রবিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

রাষ্ট্রীয় গুমের শিকার ইবি'র দুই মেধাবী ছাত্র ওয়ালীউল্লাহ ও মুকাদ্দাস-এর সন্ধান চেয়ে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি

২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে মধ্যরাতে বাস থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গ্রেফতারকৃত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রশিবির নেতা ওয়ালীউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাসের সন্ধান চেয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, “অবৈধ আওয়ামী সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গুমের মতো অমানবিক ও নিকৃষ্ট ঘটনার নিন্দা এবং ধিক্কার জানিয়ে আসছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও মানবাধিকার সংগঠন। গ্রেপ্তারের পর গুম হওয়া সন্তানের জন্য পিতামাতা ও স্বজনদের প্রতীক্ষার প্রহর দীর্ঘ হলেও অমানবিক আচরণেই অটল রয়েছে প্রশাসন।
২০১২ সালে ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ ব্যক্তিগত কাজ শেষে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী হানিফ এন্টারপ্রাইজের ৩৭৫০ নম্বর গাড়িতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে মধ্যরাতে গাড়ি থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের মেধাবী ছাত্র, ছাত্রশিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন অর্থ সম্পাদক মো. ওয়ালীউল্লাহ এবং ফিকাহ বিভাগের মেধাবী ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল মুকাদ্দাসকে সাভারের নবীনগর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়।
কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছর হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তারের স্বীকার করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুধু এই দুইজনই নয়; বরং রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে শিবির নেতা হাফেজ জাকির হোসেন, যশোর বেনাপোল থেকে রেজওয়ান হুসাইন ও বান্দরবান সদর থেকে জয়নাল হোসেনকে গ্রেফতার করে বছরের পর বছর গুম করে রেখেছে অবৈধ আওয়ামী সরকার।
ইবি’র দুই মেধাবী ছাত্রকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর পরই পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করা হয় এবং আমরা বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হই, তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফজতেই রাখা হয়েছে। তাদের উদ্ধারের জন্য আইন, আদালত ও মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে তাদের স্বজনরা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রের গুমের ব্যাপারে ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি আব্দুল আউয়াল ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পুলিশের আইজিকে তলব করে দুই ছাত্র নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে তদন্তের অবস্থা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
২ শিবির নেতার সন্ধানের দাবিতে ক্যাম্পাসে ধর্মঘট, মানববন্ধন, মিছিলসহ বিভিন্ন আন্দোলন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সরব প্রতিবাদ এবং হাইকোর্টের নির্দেশনার পর বছর পেরিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুম করা মেধাবী ছাত্রদের গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার বা সন্ধান দেয়নি
গুমের মতো সমাজবিরোধী, মানবতাবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী অমানবিক দুষ্কর্মের শিকার হচ্ছে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নাগরিকরা। স্বাধীন দেশে যদি নিরপরাধ ছাত্রদের এভাবে গুম হতে হয়, আর তাদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালালে হয়রানির শিকার হতে হয়, তাহলে জনগণ মনে করে এই স্বাধীনতা অর্থহীন। আর বাস্তবতাও হলো—ফ্যাসিবাদী সরকার অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ ও অর্থহীন করে দিয়েছে।”
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “অন্য সবার মতো ওয়ালীউল্লাহ, মুকাদ্দাস, জাকির হোসেন, রেজওয়ান হুসাইন এদেশের সন্তান। সাংবিধানিকভাবে তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে। তাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছেন সরকার। যদিও আইনের ধারক-বাহকরাই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৫ মেধাবী ছাত্রকে গুম করে রেখেছে। কোনো সভ্যসমাজে এমন লোমহর্ষক আচরণ চিন্তা করা যায় না।
এত কিছুর পরও আমরা বিশ্বাস করি, ওয়ালীউল্লাহ, মুকাদ্দাস, জাকির হোসেন, রেজওয়ান হুসাইন, জয়নাল হোসেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেই নিরাপদে আছেন। গুমের শিকার ব্যক্তিরা কে কোথায় কীভাবে আছেন তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অবিলম্বে তাদেরসহ গুম হওয়া সকলের সন্ধান দিতে হবে। একইভাবে তদন্ত কমিশন গঠন করে গুমের প্রত্যেকটি ঘটনার তদন্ত করে এর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় সময়ের ব্যবধানে গুম হওয়া স্বজনদের আর্তনাদ আর চোখের পানির চরম মূল্য দিতে হবে।”