সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

পবিত্র মাহে রমাদান উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতির শুভেচ্ছা বক্তব্য || মঞ্জুরুল ইসলাম

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, ওয়াল আকিবাতু লিলমুত্তাকিন, আসসালাতু ওয়াসসালাম আলা রাসূলিল্লাহিল কারিম। ওয়ালা আলিহি ওয়াসহাবিহি আযমাঈন।
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَیْكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَۙ
সম্মানিত দেশবাসী, প্রিয় ছাত্রসমাজ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের জনশক্তি, সাবেক জনশক্তিবৃন্দ দেশ এবং বিদেশে অবস্থানরত সুধী সুভাকাঙ্খী আহলান সাহলান, মাহে রমাদান
বছর ঘুরে আমাদের মাঝে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বাণী নিয়ে উপস্থিত হয়েছে মাহে রমাদান। রমাদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মুমিনের অন্তরে তাকওয়ার সৃষ্টি করা, আর তাকওয়ায় ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির মূল ভিত্তি। আর তাই প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্যম্ভাবী কর্তব্য তাকওয়া অর্জনে সচেষ্ট থাকা।
রমাদান মাসেই অবতীর্ণ করা হয়েছে নবী (সঃ) এর ওপর পবিত্র কোরআনুল কারীম। পবিত্র কোরআনুল কারীম মানবজাতির জন্য রহমত। সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন- شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ فِیْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَ الْفُرْقَانِ١ۚ - রমযান মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়।


প্রিয় ছাত্রসমাজ
যেই কোরআন নাযিলের কারণে রমাদানের এত মর্যাদা ও সম্মান, সেই কোরআনের সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করি। কোরআনের আলোকে এ সমাজকে বিনির্মাণের যে আন্দোলন ইসলামী ছাত্রশিবির করে যাচ্ছে। আসুন আমরা সেই কোরআনের আন্দোলনে নিজেদের শামিল করি। কোরআনের আলো প্রতিটি ঘরে পৌছানোর জন্য আমরা মাহে রমাদানকে বেছে নিতে পারি। এ পবিত্র মাসে সহিহভাবে কোরআন অধ্যায়ন শেখা চেষ্টা করা উত্তম কাজ হবে। যারা কোরআন পড়তে জানি তারা যেন অন্তত একজনকে কোরআন শিখানোর উদ্যোগ নিতে পারি। রাসূল সা. বলেন, তিনিই হচ্ছেন সর্বোত্তম, যিনি কোরআন শিখেন এবং অন্যকে কোরআন শিখান। আর যাদের সামর্থ আছে তারা একটি অর্থসহ কোরআন বিতরণ করতে পারি।

মাহে রমাদান আরো একটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো ১৭ই রমাদান ঐতিহাসিক বদর দিবস। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ হয়েছিল ১৭ই রমাদান। সেদিন ১০০০ সশস্ত্র কাফের সৈন্যের বিরুদ্ধে রাসূল সা.এর নেতৃত্বে মাত্র ৩১৩ জন মুজাহিদ যুদ্ধে শামিল হয়ে যে বিজয় হয়েছিল সেই বিজয়ের মাধ্যমে গোটা বিশ্বব্যাপি ইসলামের সুমহান বার্তা পৌছে গিয়েছিল। এই যুদ্ধে সত্য এবং মিথ্যার পার্থক্য সুচিত হয়েছিল। বদর যুদ্ধ হয়েছিল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে। জুলুম-নির্যাতন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য ১৭ই রমাদান আমাদের শিক্ষা দেয়।
আজকে সমাজে জুলুম-নির্যাতন নিপীড়ন অবিচার চলছে। আলেম-ওলামাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ইসলামী তাহজিব তমুদ্দুন পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। রাষ্ট্রীয় মদদে ইসলামবিরোধী বস্তুবাদী জিনিস পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে নাস্তিক্যবাদী, অশালিন ও পৌত্তলিক পাঠ্যক্রম করে আগামীর দেশ গড়ার কারিগরদের বিপদগামী করার নীল নকশা বাস্তবায়ন চলছে। অথচ যেই কোরআনের কারণে রমাদানের এত মর্যাদা, যে বদর যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলাম বিরোধীদের পরাজিত করার মাধ্যমে কালেমার পতাকা উড্ডিয়ন করা হয়েছিল সে রমাদান আমাদের মাঝে সমাগত। আমরা এই রমাদান থেকে কোরআনের রাজ বাস্তবায়নের জন্য, অন্যায়-জুলুমকে বিতারিত করে সত্যকে উন্মুচিত করার জন্য শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি পাশাপাশি ফিলিস্তিনসহ বিশ্বব্যাপী মুসলিমদ নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী সকল কার্যক্রম বন্ধে আওয়াজ তুলতে পারি।


প্রিয় দেশবাসী
আসুন মাহে রমাদানকে আমরা কাজে লাগাই। কারণ রমাদান হচ্ছে প্রশিক্ষণের মাস। প্রত্যেক ওয়াক্তে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় ও বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে পারি। পাশাপাশি রসূল (স)-এর সুন্নাহগুলো আমল করতে পারি। যাকাত আদায় ও বেশি বেশি দান-সদকা করা। বাকবিতণ্ডা থেকে শুরু করে সকল ধরণের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা অনুরোধ করছি।
আমরা লক্ষ্য করি, যে ব্যক্তিটি ধুমপান করত সেই ব্যক্তিটি মাহে রমাদানে ধুমপান ছেড়ে দেয়। যে ব্যক্তি নামাজ পড়ত না সে নামাজ পড়া শুরু করে। যার কোরআনের সাথে সম্পর্ক ছিল না সে কোরআন পড়া শুরু করে। কিন্তু দূভার্গ্যজনক হলেও সত্য, রমাদান যেদিন শেষ হয় সেদিন থেকেই আমরা আবার নামাজ পড়া ছেড়ে দেই, আবার মাদক গ্রহণ করা শুরু করি, কোরআন থেকে দূরে সরে যাই।
প্রিয় দেশবাসীকে বিনীতভাবে অনুরোধ করতে চাই, এ রমাদান মাসে আমরা যা শিখব পরবর্তী ১১ মাস সে আলোকে জীবন পরিচালনা করব। তাহলেই মাহে রমাদানের স্বার্থকতা হবে। আমরা যদি লক্ষ্যকরি তাহলে দেখব, এই ৩০ দিনের রমাদান আমাদের মাঝে যে পরিবর্তন, ধৈর্য, শৃঙ্খলা, সমানুবর্তিতা, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, রাসূল সা. প্রতি ভালবাসা নিয়ে আসে এটিকে ধারণ করতে পারলেই সমাজটাকে পরিবর্তন করা সম্ভব।


প্রিয় ব্যবসায়ী সমাজ
রমাদানে দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি রোধে আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। মজুদদারীর বিরুদ্ধে সচেতন হোন। ওজনে কম দেয়া বন্ধ করুন। হোটেল ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করব, দিনের বেলায় হোটেল রেস্তুরা বন্ধ রাখুন। অশ্লীল সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ করুন। এই রমজান যেন মুসলমানরা সঠিকভাবে পালন করতে পারে সে জন্য আপনাদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ আপনাদের উত্তম জাযাহ অবশ্যই দিবেন।
আর রাজনৈতিক ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি রমাদানে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্র্যপূর্ণ আচরণ, রাজনৈতিক সহাবস্থানসহ সকল কার্যক্রমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। পাশাপাশি দরিদ্রদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উচিত।
মাহে রমাদানের সর্বোচ্চ মর্যাদা যেন আমরা সকলে মিলে রাখতে পারি সেইজন্য দেশবাসী ও ছাত্রসমাজসহ সকলের প্রতি বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। ইসলামী ছাত্রশিবির কোরআনের আলোকে এ সমাজটাকে পরিবর্তন করতে চায়, ব্যক্তিকে পরিশুদ্ধ করতে চায়, আদর্শ সমাজ গঠন করতে চায়। আসুন আমরা সকলে মিলে একটি সমৃদ্ধ সোনালী ইসলামের আলোকে উদ্ভাসিত একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আবারো রমাদানের পবিত্র রক্ষার আহবান জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।


ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জিন্দাবাদ