মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

৫৪তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য || কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম

২৬ মার্চ ৫৪তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামের শুভেচ্ছা বক্তব্য

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসসালাতু আসসালাম ওয়ালা আশরাফিল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালিন, ওয়ালা আলিহি, ওয়াসহাবিহি আজমাঈন।
সম্মানিত দেশবাসী, প্রিয় ছাত্রসমাজ, ৫৪ তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে এ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার অন্তপ্রহরী মেধাবীদের প্রিয় ঠিকানা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি।
সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি এবং স্বরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ড পেয়েছি। পাশাপাশি আরো স্বরণ করছি এদেশের সকল মুক্তিযুদ্ধাদের এবং সহানুভুতি জানাচ্ছি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি।

সম্মানিত দেশবাসী,
দেশ আজ স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিক্রম করছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাই ছিল স্বাধীনতার উদ্দেশ্য। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে দেশের শাসকগোষ্ঠির চরম স্বেচ্ছাচারীতা, ক্ষমতা দখলের অসুস্থ প্রতিযোগীতা, আন্তর্জাতিক বিশেষ গোষ্ঠির গোলামী দেশের মানুষের অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। বিশেষ করে গত ১৫ বছরের বেশী সময়ে গণতন্ত্রের মোড়কে ফ্যাসিবাদের বিকাশ দেশের মানুষকে হতাশ করেছে। ২০১৪ এর ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ এর রাতের ভোট, সর্বশেষ ২০২৪ এর একপাক্ষিক নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে স্থায়িত্ব করা হয়েছে। উন্নয়নের ফাঁকা বুলি ছিটিয়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, সীমাহীন দূর্নীতি, গুম, খুন সহ নানাবিধ সমস্যাকে এক প্রকার বৈধতা প্রদান করা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ বিভিন্ন কালাকানুন দিয়ে মানুষের বাকস্বাধীনতার প্রতি হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। শাসক গোষ্ঠীর সমালোচনা করলেই নির্যাতনের খড়গ নেমে আসছে সাধারণ জনগণের উপর।

সম্মানিত দেশবাসী,
আজ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানও আজ তাদের ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইফতারের মতো পবিত্র কাজকে বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। রমাদান নিয়ে আয়োজিত সেমিনার, ইফতার কর্মসূচীতে রোজাদারদের উপর হামলা করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসগুলোতে আমাদের বোনেরা তাদের পর্দার অধিকার আদায়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে, হেনস্তা ও কটুক্তির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। ধর্মীয় কোন আলোচনাসভায় বসলেও তাকে গোপন বৈঠক হিসেবে আখ্যা দিয়ে নীরিহ মানুষজনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। ট্রান্সজেন্ডারের মতো মানবতাবিদ্বেষী ইসলামবিরোধী মতবাদকে সুকৌশলে পাঠ্যপুস্তকে ঢুকিয়ে দিয়ে এ দেশের মানুষের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে নষ্ট করা হয়েছে।

প্রিয় দেশবাসী,
মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার আজ তলানিতে যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের মতো সাধারণ দ্রব্যও সাধারণ মানুষ আর ক্রয় করতে পারছেনা। সেই সময়ে দায়িত্ববান ব্যক্তিরা রোজায় খেজুর না খেয়ে বরই খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে জাতির সাথে নিষ্ঠুর তামাশা করছে। ক্ষমতা ব্যবহার করে বিদেশে নামে বেনামে সম্পদ ক্রয় করা হচ্ছে, ব্যাংক লোপাট করা হচ্ছে, অর্থ পাচার করা হচ্ছে। নির্বাচনী হলফনামায় আমরা দেখেছি কি ভয়ংকর হারে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এমপিদের সম্পদ বেড়েছে! কারও কারও ক্ষেত্রে সম্পদ বৃদ্ধির হার কয়েক শত পার্সেন্ট। আর এর মাশুল হিসেবে জনগণের উপর চাপানো হচ্ছে করের বোঝা ও দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দাম। ফলে প্রকট হয়ে উঠছে অর্থনৈতিক বৈষম্য।

সম্মানিত দেশবাসী,
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মানও নিম্নমুখী। আধুনিকায়নের নাম দিয়ে শিক্ষাক্রমকে নাস্তিক্যবাদ, বিকৃত মতবাদ, অনৈতিকতা দিয়ে বিষিয়ে তোলা হয়েছে। কপি-পেস্ট নির্ভর পাঠ্যপুস্তক, বারবার শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তনসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা হতে আরও বিমুখ হচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে কিশোরগ্যাং, মাদক, অশ্লীলতা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আজ শিক্ষার পরিবেশ নেই। অবৈধ সম্পর্ক, বিষন্নতা, বেকারত্ব নানা কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে আত্মহত্যার ঘটনাও। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসকে মাদক, চাঁদাবাজি, যৌন হয়রানি আর সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য বানিয়ে নিয়েছে। আভ্যন্তরীণ কোন্দল, র‍্যাগিং, গেস্টরুম নির্যাতন ছাত্রলীগের নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে এগিয়ে যেতে পারেনা। আমরা চাই শিক্ষার পরিবেশ সুনিশ্চিত হোক। আগামী দেশগড়ার কারিগর তরুণ সমাজ যখন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, কিশোর অপরাধ যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তখন সরকার মদের মত ভয়াবহ নেশাদ্রব্যকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে। যা বাংলাদেশের ঐহিত্য, মূলবোধ, রুচিবোধ, ধমীর্য় ও সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে।

প্রিয় দেশবাসী
স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, এদেশের মানুষের সকল অধিকার নিশ্চিত করা। আজকে স্বাধীনতার এত বছর পার হলেও প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাধ আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। স্বাধীনতার মূল ল‘ক্ষ্য বিভেদ নয় ঐক্য। বিজয়ের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে যে, আজকে প্রতিটি মানুষের মাঝে বিভেদের দেয়াল তৈরী করে দেয়া হয়েছে। মানুষের রন্দ্রে রন্দ্রে বিভেদ তৈরী হচ্ছে। স্বাধীনতার এতোটা বছর পরও এসে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিপক্ষের শক্তি বলে বিভেদকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। অথচ স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির দাবীদাররাই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য দেশকে অন্য পরাশক্তির কাছে বিকিয়ে দিচ্ছে। ভিনদেশীদের মনোরঞ্জন করতে ইসলামপন্থীদের উপর নির্যাতনের স্ট্রীমরোলার চালানো হচ্ছে। বিদেশী প্রভুর পদানত থাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সীমান্তে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনির সদস্যদেরও জীবন দিতে হচ্ছে, মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ যুদ্ধে জীবন দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিকদেরও।

সম্মানিত দেশবাসী
আমরা জানি আজকে স্বাধীন দেশের মানুষ সকল দিক দিয়ে যে স্বাধীনতা ভোগ করার কথা ছিল তার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তার পরও ছাত্রশিবির ছাত্রসমাজকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অধিকার সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রমে ছাত্রশিবির ছাত্রসমাজের পাশে ছিল এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের বিশ্বাস, এদেশের তরুন ছাত্রসমাজ যদি এদেশের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে তাহলে আগামী দিনে একটি সুন্দর বাংলাদেশ তারা উপহার দিতে পারবে ইনশাআল্লাহ। ছাত্রশিবির তাদেরকে নিয়ে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চায়, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে চায়। দেশপ্রেমিক সৎ ও দক্ষ নাগরিক তৈরির ধারাবাহিক এই কাজে শত জুলুমের পরেও ছাত্রশিবির পিছপা হয়নি। এদেশের ছাত্রসমাজকে সৎ দক্ষ ও যোগ্যতার সমন্বয়ে গঠন করে ছাত্রশিবির সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে চায়। আমরা যদি কাঙ্খিত বাংলাদেশ উপহার দিতে চাই তাহলে মানুষের গুণগত পরিবর্তন না হলে, যোগ্যতার বিকাশ না হলে, ইসলামের ধাচে মানুষ তৈরী না হলে সৎ মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য এদেশের সরকার ও জনগণকে আহবান করব, বিভেদ নয় ঐক্যের উদ্যোগ নিন। মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় অধিকার সুনিশ্চিত করুন। আমরা যেন সুন্দর বাংলাদেশ তৈরী করতে পারি সে জন্য ছাত্রসমাজ, দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা ও সহযোগিতা কামনা করছি। দেশবাসীর দোয়া, ভালবাসা ও সহযোগিতা নিয়েই ছাত্রশিবির একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণের কাজে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জিন্দাবাদ

সংশ্লিষ্ট