বৃহস্পতিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৩

আব্দুল জাব্বার

ক্ষমতার পালাবদল, কোন পথে স্বদেশ? -মুহাম্মদ আবদুল জাব্বার

এ বছরের শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ক্ষমতার পালাবদল দেশের ইতিহাসে বড় একটি টার্নিং পয়েন্ট। বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের বাড়াবাড়ি ও বিরোধীদলের সরকার বিরোধী কঠোর অবস্থান এবং পশ্চিমা দুনিয়ার কুটনৈতিক তৎপরতার কারণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই সময়টাকে বিশেষ ভাবে বিশ্লেষন করছেন। এহেন জটিল অবস্থার সমিকরণ খুঁজতে গেলে গত দু-একমাসের রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করতে হবে।
দেশের এহেন রাজনৈতিক সংঘাত মুহুর্তে আমেরিকান এম্বাসেডর পিটারহাস এখন সরকারী ও বেসরকারী দল এর অন্যতম সমোঝতাকারী হিসাবে ভূমিকা রাখছেন বলে অনেকে মনে করেন। একারণে সরকারীদল ও বিএনপি আলাদা আলাদা ভাবে পিটার হাসের সাথে বৈঠক করেছেন। সাথে বিভিন্ন দলের সমর্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও তাদের মতামত ব্যক্ত করছেন। তবে তার এমন তৎপরতা আওয়ামীলীগ ভালোভাবে নেয়নি। তাই আওয়ামীলীগের তরফ থেকে ১৪ জন বাংলাদেশী নাগরিক যৌথভাবে ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগে পিটার ডি হাসের সাম্প্রতিক কার্যক্রম দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে এবং দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির তৈরি করছে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন। (সুত্রঃ বাংলা ইন্সািডার ও অন্যান্য পত্রিকা)।

আওয়ামীলীগ সংবিধানের পঞ্চাদশ সংশোধনীর দোহাই দিয়ে বিগত দুই নির্বাচন জাতিকে ভেল্কি দেখিয়ে দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করে বিনা ভোটের সরকার হিসাবে দেশে বিদেশে বদনাম কুড়িয়েছেন। দেশে এখন একটি রাজনৈতিক কঠিন মুহুুর্তে আওয়ামীলীগ সকল রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুযোগ থাকা সত্বেও সংবিধানের দোহায় দিয়ে সংবিধান মাফিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে বুলি আওড়াচ্ছে। যদিওবা দেশের সিংহভাগ মানুষ মনে করেন আওয়ামীলীগের অধিনে কখনো সুষ্টু ও নিরেপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই সঙ্কটটা আরো গভীরে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক, নির্ভরযোগ্য তথ্য ও মিডিয়া মারফত জানা গেছে, আওয়ামী সরকার প্রধান নিজে ব্যক্তিগত ভাবে পারিবারিক নানা সমস্যায় (ছেলে-মেয়ে) জর্জরিত আছেন। ঠিক সে সময় দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট চরমে। বলতে গেলে এই সময়টি হাসিনা সরকারের জন্য খুবই নাজুক। এর পরেও তারা ক্ষমতা সহজে ছেড়ে দিতে চাইছেনা। গত দুই মাসের বৈদেশিক রেমিটেন্স আয় তলানীতে। প্রায় সকল এলসি বন্ধ। আমদানী-রপ্তানীর অবস্থা সাংঘাতিক দশা।

আমেরিকার পক্ষ থেকে আওয়ামী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর স্যাংশন দেয়ার পরে গার্মেন্টস খাত থেকে বৈদেশিক রেমিটেন্স আহরণ প্রায় অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। এখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এতোটা ভঙ্গুর যে, নতুন মেয়াদে যে সরকার, দল বা জোট আসুক না কেন তাদের পক্ষে দেশ পরিচালনা কষ্টসাধ্য হবে। তবে কেউ কেউ মনে করেন, হাসিনা সরকারের দলীয় আমলা ও নেতাদের দীর্ঘদিনের দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা যখন তলানীতে, ঠিক সেই মুহুর্তে তারা সেইফ এক্সিট খুঁজছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় দেশের অর্থনীতির দূরবস্থার কথা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল নিয়মনীতি ভঙ্গ করে সরকারপন্থী নেতা/ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিচ্ছে। সরকারও গোপনে লোন নিচ্ছে যা ব্যাংক গুলো প্রকাশ করতে পারছেনা। টাকশাল থেকে স্বরণ কালের মতো টাকা ছাপানো হচ্ছে। দেশে নিত্যপণ্য উৎপাদন ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানী না বাড়ার কারণে চরম মূল্যস্ফিতি দেখা দিয়েছে। যা সামনের দিন গুলোতে আরো ভয়াবহ হতে পারে। বলতে গেলে দেশের অর্থনীতিতে এক চরম হ-য-ব-র-ল চলছে। এহেন অবস্থায় সরকারী দল নির্বাচনী পরিবেশ তৈরী না করে একটা কেওয়াজ/দাঙ্গা লাগাতে চাইছে। যে কারণে রাজনৈতিক সহজ সমাধান গুলো তারা গভীর সঙ্কটে নিপতীত করছে।

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্ধি। তার মরণ ব্যাধিসহ অনেকগুলো জটিল রোগে তিনি আক্রান্ত। বারবার তার দল, পরিবার ও চিকিৎসকরা ওনার উপযুক্ত ট্রিটমেন্টের জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা বল্লেও সরকার কর্ণপাত করেনি। বরং আইনের মার প্যাচ দেখিয়ে সরকারের তরফ থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। সরকারী বিভিন্ন সংস্থার গুম-খুন,বিরোধী দলের উপর নির্যাতন, গ্রেপ্তার, হয়নারী ও মিথ্যা মামলায় হাজার হাজার নেতা কর্মীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিরোধী দল গুলো মুখর। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি কিছুটা কুটনৈতিক সাপোর্ট পেয়ে রাজপথে সরব। আবার অন্য দিকে আওয়ামীলীগ ও শান্তি সমাবেশের নাম দিয়ে সমাবেশ আয়োজন করে তাদের জনবলকে উজ্জিবীত করার চেষ্টা করছে। দলীয় নেতা কর্মীদের চাঙ্গা রাখার অংশ হিসাবে দীর্ঘদিন দেশে অনুপস্থিত থাকা শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ থেকে গত ২৯ সেপ্টম্বর একটি ছবি পোস্ট দিয়েছিল। যে ছবিটিতে ভার্জিনিয়ার তার গল্ফ ক্লাবে মায়ের জন্ম দিন পালনের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে কয়েক জন আইটি এক্সপার্ট ছবির ফ্যাক্ট চেক করে বলেছেন যে, এই ছবিটি ফেইক।  আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগদের অনেকে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে দাবী করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘হাইটেক এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে সজিব ওয়াজেদ যোগদান করেছেন। আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল কাদেরও একই ভাবে খেলা হবে, তলে তলে আপোষ হয়ে গেছে, তাদের মুরুব্বিদের সাথে রফাদফা হয়ে গেছে বলে দলের জনসমাবেশ নিজ দলের লোকদের উজ্জিবিত করছেন। এছাড়া সরকারী খরচে “মুজিব” মুভি বানিয়ে দলীয় লোকদের দেখিয়ে দলে সক্রিয় করার চেষ্টা করছে।

তবে ঘটনা যাই ঘটুক না কেন রাজনৈতিক এই ডামাডোলে সরকার বিরোধী মূল দল গুলো এই সরকারের অধীনে আর কোন জাতীয় নির্বাচনে যাবেনা বলেই নিশ্চিত বলা চলে। এহেন অবস্থায় আওয়ামীলীগেরও সেইফ এক্সিট ছাড়া আর কোন পথ নাই। তারা ভালো ভাবেই জানেন দেশের মানুষ ভালো নেই। আওয়ামীলীগ সরকার কাঠামোগত কিছু উন্নয়নের বুলি আওড়িয়ে আর জামায়াত বিএনপিকে দোষারোপ করে পার পাবেনা। তৃতীয় কোন পক্ষ বা কারো চাপিয়ে দেয়া সরকার যদি দেশে পুণঃ প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে দেশের জনগণ বা কোন রাজনৈতিক দলের জন্য সুখকর হবেনা। দেশ এমনিতে মহা সঙ্কটের আবর্তে নিপতিত, আবার তৃতীয় পক্ষ ক্ষমতার হাল ধরলে দেশের জন্য হবে মরার উপর খাড়ার ঘা। যা একটি দেশের জন্য র্দীঘস্থায়ী কোন কল্যাণ বয়ে আনবেনা। তাই সরকার ও বিরোধীদল গুলো মিলে জনরায়ের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচিত করাই সবচেয়ে কল্যাণকর উপায়। এখন আওয়ামী সরকারী অবস্থা হচ্ছে ঠিক যেন, চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী।

এখানে থার্ড পার্টি এসে সাময়িক সময় দেশ চালাতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। সম্প্রতি সেনাবাহিনী প্রধানের একটা বক্তব্য খুবই সিগ্নেফিকেন্ট। তিনি ৪ সেপ্টম্বর একটি সেনা ক্যাম্প পরিদর্শন কালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশ ও জনগণের কেউ ক্ষতি করলে, তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে হলে অবশ্যই যাব। যদিও এটি আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য নয়। আমরা সবকিছুর শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। তবে কেউ মরণ কামড় দিলে আমরাও প্রতিহত করব"। (দৈনিক সমকাল)। এর মধ্যে স্বল্প সময়ে তিনি আমেরিকা ও ভারত সফর করেছেন। যেহেতু আওয়ামী সরকারের অপরাধের ফিরিস্ত লম্বা তাই সহজে তারা জাতির কাছে ক্ষমা পাচ্ছেনা ভালো করেই তারা জানে। তাই পূর্বেই বলেছিলাম, তারা দেশে একটা কেওয়াজ লাগাবে। তা নাইন এলিভেনের চেয়েও কঠিন হবে। গতবার লগি-বৈঠার কেওয়াজ ছিল এবার হয়ত ভিন্ন কায়দায় কেওয়াজ লাগবে। যা কোন ভাবেই কোন দেশ প্রেমিক দল বা ব্যক্তি প্রত্যাশা করতে পারেনা। যদি সত্যিই নাইন ইলিভেনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিঘটে তাহলে দেশ অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।