শহীদ শাহাবুদ্দীন

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১১ জুন ১৯৮৫ | ১০

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

১৯৮৫ সালে ভারতের কলকাতা হাইকোর্টে কুরআন বাজেয়াপ্ত করার জন্য মামলা দায়ের হয়। এতে সারা বিশ্ব প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। ভারতের মুসলিমবিদ্বেষী এই ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ১১ মে দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এমনি এক মিছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়। সেই মিছিলে কুরআনবিদ্বেষী খুনি ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা নির্দেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। গুলিতে আটজন শাহদাতবরণ করেন। এর মধ্যে পাঁচজনই ছিলো ছাত্র। সেই ভাগ্যবানদের মিছিলের এক সাহসী সৈনিক শহীদ শাহাবুদ্দীন। কুরআনের ভালোবাসায় জীবন বিলানো দুঃসাহসী এক কিশোরের নাম শহীদ শাহাবুদ্দীন। 

জন্মপরিচয়
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রাজারামপুর গ্রামে ১৯৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ শাহাবুদ্দীন। তাঁর মা মোসাম্মৎ সফুরা বেগম ও বাবা নূর মোহাম্মদ মণ্ডল। ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ ।

শিক্ষাজীবন
নিজ গ্রামের রাজারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে সবেমাত্র হরিপুর ১ নং উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন শাহীদ শাহাবুদ্দীন। শাহাদাতের সময় তিনি ষষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলেন।

সাংগঠনিক জীবন
হরিপুর উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই ছাত্রশিবিরের দাওয়াত পান শহীদ শাহাবুদ্দীন। আল-কুরআনের সমাজ কায়েম ও নানা ধরনের শোষণ থেকে মুক্ত সমাজ গড়ার, খোদার পথে নিজের সব বিলিয়ে দিয়ে কুরআানের রঙে নিজের জীবন রাঙাবার দাওয়াত তিনি আনন্দের সাথে কবুল করেছিলেন। সংগঠনের ‘সমর্থক’ ছিলেন তিনি।

যেভাবে শহীদ হলেন
পুলিশের গুলি তাঁর পায়ে বিদ্ধ হয়। অনেকখানি গোশত ছিঁড়ে বের হয়ে যায় বুলেটটা। তারপরও পিছু হটেননি শহীদ। ডানাভাঙা আহত পাখির মতো আহত পা নিয়েই পুলিশের হামলার প্রতিবাদে শ্লোগানমুখর থাকেন। কিছুক্ষণ পর আরেকটি গুলি এসে লাগে তাঁর পেটে। ঈদগাহ ময়দানের সবুজ ঘাসগুলো লাল হয়ে যায় শাহাবুদ্দীনের রক্তে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি। লুটিয়ে পড়েন জমিনে। রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। অপারেশন করে পেট থেকে গুলি বের করা হয়। ২০ দিন পর কিছুটা সুস্থ হলে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। চিকিৎসা চলছিল। আরো ১০ দিন পর মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ পেটের আহত স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে ব্যথা বাড়তে থাকে। অবস্থা খারাপ দেখে রাতেই রাজশাহী মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু রাত একটার সময় শাহাবুদ্দীন শাহাদাত বরণ করেন। কুরআনপ্রেমিক কিশোর তাঁর বন্ধুর দরবারে পৌঁছে যান।

জানাজা ও দাফন
শহীদের লাশ মেডিকেল থেকে বাড়িতে আসে সন্ধ্যার পর। শাহাদাতের সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্বস্তরের জনতা কুরআনের জন্যই জীবন দেয়া এই শহীদের জান্নাতি চেহারা এক নজর দেখতে ভিড় জমায়। বাড়ির পাশে স্থানীয় গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। গভীর রাতে তাঁর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে উপস্থিতি ছিলেন আশাতীত মানুষ। যেন এক জনসমুদ্র। জানাজায় ইমামতি করেন অত্র অঞ্চলের প্রবীন আলেম নবাবগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসার প্রাক্তন মুদাররিস মাওলানা মোহাম্মদ মূসা। শহীদের বাড়িসংলগ্ন জুমা মসজিদের সেই ইমামও ছিলেন, যাঁর জ্বালাময়ী খুতবা শহীদ শাহাবুদ্দীনের মনে কুরআনের জন্য জীবন দেয়ার প্রেরণা সৃষ্টি করেছিল।

আল্লাহতায়ালা তাঁর খুব প্রিয় বান্দাদেরই শহীদ হিসেবে কবুল করে নেন। শহীদ শাহাবুুদ্দীনও সেই প্রিয় বেলাল, খাব্বাব, খোবায়েবদের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েছিলেন। আল কুরআন চিরদিন অবিকৃত থেকে আমাদের সত্যের পথে হাতছানি দিয়ে ডেকে যাবে। আর যাঁরা কুরআনের মর্যাদা রক্ষায় জীবন দিলেন তাঁরা প্রেরণার উৎস হয়ে কুরআনের প্রেমিক পাঠকদের মনে সত্যের দিশা দিয়ে যাবেন বারে বারে। শহীদ শাহাবুদ্দীনও তেমনি অমর হয়ে থাকবেন কুরআনপ্রেমিক জনতার অন্তরের অলিন্দে।

শাহাদতের পর মায়ের প্রতিক্রিয়া
শাহাদাতের সংবাদ মায়ের নিকট পৌঁছালে তিনি বলেন, ‘তোমার দেয়া প্রাণ তুমি নিয়ে গেছ খোদা, আমার কোনো আফসোস নেই। তোমার কাছে আমার এটুকু ফরিয়াদ সে যেন জান্নাতে হাসান-হুসাইনের সাথে থাকে।’
মায়ের বক্তব্য
শহীদের মা মোসাম্মাৎ সফুরা বেগম বলেন, ‘সেদিন ছোট বলে আমি তাকে মিছিলে যোগ না দেয়ার জন্য বললাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি সম্মতি দিলাম।’

শিক্ষকের মন্তব্য
শহীদ শাহাবুদ্দীনের শিক্ষক মো: ইসরাঈল হোসেন বলেন, ‘সেদিন আমি সমাবেশে যোগ দিতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম এবং বেশ কয়েকজন ছাত্র অংশগ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে সৌভাগ্যবান ছিল শহীদ শাহাবুদ্দীন। সে অনেক সুবোধ ছাত্র ছিল।’

কুরআনপ্রেমী এই শহীদরা নিজেদের জীবন দিয়ে প্রমাণ করলেন সত্যের জয় সুনিশ্চিত। আজ কুরআন আমাদের মাঝে অবিকৃত অবস্থায় আছে। তেমনি এই শহীদরাও থাকবেন আমাদের হৃদয়ের মাঝে। ভবিষ্যৎ বংশধররা তা থেকে কল্যাণকর শিক্ষা নেবে।

একনজরে শহীদ শাহাবুদ্দীন
নাম : শহীদ মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন
মায়ের নাম : মোসাম্মাৎ সফুরা বেগম
বাবার নাম : নুর মোহাম্মদ মণ্ডল
স্থায়ী ঠিকানা : আরামবাগ, রাজারামপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
ভাই-বোন : ৫ ভাই, ২ বোন
ভাইদের-বোনদের মাঝে অবস্থান : দ্বিতীয়
সাংগঠনিক মান : কর্মী
সর্বশেষ পড়াশোনা : ষষ্ঠ শ্রেণী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : ১ নং হরিপুর উচ্চবিদ্যালয়
আহত হওয়ার স্থান : চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঈদগাহের সামনে রাস্তার ওপর
শহীদ হওয়ার তারিখ : ১১ জুন, ১৯৮৫, ঘটনার ১ মাস পর
আঘাতের ধরন ও স্থান : গুলি; পায়ে, পেটে ও হাতে
শহীদ হওয়ার তারিখ : ১১ মে, ১৯৮৫

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ শাহাবুদ্দীন

পিতা

নুর মোহাম্মদ মন্ডল

মাতা

মোসাম্মাৎ সফুরা বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৫ ভাই, ২ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

রাজারামপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

৬ষ্ঠ শ্রেণী, হরিপুর ১নং উচ্চ বিদ্যালয়ে

শাহাদাতের স্থান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ


শহীদ শাহাবুদ্দীন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ শাহাবুদ্দীন


শহীদ শাহাবুদ্দীন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ শাহাবুদ্দীন