বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০২৩

ঢাবিতে নিকাব পরে ভাইভা দিতে আসায় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে হেনস্থা করার প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি প্রদান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে নিকাব পরে ভাইভা দিতে আসায় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদের হেনস্থা করার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, "সরকারের ইসলামবিরোধী অবস্থানের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে ইসলামবিদ্বেষী কিছু শিক্ষক ইসলামপ্রিয় শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করছে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে নিকাব পরে ভাইভা দিতে আসায় কয়েকজন ছাত্রীকে হেনস্থা করে নিকাব খুলতে বাধ্য করা হয়েছে। এক ছাত্রী নিকাব খুলতে অস্বীকার করায় তার ভাইভা নেওয়া হয়নি। এ অসভ্যতা শুধু বেআইনিই নয়; বরং সুস্পষ্ট সংবিধান ও ধর্ম অবমাননা।

এ অপকর্মের পর দায়িত্বহীন শিক্ষক অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন বলেছেন, ‘যারা পর্দা করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে বাসায় থেকে পড়াশোনা করা উচিত’। তার এই উদ্ধতপূর্ণ বক্তব্যে জাতি বিস্মিত ও চরমভাবে ক্ষুব্ধ।
তার এ বক্তব্য আইন ও সংবিধানবিরোধী। যথাযথভাবে ধর্ম পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার অধিকার বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও সংবিধানস্বীকৃত। তিনি কোনো শিক্ষক নয়, ইসলামবিদ্বেষী অবস্থান থেকে এ বক্তব্য দিয়েছেন।

আমরা এ নীতিহীন শিক্ষককে বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় আপনার পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। তা ছাড়া পর্দানশিন শিক্ষার্থীরা আপনার বা কারো দয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি; বরং হাজার হাজার মেধাবীর সাথে প্রতিযোগিতা করে তারা মেধা ও যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এখানে পড়াশোনা করছে।

সুতরাং পর্দানশিন শিক্ষার্থীদের ওপর নিজের বিকৃত ইচ্ছা প্রতিফল করার কোনো অধিকার এসব শিক্ষকদের নেই; বরং সংখ্যাঘরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে সংবিধানস্বীকৃত ধর্মীয় অধিকার যদি এসব ইসলামবিরোধী শিক্ষকদের সহ্য না হয়, তাহলে তাদেরই উচিত, শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে ছেড়ে দেওয়া। আমরা এই অসভ্য ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।"

নেতৃবৃন্দ বলেন, "এর আগেও ঢাবিতে পর্দানশিন শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করা হয়েছে। ছাত্রীরা রাজপথে তার প্রতিবাদ ও দাবি পেশ করেছে। তখন তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আশ্বস্ত হয়েছিল। কিন্তু বারবার ঢাবিতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাচ্ছে কিছু ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষক। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম নার্সিং ইন্সটিটিউট, ঢাকার বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, মতিঝিল মডেল কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়।

পর্দানশিন ছাত্রীদের হেনস্থা করা হয়। জনগণ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেও সরকারের তরফ থেকে রহস্যজনক নীরবতা দেখা গেছে। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই এই ইসলামবিদ্বেষ কি না? তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।"

নেতৃবৃন্দ বলেন, "পর্দা করা প্রতিটি মুসলমানের ওপর ফরজ। কিছু দায়িত্বহীন শিক্ষকরা নিকাব-হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ধর্মীয় বিধান পালনে বাধা দিচ্ছে, যা সরাসরি ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল। রাষ্ট্রীয় মদদে বিভিন্ন জায়গায় যৌথভাবে ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু ইসলামপ্রিয় ছাত্রজনতা তা মেনে নেবে না। এসব দায়িত্বহীন শিক্ষকের এমন অবিবেচক সিদ্ধান্তের কাছে ইসলাম প্রিয় শিক্ষার্থীরা মাথা নত করবে না।

সুতরাং অবিলম্বে হিজাব-নিকাব বিরোধিতাসহ সকল ইসলামবিরোধী অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। ঢাবিসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাববিরোধী শিক্ষকদেরকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় ছাত্রজনতা রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস, অনুভূতি এবং ঈমান-আকিদায় একের পর এক আঘাত করতে থাকলে সৃষ্ট পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে।"