১১ মার্চ শহীদ দিবস


সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪ - সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

১১ মার্চ সংগঠন ঘোষিত ‘শহীদ দিবস’। ১৯৮২ সালের এইদিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে ‘সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ’ এর হামলায় শাহাদাত বরণ করেন শহীদ সাব্বির, শহীদ আব্দুল হামিদ, শহীদ আইয়ুবশহীদ আব্দুল জব্বার। ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠার পরে প্রথম শিবিরের ভাইদের শাহাদাতের ঘটনার দিনকে কেন্দ্র করে ছাত্রশিবির প্রতি বছর ১১ মার্চকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

ঘটনার বিবরণ

১৯৮২ সালের ১১ মার্চ, বৃহস্পতিবার। সত্য আদর্শের ঝাণ্ডাবাহী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাগত সংবর্ধনার আয়োজন করতে যাচ্ছিল। নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ইসলামী আন্দোলনের সুমহান দাওয়াত তুলে ধরে ইসলামী আন্দোলনকে এ ক্যাম্পাসে তথা রাজশাহীতে আরো বেগবান করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। আগের দিন বুধবার থেকেই শুরু হয়েছিল প্রচার ও অন্যান্য আয়োজন। কিন্তু সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের ধ্বজাধারী বলে পরিচিত জাসদ-মৈত্রী, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা শিবিরের এ নবীন-বরণ বানচাল করার এক হীন ষড়যন্ত্র আঁটতে থাকে। প্রচারকার্যে আগের দিন ছাত্র ইউনিয়নের দুষ্কৃতকারী হেলালের নেতৃত্বে বাধা প্রদান করা হয়। তারা নিরীহ শিবিরকর্মীদের হাত থেকে দস্যুর মতো প্রচারপত্র কেড়ে নেয় ও প্রচারকার্য চালাতে নিষেধ করে। প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের স্বার্থেই শিবিরকর্মীরা ঘটনা সম্পূর্ণ এড়িয়ে অসীম ধৈর্যের পরিচয় দেন। তাঁরা ধৈর্য আর সহনশীলতার পরিচয় দিলেও বর্বরতায় নেশাগ্রস্ত খুনিরা থেমে থাকেনি। সন্ত্রাসীরা শিবিরের কর্মসূচিকে শুধু বানচালই নয় বরং শিবিরের রক্তে মতিহারকে রঞ্জিত করার নীলনকশা এঁটে বসল। নবাগত সংবর্ধনার দিন সকাল থেকেই প্রোগ্রামের প্রস্তুতি চলছিল। শত শত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও শিবিরকর্মী চারদিক থেকে ছুটে আসছে প্রোগ্রামস্থলে। ছাত্রশিবির আজ তাদের আদর্শের কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র, জনতা, শিক্ষক ও কর্মচারীর কর্ণকুহরে পৌঁছাবে।

এমনই একটি সুযোগের অপেক্ষা করছিল সন্ত্রাসীরা। একদিকে ছাত্র-জনতার ঢল নামছে প্রোগ্রামস্থলে আর ঠিক তার বিপরীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান করছে সশস্ত্র অবস্থায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার দিন হিংস্র এ হায়েনাদের প্রস্তুতি ছিল রীতিমতো যুদ্ধাবস্থার। হাতে তাদের রামদা, বল্লম, লাঠি ও হকিস্টিক। তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। শিবিরের প্রোগ্রাম তারা হতে দেবে না। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (ফ. চু.), ছাত্রলীগ (যু. গ.), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ অন্যান্য সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত সংগ্রাম পরিষদ ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে গোলযোগ সৃষ্টি করে সংঘর্ষ বাধানোর চেষ্টা করতে লাগল। তাদের শত উসকানি সত্ত্বেও শিবিরকর্মীরা সেদিন অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতি উপলব্ধি করে ইসলামপ্রিয় সাথীরা প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন সকল প্রকার হৈ-হাঙ্গামা পরিহার করে প্রোগ্রাম সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত করতে। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। সন্ত্রাসীরা দৃঢ়পতিজ্ঞ, আজ মতিহার চত্বরকে সত্যের আলোকবাহী নিরীহ শিবিরকর্মীদের রক্তে রঞ্জিত করবে। এক ফুঁৎকারেই নিভিয়ে দেবে সত্যের আলোকবাহী মশাল।

কী ঘটেছিল সেদিন
সেদিন সকালেই মতিহার চত্বরে শত শত নবাগত শিক্ষার্থী হাজির হয়েছিল। শুরু হচ্ছিল নবাগতদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ইতোমধ্যেই বাইরে থেকে কয়েকটি বাস বোঝাই করে পাঁচ-ছয়শত বহিরাগত গুণ্ডা এসে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল। যখন সন্ত্রাসীরা বুঝতে পারলো তাদের হৈ-হাঙ্গামার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে চলেছে, তখন তারা হিংস্র হায়েনার মতো কালক্ষেপণ না করে যৌথভাবে প্রথমে কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে উপস্থিত নিরীহ শিবিরকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং পরবর্তীতে আবার প্রোগ্রামস্থলে। সন্ত্রাসীরা শিবিরকর্মীদেরকে চারপাশ থেকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরল। খুনের উন্মত্ততায় রামদা, বল্লম, লোহার রড, ছোরা হাতে সন্ত্রাসীরা দৌড়ে চলল প্রোগ্রামস্থলে। তারপর ঠাণ্ডা মাথায় চারদিক থেকে ঘেরাও করে নিরস্ত্র শিবিরকর্মীদের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ চালাল। প্রোগ্রাম পণ্ড হলো। গোটা ক্যাম্পাসে শুরু হলো মাতম। মতিহারের সবুজ চত্বর শিবিরকর্মীদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠল। গগনবিদারী চিৎকার করে অনেকেই প্রাণ বাঁচানোর জন্য ছুটে চলল দিগ্বিদি।