আত্মীয়-স্বজনের সাথে গড়ে উঠুক জান্নাতী সম্পর্ক

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের রিজিক প্রশস্ত হওয়া এবং নিজের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাওয়া পছন্দ করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। (বুখারি ও মুসলিম)

আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, “হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে আসনি।” সে বলবে, “আমি আপনাকে কিভাবে দেখতে আসতে পারি? আপনিতো সারা বিশ্বজগতের প্রতিপালক!!” তিনি বলবেন, “তুমি তো জেনে ছিলে যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, তবুও তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে দেখতে যেতে, তবে তুমি আমাকে তার নিকট পেতে।” (তিনি বলবেন) “হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাদ্য দাওনি।” সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনিতো বিশ্বজাহানের প্রভু! আমি আপনাকে কিভাবে খাওয়াতে পারি? তিনি বলবেন, তুমিতো জেনে ছিলে যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাদ্য দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে খাবার খাওয়াতে তাহলে আমার কাছ থেকে তা পেয়ে যেতে। (তিনি বলবেন) “হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম অথচ তুমি আমাকে পানি দাওনি।” সে বলবে, আপনি হলেন সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক, আপনাকে আমি কিভাবে পান করাতাম? তিনি বলবেন, “তুমি তো জেনে ছিলে যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি পান করতে চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে পানি দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে পান করাতে তবে তার পুরস্কার আমার নিকট পেতে।” (সহিহ মুসলিম)

মুসলিম উম্মাহর পতনের কারণ

“হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ভবিষ্যতে মানুষের সামনে এমন একটা যুগ আসবে যখন নাম ব্যতিরেকে ইসলামের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, আল-কুরআনের আক্ষরিক তিলাওয়াত ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। তাদের মসজিদ গুলো হবে বাহ্যিক দিক দিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হবে হেদায়াত শূণ্য। আর তাদের আলেমগণ হবে আকাশের নিচে জমিনের উপরে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। কারণ তাদের মধ্য থেকে ইসলাম/দ্বীন সম্পর্কে ফিতনা প্রকাশ পাবে। অতপর সেই ফিতনা তাদের দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে।” (বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান অধ্যায়)

রাসূল (সা.)-এর সামাজিক ও মানবীয় চরিত্র

 অনুবাদ হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মদ (সা) তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রা) কে হেরা পাহাড়ে ঘটে যাওয়া অহি ও জিবরাইল-সংক্রান্ত সব কথা বলেন ও ভয়ার্ত চিত্তে বললেন, “আমি আমার জীবন সম্পর্কে আশঙ্কা করছি।” খাদিজা সান্তনা দিয়ে বলেন, “আল্লাহর শপথ! তা কখনও হতে পারে না, তিনি আপনাকে অপদস্থ করবেন না। ১. আপনি আত্মীয়াতার বন্ধন সংরক্ষণ করেন, ২. আপনি দুস্থ মানুষের বোঝা হালকা করেন, ৩. নিঃস্বদের আহার করান, ৪. অতিথিদের সেবা করেন, ৫. সত্যের পথে নির্যাতিতদের সাহায্য করেন।” (বুখারি)

ধৈর্য্যের মাধ্যমেই মুক্তি মেলে

অনুবাদ: হযরত খাব্বাব ইবন আরাত (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সা.) এর নিকটে গেলাম তখন তিনি ক্বাবা শরীফের ছায়ায় বসে আরাম করছিলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন না এবং দোয়া করবেন না? (আমরাতো মার খেতে খেতে শেষ হয়ে গেলাম)। আমাদের কথা শুনে রাসূল (সা.) বললেন, তোমাদের আগে যারা এই পৃথিবীতে দ্বীনের দা‘ওয়াত দিতে এসেছিল তাদেরকে (সমাজ শক্তি-রাষ্ট্র শক্তি) ধরত, তাদের জন্য জমিনে গর্ত খনন করা হত, এরপর সে গর্তে তাদেরকে গেড়ে দিত, এরপর করাত আনা হত, সে করাত তার মাথার উপরে রাখা হত, এরপর করাত চালিয়ে জিবিত মানুষটাকে চিরে দ্বিখন্ডিত করে ফেলা হত। এর পরেও তাদেরকে একচুলও আল্লাহর দ্বীন থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। কোন কোন ক্ষেত্রে লোহার চিরুনী দিয়ে তাদের শরীরের হাড় থেকে মাংস আলাদা করে ফেলা হত, এর পরেও তাদেরকে দ্বীন থেকে সারানো সম্ভব হয়নি। (ও খাব্বাব শোন!) আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, এমন এক সময় আসবে যখন সানা থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত মানুষ চলবে, এ মানুষ গুলোর মনের মধ্যে আল্লাহর ভয় ছাড়া আর কোন ভয় থাকবে না। আর মেষ পালের জন্য বাঘের ভয় ছাড়া কোন ভয় থাকবে না। বরং তোমরা বড্ড তাড়াহুড়ো করছ। (সহীহ আল-বুখারী)

সর্বোচ্চ শান্তি ও সুরক্ষা লাভের উপায়

বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (সা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা সাত ধরনের ব্যক্তিকে তাঁর আরশের ছায়া দ্বারা আচ্ছাদিত করবেন যেদিন ঐ ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২. ঐ যুবক যে আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদাতে বেড়ে ওঠে, ৩. এমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহ্ তায়ালাকে স্মরণ করে এবং তার নয়নযুগল অশ্রুসিক্ত হয়, ৪. ঐ ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে ঝুলন্ত থাকে, ৫. এমন দুই ব্যক্তি যারা একে অন্যকে শুধুমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের আশায় ভালোবাসে, ৬. এমন ব্যক্তি যাকে কোন প্রভাবশালী সুন্দরী রমণী কুপ্রস্তাব দেয় আর সে উত্তরে বলে আমি আল্লাহ্কে ভয় করি, ৭. ঐ ব্যক্তি যে নিজের দানকে এমনভাবে গোপন করে যে তার বাঁ হাত জানতে পারে না ডান হাত দ্বারা কী দান করল। (সহীহ বুখারী, ষষ্ঠ খন্ড, পৃ. ২৪৯৬, হাদিস নম্বর ৬৪২১)

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আনুগত্য ও অনুকরণের অপরিহার্যতা

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ ( সা:) বলেছেন, আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু যে অস্বীকার করেছে সে ছাড়া। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল ( সা:) কে অস্বীকার করবে ? রাসুলুল্লাহ ( সা:) বললেন, যে আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে যাবে আর যে আমার অবাধ্য হল বা অমান্য করল, সে অস্বীকার করল। (সহীহ আল-বুখারী)।

জ্ঞান অর্জনকারীর মর্যাদা

আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অর্জন করার উদ্দেশ্যে পথ চলবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দিবেন। (তিরমিযী হা/২৬৪৬; ইখনু মাজাহ হা/২২৩; সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৮, সনদ সহিহ।)

অন্যায়ের প্রতিরোধ ঈমানের দাবি

“হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, তোমাদের সামনে যখন ইসলামবিরোধী কাজ হতে দেখবে তখন হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। যদি এতে অক্ষম হও তবে মুখ দিয়ে প্রতিবাদ জানাবে। যদি তাতে অক্ষম হও তবে অন্তর দিয়ে তাকে ঘৃণা করবে, তবে এটি দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক।” (সহীহ মুসলিম)

দুনিয়ায় ঈমানদারের বন্দিশালা

হজরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (সা) ইরশাদ করেছেন : দুনিয়া ঈমানদারের বন্দিশালা এবং কাফিরের জান্নাত (সহীহ আল মুসলিম)