বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০২৩

রাষ্ট্রীয় গুমের শিকার ৫ শিবির নেতার সন্ধানের দাবিতে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তারের পর গুম হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্র শিবির নেতা ওয়ালীউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাস, রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে হাফেজ জাকির হোসেন, যশোর বেনাপোল থেকে রেজওয়ান হুসাইন ও বান্দরবান সদর থেকে জয়নাল হোসেনের সন্ধানের দাবিতে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষ্যে এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান ও সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, "অবৈধ আওয়ামী সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গুমের মতো অমানবিক ও নিকৃষ্ট ঘটনার নিন্দা এবং ধিক্কার জানিয়ে আসছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও মানবাধিকার সংগঠন। গ্রেপ্তারের পর গুম হওয়া সন্তানের জন্য পিতামাতা, স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের প্রতিক্ষার প্রহর দীর্ঘ হলেও অমানবিক আচরণেই অটল রয়েছে প্রশাসন।

২০১২ সালে ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ ব্যক্তিগত কাজ শেষে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াগামী হানিফ এন্টারপ্রাইজের ৩৭৫০ নম্বর গাড়িতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে মধ্যরাতে গাড়ি থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের মেধাবী ছাত্র, ছাত্রশিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক অর্থ সম্পাদক মো. ওয়ালীউল্লাহ এবং ফিকাহ বিভাগের মেধাবী ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক আল মুকাদ্দাসকে আশুলিয়ার নবীনগর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে গ্রেফতার করে। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছর হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তারের স্বীকার করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অন্যদিকে ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল দিবাগত রাত ৪.০০ টায় সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শ্যামলী রিং রোডের ১৯/৬ টিক্কাপাড়া, বাসা থেকে হাফেজ জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও তার কোনো সন্ধান দেয়নি পুলিশ। একইভাবে ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট দুপুর ১২টায় বেনাপোল পোর্টসংলগ্ন দূর্গাপুর বাজার থেকে বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই নূর আলমের উপস্থিতিতে দোকান মালিক, কর্মচারীসহ অসংখ্য মানুষের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয় শিবির কর্মী রেজওয়ানকে। ৭ বছর পেরিয়ে গেছে; কিন্তু আজও তার কোনো সন্ধান দেয়নি পুলিশ। একই বছর ২৩ অক্টোবর বান্দরবান সদর ৩নং ওয়ার্ড থেকে শিবিরের সদস্য জয়নাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর ৭ বছর গুম করে রাখা হয়েছে।

তাদের গ্রেপ্তারের পর পরই পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করা হয় এবং আমরা বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হই, তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফজতেই রাখা হয়েছে। তাদের উদ্ধারের জন্য আইন, আদালত ও মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে তাদের স্বজনরা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রের গুমের ব্যাপারে ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি আব্দুল আউয়াল ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পুলিশের আইজিকে তলব করে দুই ছাত্র নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে তদন্তের অবস্থা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

অন্যদিকে ৫ শিবির নেতার সন্ধানের দাবিতে ক্যাম্পাসে ধর্মঘট, মানববন্ধন, মিছিলসহ বিভিন্ন আন্দোলন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সরব প্রতিবাদ এবং হাইকোর্টের নির্দেশনার পর বছর পেরিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুম করা মেধাবী ছাত্রদের গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার বা সন্ধান দেয়নি। উল্টো গুম হওয়া ছাত্রদের সন্ধান করতে গিয়ে তাদের মা-বাবা ও স্বজনদের পুলিশ কর্তৃক নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এখনো পর্যন্ত গুমের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কাউকে গুম করে দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনেও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃৃত।

একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নাগরিকরা গুমের মতো সমাজবিরোধী, মানবতাবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী এই অমানবিক দুষ্কর্মের শিকার হচ্ছে। স্বাধীন দেশে যদি নিরপরাধ ছাত্রদের এভাবে গুম হতে হয়, আর তাদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালালে হয়রানির শিকার হতে হয়, তাহলে জনগণ মনে করে এই স্বাধীনতা অর্থহীন। আর বাস্তবতাও হলো-ফ্যাসিবাদী সরকার অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ ও অর্থহীন করে দিয়েছে।"

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, "রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্মম কায়দায় গুম করার মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রাখা এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের বর্বর পন্থা অবলম্বন করেছিল নাৎসি বাহিনী। দুর্ভাগ্যবশত একবিংশ শতাব্দীতে জাতিকে এদেশে একই চিত্র দেখতে হচ্ছে।