০৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস


বুধবার, ০৬ মার্চ ২০২৪ - বুধবার, ০৬ মার্চ ২০২৪

জ ৬মার্চ। ২০১৭ সাল থেকে আজকের এই দিনটি জাতীয় পাট দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

পাট ও পাট শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা এবং উন্নতির দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাওয়া একটি জাতীয় গুরুদায়িত্বও বটে। পাট শিল্প এক সময় ভারতের হুগলী এলাকায় গড়ে ওঠে। তারপর পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫১ সালের পরে এ শিল্প হু হু গড়ে ওঠে। এই শিল্পের সাথে বর্তমানে দেশের প্রায় ৪ কোটি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। পাট থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জন হওয়ার কারনে পাটকে এক সময় সোনালী আঁশ বলা হতো। এক সময় বার্ষিক দেশের মোট উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৮০% আয় হতো আমাদের স্বর্ণ তন্তু পাট থেকে। বিশ্বের মোট যোগান এর ৭০% পাট বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হতো। এই শিল্পকে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করলে হয়তো আজ বিশ্বের ১নং শিল্পে রূপান্তরিত হতো।

এদেশে পাটশিল্পের ইতিহাস খুঁজলে জানা যায়, ১৯৫০ সাল পর্যন্ত এদেশে কোন পাটকল গড়ে ওঠেনি। ১৯৫১ সালে ১০০০ তাঁত নিয়ে নারায়ণগঞ্জের আদমজী নগরে প্রথম পাটকল প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল তৎকালীন বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল। প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক এই পাটকলের শ্রমিক ছিলেন। পরবর্তিতে খুলনা, যশোর, ফরিদপুর (কানাইপুর), নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ (ভৈরব), রংপুর, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, ঢাকা প্রভৃতি জেলায় পাটকল গড়ে ওঠে।

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে নানা অনিয়মের ফলে ক্রমাগত লোকসানের কারণে অনেকগুলো পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার, পরবর্তীতে ক্রমাগত তা কমতেই থাকে। সর্বশেষ ২০২০ সালে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসরে পাঠানো হয় কর্মীদের। মৃত্যুহয় সম্ভাবনাময় একটি খাতের। পরবর্তীতে পাটকলগুলো বেসরকারিভাবে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার, আগামী ১৪ই মার্চ ২০২৪ তারিখে ৬টি পাটকল পুনরায় খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান সিনথেটিক ব্যাগসহ পরিবেশ বিধ্বংসী অন্যান্য উপাদান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ঝুঁকে পড়ছে প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের দিকে। এক্ষেত্রে পাটই হয়ে ওঠেছে বিকল্প অবলম্বন। উদাহরস্বরূপ বলা যেতে পারে, বিখ্যাত চেইন শপ টেসকোর প্রতি মাসে ১ মিলিয়ন প্রাকৃতিক আঁশের তৈরি ব্যাগের প্রয়োজন হয়। এই শিল্পকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ক্রমবর্ধমান এই বিশাল বাজার লুফে নিয়েছে আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত।

২০১৭ সালে পাট ও পাটজাত বর্জ্যের সেলুলোজ থেকে পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, যা দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই মাটিতে মিশে যাবে, ফলে পরিবেশের ক্ষতি হবে না। বর্তমানে প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন পাট ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের এ চাহিদা মেটানো, দেশের হারানো সম্ভাবনাময় শিল্পকে পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও প্রসার, গবেষণা ও পাট চাষে উদ্বুদ্ধকরণে সাম্প্রতিক পাশ হওয়া পাট আইন ২০১৭, পাট চাষিদের সহায়তা করার জন্য তহবিল গঠন, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে পাটের বীজ উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদান, পাটের নায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ এবং পরিবেশ রক্ষায় সার, চিনি, ধান, চালসহ ১৭টি পণ্য বিক্রয়, বিতরণ ও সরবরাহে বাধ্যতামূলক পাটজাত মোড়ক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ ইত্যাদি গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।