রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩

জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে ছাত্রশিবিরের ১৭ দফা প্রস্তাবনা | শিক্ষা সেমিনার ২৩

দেশ ও দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অত্যাসন্ন ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে শিক্ষাব্যবস্থার এই ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রশিবির শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য ১৭ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছে।

ইসলামী শিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ‘শিক্ষাব্যবস্থার অতীত, বর্তমান ও প্রত্যাশার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক শিক্ষা সেমিনার ২৩ এর সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান এই ১৭ দফা পেশ করেন। সেমিনারে প্রকাশিত "প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষাক্রম : জাতি ধ্বংসের হাতিয়ার" শীর্ষক বুকলেট এর মধ্যে প্রস্তাবনাগুলো স্থান পেয়েছে।

প্রস্তাবনাগুলো হলো (সংক্ষেপিত) :
১. ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের সম্মিলনে শিক্ষা কমিশন গঠন ও ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা।
২. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা (৭ম অধ্যায়) অনুযায়ী সর্বপর্যায়ে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা ও স্ব-জাতীয় মূল্যবোধের শিক্ষার বাস্তবায়ন করা।
৩. কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করা। কওমি মাদ্রাসার গুণগতমান বজায় রাখার ওপর জোর প্রদান করা।
৪. মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষ করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দক্ষ করা, বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করা, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সকল বৈষম্য দূর করা। ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলোকে সরকারিকরণ করা।
৫. শিক্ষাব্যবস্থার প্রত্যেক স্তরে কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
৬. সাধারণ শিক্ষাধারার মাধ্যমিক স্তরে ঐচ্ছিক বিষয়ের তালিকায় পালি ও সংস্কৃতির পাশাপাশি উর্দু ও ফারসির সংযোজন করা।
৭. উচ্চশিক্ষিত উপযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রক পরিষদ গঠন করা প্রয়োজন।
৮. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর ২৮তম অধ্যায়ে শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে গৃহীত বিশেষ পদক্ষেপসমূহের মধ্যে ১৫ ও ১৬ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত এবং উচ্চশিক্ষা অধ্যায়ের ১১নং কৌশল অনুযায়ী বাংলাভাষার যথাযথ মান বজায় রাখা ও উন্নয়নে সুপারিশকৃত পদক্ষেপসমূহের বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
৯. উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে দিনব্যাপী ক্লাস এবং প্রতিদিন পরীক্ষা নেওয়ার মতো অকার্যকর, অযৌক্তিক পদ্ধতি বাতিল করে কৌশলগত স্বাভাবিক কার্যকর পদ্ধতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কর্মদক্ষ নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে চাহিদার আলোকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ অবকাঠামোগত কৌশল বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
১০. উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো। পাশাপাশি বাজেটের একটা বড় অংশ উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যয় করতে হবে।
১১. বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। সকল প্রকার দলীয় নিয়োগ পরিহার করা, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করা। শিক্ষক নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটা মনিটরিং করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
১২. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা অধ্যায় মোতাবেক দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের কৌশলসমূহ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
১৩. জাতীয় শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনার জন্য রিসার্চ-স্কলারসহ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও চিন্তাবিদদের নিয়োজিত করা।
১৪. দেশ-কাল, ধর্মীয় আদর্শ, চিন্তাচেতনা ও মূল্যবোধের আলোকে বাংলা, ইংরেজি, আরবি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক তৈরির জন্য শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, লেখক, চিন্তাবিদদের নিয়োজিত করা।
১৫. পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষার্থীদের জন্য এমনভাবে গল্প ও কবিতা রচনা করতে হবে, যেন শিশুদের মাঝে এই শিক্ষা প্রতিবেশী ও বন্ধুদের প্রতি ভালোবাসা, মমত্ববোধ বৃদ্ধি করে। পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে উদ্বুদ্ধ করে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সৃষ্টির মহামানব নবীদের (আ.) প্রতি, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি এবং ধর্মপরায়ণ নারী-পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ উজ্জীবিত করবে। মানুষ ও আল্লাহর প্রতি নিজ নিজ কর্তব্যে সচেতন করবে। তাদের সত্য ও ন্যায়ের জন্য আত্মত্যাগের শিক্ষা দেবে। এই সব গল্প প্রধানত নবীর সিরাত ও হাদিস এবং প্রখ্যাত মনীষীদের জীবনী থেকে নিতে হবে।
১৬. স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকগণ এমনভাবে মনোবিজ্ঞান, কলা ও সমাজবিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবেন, যাতে তারা ইসলামি তত্ত্ব প্রত্যয়ের সাথে ব্যাখ্যা করতে পারেন। তাদেরকে মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতার কারণগুলো সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে। এভাবে শিক্ষার তত্ত্ব ও কর্মতৎপরতা সম্পর্কিত নির্দেশ প্রদানে তারা বিশেষ গুরুত্বারোপ করবেন।
১৭. প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে Guidance বিভাগ থাকতে হবে। এই বিভাগ গভীর আত্মবিশ্বাস ও যোগ্যতাসম্পন্ন এমন ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হতে হবে, যারা ছাত্রদের ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত, মনস্তাত্ত্বিক ও অন্যান্য বিষয়ে উপদেশ প্রদান ও পরিচালনায় সহায়তা করতে পারবেন।

বুকলেটটির PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন

আরো দেখুন: শিক্ষা সেমিনার ২৩