত্র মহামূল্যবান, অতুলনীয় সম্পদ ও এক অমূল্য রত্ন। ব্যক্তির নৈতিকতা ও চরিত্রকে সুন্দর ও মার্জিত করার বিষয়টি ইসলামে কত যে গুরুত্বপূর্ণ মানবতার মহান শিক্ষক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর নিম্নোক্ত হাদিস থেকে অনুমান করা যায়। রাসূল (সা) ইরশাদ করেন- তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম মানুষ বলে বিবেচিত, যাদের চরিত্র উত্তম। অপর এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, কেয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হবে, যার নৈতিকতা ও চরিত্র সবচেয়ে ভালো। (বোখারি)

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা স্রষ্টাকে ভুলে যাওয়া

সত্যিকার অর্থেই বেশির ভাগ মানুষ বাস্তবে স্রষ্টাকে ভুলে গিয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় নাস্তিকের সংখ্যা অনেক। রাশিয়া পূর্বে অফিসিয়ালি নাস্তিক ছিল। এখনও সেখানে নাস্তিকতার হার কম নয়, বরং অনেক হবে। অন্যদিকে যারা বিশ্বাসী বলে দাবী করে তাদের মধ্যেও অনেকে সন্দেহবাদী। অর্থাৎ বলবে না যে স্রষ্টা নেই, কিন্তু বাস্তবে স্রষ্টাকে স্মরণ করবে না বা তার আদেশ মেনে চলবে না। স্রষ্টাকে মেনে চলবে এরকম লোকের সংখ্যা খুব কম।