মঙ্গলবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতির শুভেচ্ছা বক্তব্য | মঞ্জুরুল ইসলাম

 

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলিহিল কারীম, ওয়ালা আলিহি ওয়া আসসাহাবিহি আজমাঈন।

সম্মানিত দেশবাসী, প্রিয় ছাত্রসমাজ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত সাবেক এবং বর্তমান জনশক্তি ভাইয়েরা
আসসলামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।


সমগ্র দেশবাসীকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পুষ্পিত শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। আমরা শুকরিয়া আদায় করছি সেই মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে যার অসীম দয়া ও রহমতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ৪৭তম বছরে পদার্পণ করেছে। সালাম ও দূরুদ পেশ করছি বিশ্ব মানবতার মহান মুক্তির দূত ও শিক্ষক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, যার আনিত ও প্রদর্শিত জীবন বিধানকে বাস্তবায়ন করাই ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যে। আজ স্মরণ করছি ছাত্রশিবিরের সংগ্রামী অগ্রযাত্রায় জীবন দেয়া ২৩৪ জন শহীদকে যারা আল্লাহর রাহে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে সেই প্রেরণার বাতিঘর বীর সেনানীদের শাহাদাত কবুলিয়াতের দোয়া করছি।


সৎ, যোগ্য, মেধাবী, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরীর উদ্দেশ্যেই ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের মহান ও পবিত্র লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৭৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। জাতির প্রত্যাশা পূরণে আদর্শিক এই পথচলার বাঁকে বাঁকে দেশ জাতি ও ইসলামের জন্য আমাদের অসংখ্য ভাইকে জীবনের নজরানা পেশ করতে হয়েছে। পঙ্গূত্ব বরণ করতে হয়েছে অসংখ্য ইসলাম প্রিয় তরুণকে। মোকাবেলা করতে হয়েছে পাহাড়সম অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের। তবুও আমরা থেমে যায়নি। প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছরে আজ ছাত্রশিবির আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার এক অপ্রতিরধ্য কাফেলায় পরিণত হয়েছে, আলহমদুলিল্লাহ।


এ কথা আজ সর্বজন স্বীকৃত যে, ছা্ত্রশিবির গতানুগতিক কোন ছাত্র সংগঠন নয়। ছাত্রশিবিরের বিরুধীরাও শিবিরের সততা, নৈতিকতা, চারিত্রিক শ্রেষ্ঠত্ব, দেশপ্রেম, আমানতদারীতা, মেধার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য। এটি আমাদের প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার এক নেয়ামত। যেখানে ছাত্র রাজনীতির নামে খুন, ধর্ষণ, অস্ত্রবাজী, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, মাদক-অশ্লীলতার সয়লাব ছিল ছাত্রশিবির তার বিপরীতে ছাত্র সমাজের মেধা লালন, মেধা বিকাশ এবং ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শ নাগরিক তৈরীর গঠন মূলক কর্মকান্ড ছাত্র সমাজকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ঠ করেছে। ছাত্র রাজনীতির প্রকৃত মডেল তাদের সামনে প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ প্রায় সকল ইস্যূতেই রয়েছে ছাত্রশিবিরের স্বত:স্ফুর্ত অংশ গ্রহণ। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন, ২০০১ এর বৃহত্তর ছাত্রঐক্য, ২০১৩ সালে রাজবন্দি মুক্তি আন্দোলন, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছাত্রশিবির অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভোটাধিকার লুণ্ঠন, দ্রব্যমূল্যের নজিরবিহীন উর্ধ্বগতি, জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ, নাস্তিক্যবাদী ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষাব্যবস্থা, ত্রুটিপূর্ণ বিকৃত শিক্ষাক্রম, দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা ছাত্রশিবিরকে বর্তমান সময়ে আরো প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।


রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের উপর নারকীয় জুলুম নির্যাতন চালিয়ে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী তরুণসমাজকে ধ্বংসের আয়োজন করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন নেই, শিক্ষার পরিবেশ নেই, শিক্ষা ও গবেষণা কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ নেই, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নেই, ভিন্নমত প্রকাশ করার স্বাধীনতা নেই, প্রয়োজনীয় আবাসন নেই, মানসম্পন্ন শিক্ষা নেই। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে ছাত্রশিবিরের সক্রিয় ভূমিকার ব্যাপারে সমগ্র ছাত্রসমাজ আজ আশাবাদী। চরিত্রহীন, সন্ত্রাস নির্ভর বেপরোয়া ছাত্ররাজনীতিকে হটিয়ে ক্যাম্পাসে আবার সৃজনশীল সুস্থ ছাত্র রাজনীতির চর্চা, ইসলামী মূল্যবোধের চর্চা, শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সুনিশ্চিতকরণে ছাত্রশিবিরের এই প্রচেষ্টার সহযোগী হতে হবে আপামর ছাত্রসমাজকে। সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধবিরোধী, নৈতিকতা বিবর্জিত, বিকৃত ইতিহাসনির্ভর, ইসলামবিরোধী বস্তুবাদী পাঠ্য বাতিল করে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে জাতীয় শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে জোর গলায় আওয়াজ তুলতে হবে। এই শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার দাবীতে সরব হতে হবে যে শিক্ষাব্যবস্থা সমৃদ্ধ জাতি গঠনে নৈতিকতাসম্পন্ন দেশপ্রেমিক দক্ষ নাগরিক উপহার দিতে সক্ষম হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষীকির এই শুভক্ষণে আপনাদের প্রতি আহবান, এই সংকটময় সময়ে দেশ ও জাতিকে রক্ষায় অপশক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, ভীতিকে জয় করে ছাত্রশিবিরের এই সোনালী উদ্যোগে আপনিও অংশীদার হবেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন স্ব-স্ব জায়গা থেকে।


ছাত্রশিবির ইস্পাতদৃঢ় মনোবল নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই অন্ধকার অধ্যায় দূর করে জণগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে, ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন এক সমৃদ্ধ জাতি গঠনের সংগ্রামে আমরা সদা তৎপর। ছাত্রশিবিরের সার্বিক পথচলায় আপামর ছাত্রসমাজসহ সমগ্র দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা, দোয়া ও ভালবাসা অব্যাহত রাখবেন বলে প্রত্যাশা করছি। ৪৭তম এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকল ছাত্র সুধী, শুভাকাঙ্খী ও দেশবাসীকে হৃদয়ের গভীর থেকে জানাই শুভেচ্ছা।


আল্লাহ হাফেজ
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জিন্দাবাদ।