শহীদ সাইফুল ইসলাম

১২ মে ১৯৭০ - ১৩ মে ১৯৯৩ | ৫৬

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

উত্তরবঙ্গে ঐতিহ্যবাহী রংপুর জেলার সন্তান ছিলেন শহীদ সাইফুল ইসলাম। ১৯৭০ সালে ১২ মে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মাতার আদরে লালিত সন্তান সাইফুল ইসলাম পবিত্র কুরআন হেফজ করার পর রংপুরে মেকুড়া মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৮৮ সালে দাখিল ও ১৯৯০ সালে আলিম পাস করেন। ১৯৯২ সালে রংপুর সরকারি কলেজে থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৯৩ সালের রংপুর মূল টোল আলিয়া মাদরাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষার্থী ছিলেন। তৌহিদী জনতার প্রাণের স্পন্দন আশার প্রতীক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ‘৯৩ সালের ১৩ মে যার শাহাদাতের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে রংপুর শহরের এক বিশাল পরিবর্তন। যা ছাত্রশিবিরকে এগিয়ে দেয় গতিশীল স্রোতের ন্যায়। তার নাম শহীদ সাইফুল ইসলাম। কিন্তু পিতা-মাতার আশা পূরণ করতে দিল না পাষন্ডরা।

ব্যতিক্রম স্বভাবের অধিকারী শহীদ সাইফুল
রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার দেউতি বাজারের একেবারে পাশেই ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর এক শুভক্ষণে পিতা সাইয়্যেদ আহমেদ নূরী ও মাতা তৈয়বা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ সাইফুল ইসলাম। ১৪ ভাই-বোনের মধ্যে সাইফুল ছিলেন ব্যতিক্রম স্বভাবের। বাল্যকাল থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত শাসন ছাড়া নির্বিঘ্নে লেখাপড়া করতো সে। পিতা মাতার আশার প্রতীক সাইফুলকে হাফেজ বানানোর পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন হল। কোরআনের হেফজ শেষ করেই ভর্তি হয় ঐতিহ্যবাহী মেকুড়া দ্বিমুখী সিনিয়র মাদ্রাসায়। ১৯৮৮ সালে দাখিল, ৯০ সালে আলিম পাস করেই রংপুর সরকারি কলেজে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হলেন বি.এ ক্লাসে। বাল্যজীবন, মাদ্রাসা ও কলেজ জীবনে তার চারিত্রিক শক্তি ছিল অতুলনীয়। ভাবাবেগ নয় সৎ চরিত্র আর যোগ্যতা অর্জনই ছিল তার প্রত্যাশা।

সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনা
১২ মে জাহানারা ইমামের স্বপ্নের লালিত সংগঠন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির হরতাল চলাকালীন জাহাজ কোম্পানী মোড়ে ছাত্রলীগের শামীম ডলার, আকতারের অতর্কিত হালায় তিনি আহত হন। নরপিশাচরা কেড়ে নেয় সাইফুলের মুখের কথাকে কিন্তু কেড়ে নিতে পারেনি শহীদ সাইফুলের ঈমান, চেতনা ও দ্বীনি প্রেরণাকে। কী দোষ ছিল শহীদ সাইফুলের? তার দোষ একটাই, তিনি সর্ব শক্তিমান আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিলেন এবং দুনিয়াতে তার খেলাফত প্রতিষ্ঠার দৃঢ় শপথ নেন। শহীদ সাইফুলের যে প্রতিজ্ঞাকে সহ্য করতে পারেনি মানুষরূপী হায়েনার দল। ১৩ মে ভোর ৫টায় রংপুর কলেজে হাসপাতালে শাহাদাতবরণ করেন শহীদ সাইফুল ইসলাম।

পূরণ হলো না মায়ের স্বপ্ন
শাহাদাতের ২০-২৫ দিন পূর্বে শহীদ সাইফুল ইসলার পিতা সৈয়দ আহাম্মদ নূর ইন্তেকাল করেন। মায়ের আশা ছিল ছেলে পড়াশোনা শেষ করে পরিবারে হাল ধরবেন। কিন্তু তিনি তার মাকে আরো সম্মানিত করেছেন শাহাদাত বরণ করে শহীদ মা হিসেবে। শাহাদাতের ৭ দিন পূর্বে তিনি মায়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন। মাকে বলেন, মা আমার জন্য দোয়া করো যেন তোমার সাইফুল এ জাহেলী সমাজকে অমানিশার অন্ধকার থেকে মুক্তি দিয়ে ইসলামের আলোয় আলোকিত করতে পারে। ৭ দিন পর নিজেকে আলোকিত করে জান্নাতের অতিথি হয়ে যান।

শহীদের বড় ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া
শহীদের বড় ভাইয়ের বক্তব্য শহীদ সাইফুলের মৃত্যুতে সাময়িক শোকাভিভূত হলেও শহীদ সাইফুলের বড় ভাই হিসেবে গর্ববোধ করছি।সে কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আল্লাহ রাস্তায় রক্ত দিয়েছে। আল্লাহ যেন তাকে শহীদ হিসেব কবুল করেন। এক ভাইকে হারিয়ে দেশ বিদেশে লক্ষ কোটি সাইফুলকে পেয়েছি।

একনজরে শহীদ সাইফুল ইসলাম
নাম: সাইফুল ইসলাম
পিতার নাম : সৈয়দ আহম্মদ নূরী
সাংগঠনিক মান : সাথী প্রার্থী
সর্বশেষ পড়াশোনা : বিএ (পাস) ও ফাজিল পরীক্ষার্থী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : রংপুর সরকারি কলেজ
শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৩.০৫.১৯৯৩
যাদের হাতে শহীদ : ছাত্রলীগ
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : ডাক দেউতি বাজার, থানা পীরগাছা, জেলা রংপুর।
আহত হওয়ার স্থান: জাহাজ কোম্পানী মোড়।
আঘাতের ধরন : লাঠি।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ সাইফুল ইসলাম

পিতা

সৈয়দ আহম্মদ নূরী

মাতা

তৈয়বা বেগম

জন্ম তারিখ

মে ১২, ১৯৭০

ভাই বোন

১৪ ভাই বোন

স্থায়ী ঠিকানা

দেউতি বাজার, পীরগাছা, রংপুর

সাংগঠনিক মান

সাথী প্রার্থী

সর্বশেষ পড়ালেখা

বি এ, রংপুর সরকারি কলেজ

শাহাদাতের স্থান

জাহাজ কোম্পানী মোড়