শহীদ আব্দুল্লাহ আল-ফয়সাল

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ২৮ অক্টোবর ২০০৬ | ১২৯

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

চারদলীয় জোট সরকার পাঁচ বছর মেয়াদের শাসনকাল শেষে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সালে সংবিধান অনুযায়ীই কেয়ারটেকার সরকার ক্ষমতায় আসার কথা। যথারীতি ২৮ অক্টোবর রাত ৮টায় বঙ্গভবনে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারপতি কে এম হাসানের শপথ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্ষমতা হস্তান্ত হওয়ার অপেক্ষায় সমগ্র দেশবাসী। শিডিউল অনুযায়ী বঙ্গভবনে এ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্থতি সম্পন্ন।

কিন্তু সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের এই পথ অবশ্যই সহজ ছিল না। আমাদেরকে স্বাধীনতা-উত্তরকাল থেকেই একদলীয় ব্যবস্থা, বাকশালী স্বৈরতন্ত্র ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হয়, যার রূপকার ও মূল প্রবক্তা ছিলেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের তৎকালীন আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম। তিন জোট ও জামায়াতের অবিরাম আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ পরবর্তীতে গণতন্ত্রের নবপথচলা শুরু হলে সেই পথও শত্রুমুক্ত ছিল না; ছিল স্বাধীনতা পরবর্তীকালের একদলীয় স্বৈরতন্ত্রের দোসরদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের স্থানীয় ও অস্থানীয় নীলনকশা ও অপতৎপরতার কাছে জিম্মি। এই গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইত্যাদি নেতিবাচক পরিচিতিতে দেশে-বিদেশে প্রচার করে এদের গণতন্ত্রায়নের মূলে কুঠারাঘাতের জন্য সদা সচেষ্ট থেকেছে এবং পরিশেষে ২০০৭ সালের নির্বাচন বানচালের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রহীনতা কায়েমের টার্গেটে ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্য, রক্তপাত ও হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করেছে। গণবিরোধী রক্তপিপাসু অপশক্তির সেদিনের লোমহর্ষক, নারকীয় তাণ্ডবতার ঘটনাবলি অবলোকন করে গণতন্ত্র ও শান্তিবিরোধী অপশক্তির হীন চক্রান্তের বিষয়টি সমগ্র জাতির সামনে প্রতিনিয়ত স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।

সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনা
সেদিন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে লগি-বৈঠাধারী ১৪ দলের সন্ত্রাসী ঘাতকদের হাতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৬ জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করতে হয়। এসব সন্ত্রাসীর হাতে আহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষ। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে এ ঘটনার আগে ও পরে শাহাদাতবরণ করেন আরো ৮ জন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। ঘাতকরা যে কত নিষ্ঠুর ও পাশবিক চরিত্রের, সেটা প্রমাণ হয় যখন টেলিভিশনের পর্দায় সারা দিনব্যাপী আমাদের ভাইদের শাহাদাত ও রক্তদানের দৃশ্যাবলি এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র আক্রমণ ও মৃতদেহের ওপর নৃত্যরত নৃশংস-উন্মত্ততা দেখে। ঘৃণায় বিষিয়ে এলো পুরো শরীর। মানুষ কত নিচে নামতে পারে! মানুষের নাম ও পরিচয় ধারণ করে কত নির্মম হতে পারে!! এই ভাবনার মধ্যে আওয়ামী নির্মমতায় শহীদের তালিকায় উঠে এলো মুজাহিদ, জসিম-১, মাসুম, শিপন, শাহজাহান আলী, আরাফাত, জসিম-২, রফিক, জাবেদ আলী, হাবীব, সাবের, আব্বাস ও রুহুল আমীন ভাইয়ের নাম।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ও আওয়ামী সন্ত্রাস প্রতিরোধ করার সংগ্রামে এতজন নিরপরাধ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীর শাহাদাতের ঘটনায় হৃদয়মন ভীষণভাবে ভারাক্রান্ত না হয়ে পারে না। আর সেই সময়ই শান্তি ও ধৈর্যের পরশ নিয়ে মনে উদিত হল মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ঘোষণা : “ঐ ঈমানদারদের সাথে ওদের দুশমনীয় এ ছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে, তারা এমন আল্লার প্রতি ঈমান এনেছিল, যিনি মহা শক্তিমান ও যিনি কারো প্রশংসার ধার ধারেন না।” (সূরা বুরুজ-৮)

রক্তঝরা ঐতিহাসিক ২৮ অক্টোবর আওয়ামী সন্ত্রাসের ভয়াবহ নৃশংসতার কথা মনে হলেই সমগ্র বাংলাদেশ ভয়ে বিহ্বল হয়ে যায়। মনুষ্যত্ব, মানবতা ও বিবেক সেই অপশক্তির প্রতি নিক্ষিপ্ত তীব্র ঘৃণা ও লানতের কথা পুনর্ব্যক্ত করে। আওয়ামী সন্ত্রাস ও রক্তপাতের ধারাবাহিকতায় সমগ্র জাতি ও বিশ্বজগৎ জানতে পেরেছে যে, ২০০৭ সালের নির্বাচন বানচালে মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রহীনতা কায়েমের টার্গেটে ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে সংঘটিত নৈরাজ্য, রক্তপাত ও হত্যাযজ্ঞ ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। কিন্তু কোনো অসাধু পরিকল্পাই কখনও সফল হতে পারে না। আল্লাহর রহমতে ও দেশপ্রেমিক জনতার প্রতিরোধে ২৮ অক্টোবরের হত্যাকারী সন্ত্রসীরা কোন দিনই বাংলাদেশে তাদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত পূর্ব পরিকল্পনার ঘৃণ্য নীল নকশা সফল করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।

ফয়সাল আমাদের জন্য প্রেরণা
সাইয়্যেদা হাসনা বানু

সেই দিন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কতগুলো তাজা প্রাণকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিলো। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে করল আহত, আবার তারাই এখন মতায়। ঘৃণায় মনটা খুব খারাপ লাগে। আবার চিন্তা করি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হয়তো বা ঈমানদারদের ঈমানকে আরও মজবুত করার জন্যই জালিমদের বিজয় দিয়েছেন। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে ঈমানের মজবুতি দান করুন। সেই ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী হায়েনাদের জঘন্য হত্যাকাণ্ডের শিকার আমার প্রাণপ্রিয় আব্দুল্লাহ আল ফয়সল। নামটি রেখেছিলাম শহীদ সৌদি বাদশাহ ফয়সলের নামানুসারে। ভাবতেই পারিনি আমার ফয়সলের নামের সাথেও শহীদ শব্দটি যুক্ত হয়ে যাবে। শহীদ আবদুল মালেক থেকে শুরু করে যতগুলো সোনার ছেলে শহীদ হয়েছে ওদের কাহিনীগুলো পড়ে পড়ে চোখের পানি ফেলতাম এবং ছেলেমেয়েদের নিয়ে ওদের জন্য দোয়া করতাম, ওদের মহত্ত্বের প্রশংসা করতাম। ওরা আল্লাহর জমিনে দ্বীন কায়েমের জন্য বাতিলকে প্রতিহত করে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়ে গেছেন, ওরা আল্লাহর নিকট বিরাট মর্যাদার অধিকারী। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরাই সর্বোত্তম জাতি, তোমাদেরকে স"ষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৯)

এই অসৎ কাজকে বাধা দানের কঠিন দায়িত্বটা যারা পালন করবে তারাই বিপদ-মুসিবতে পড়বে। এমনি একটি দলের নিবেদিতপ্রাণকর্মী ছিল আব্দুল্লাহ আল ফয়সল। ফয়সল যেন একটি সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপ, সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারার মায়াবী মুখ, সুন্দর, লম্বা ও অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। চেহারা যেমন সুন্দর তার স্বভাব চরিত্র, লেনদেন, কথাবার্তা সবকিছুই ছিল সুন্দর। ছোটবেলা থেকেই মানুষের সাথে খুব বেশি মিশতে পারত। বড়-ছোট সবার সাথে তার সম্পর্ক ভালো ছিল। মুরব্বিদের সাথে ফয়সল খুব ড়নবফরবহঃ ছিল। ছোটদের সাথে খুবই কোমল ব্যবহার করত। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তার খুবই ভক্ত ছিল।

২০০৩ সালের ১৯ জুন ফয়সলের বাবা ব্রেনস্ট্রোকে মারা যান। তার আব্বা একজন পরহেজগার লোক ছিলেন। তিনি সৎভাবে জীবন-যাপন করার জন্য অনেক কষ্ট করতেন। ইসলামের প্রতি তার প্রবল অনুরাগ ছিল। তিনি নিজে জামায়াতে নামাজ, কুরআন অধ্যয়ন ও তাজাজ্জুদ পড়তেন। চাকরির কারণে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং হয়ে যেখানে যেতেন সেখানেই সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে পড়তেন। সন্তানদেরকে ইসলামী শিায় শিতি করাই তার উদ্দেশ্য ছিল। ফয়সলেরও তার আব্বার মতো ইসলামের প্রতি বেশি আকর্ষণ ছিল।
মানুষের বিপদ দেখলে ফয়সল ঝাঁপিয়ে পড়ত। একবার আমাদের এলাকার একটা ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছিল। ফয়সল ও আমাদের বাড়ির অন্য ছেলেরা সেখানে আগুন নেভানোর জন্য গিয়েছে। কিন্তু ফয়সল সবার আগে আগুনের একেবারে কাছে গিয়ে পানি ঢালা শুরু করেছে। জানের মায়াটা ফয়সল কম করত। একবার আমাদের এলাকায় কিছু সন্ত্রাসী এসে থানা আমীরের ওপর হামলা করেছিল। ফয়সল খেতে বসবে দুপুরে খাবার, না খেয়েই সে সেখানে চলে যায়। ফুয়াদ, ফাহাদ ও আমি খাওয়া-দাওয়া করে সেখানে যাই। মানবদরদি ফয়সল মানুষের দুঃখ দেখলে খুব কষ্ট পেত।

২০০৬ সালের প্রথম দিকে আমাদের কাজের বুয়ার স্বামী মারা যায়। ফয়সল বুয়াকে নিজেও সাহায্য করেছে এবং ঈদের সময় ওর জন্য ঈদের সেমাই-চিনি সংগঠন থেকে নিয়ে ওদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। ওর কথা মনে উঠলেই প্রাণটা যেন ফেটে যায়। ও ছিল পুরো পরিবারের সৌন্দর্যের প্রতীক। দেখাশোনায়, আচার-আচরণ সবটাই ছিল অন্যরকম। মানুষের চোখ পড়ার মতো বিশেষ আকষর্ণীয় স্বভাবের একটা ছেলে ছিল ফয়সল। দলমত নির্বিশেষে সবাই তাকে ভাল ছেলে হিসেবে জানত। সংগঠনের প্রতি তার আন্তরিকতা ছিল যথেষ্ট। ছোটবেলা থেকেই সংগঠনের মিছিল, মিটিং ও বিভিন্ন প্রোগ্রামে যেত। পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেনি। সে জন্য সাংগঠনিক মান খুব ওপরে ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আবার সংগঠনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতি চেষ্টা করতে লাগল। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও ফয়সল সংগঠনের জন্য সময় ব্যয় করতে শুরু করল। সংগঠনে মানোন্নয়নের জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠল। সংগঠনের দেয়া দায়িত্বকে খুব আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করত। যেকোন সম্মেলনে সুধীদের কাছ থেকে কালেকশনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতো। বই পড়ার প্রতি তার ঝোঁক ছিল। ইসলামী সাহিত্য, গল্প, কবিতা ও ইসলামী সঙ্গীত খুবই পছন্দ করত। বই পড়ার প্রতি এত নেশা ছিল যে কোন একটা বই ধরলে সেটা শেষ করে উঠতে চাইত। মাওলানা মওদূদী সাহেবের বই, আব্বাস আলী খান, অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব এবং আরও সব উঁচু মানের লেখকদের বই পড়ে শেষ করে ফেলত। আমি মাঝে মাঝে বলতাম, ত্ইু কি নজরুল ইসলামের মতো হতে পারবি? কাসের বইয়ের চেয়ে অন্যান্য বই পড়ার প্রতি এত নেশা। ১১ জ্যৈষ্ঠ জন্ম এই জন্যই এই কথাটা বেশি বলতাম। যাক আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া আল্লাহ ফয়সলকে আল্লাহর দ্বীনের পথে জীবন বিলিয়ে দেয়ার তাওফিক দিয়েছেন।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আমার জন্য খুবই বেদনাদায়ক। স্বামীকে হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করছিলাম। বাবার কথাও সন্তানরা এভাবে শুনে না যেভাবে আমার ছেলেরা আমার কথামতো চলতে লাগল। মানুষ দেখে অবাক হতো। এমনি অবস্থায় পরিবারের দুইজন বড় দায়িত্বশীল ছেলে দুটোই আহত এবং একজন মারা যাওয়ার ঘটনাটা আমাকে অনেক পীড়া দিয়েছে। আমি এখনও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন যাপন করতে পারছি না। আমি মানসিকভাবে সুস্থ থাকার অনেক চেষ্টা করি। আল্লাহর কাছেও সাহায্য চাই। কুরআনে বর্ণিত শহীদের মর্যাদা এবং সবরের প্রতিফলের কথা স্মরণ করে একটু সান্ত্বনা পাই। সূরা বাকারার ১৫৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পারছ না।’

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন ওদের সবাইকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে, তার নিয়ামত দিয়ে ওদের সন্তুষ্ট করেন। শহীদ মুজাহিদ, শিপন, মাসুম ও রফিকের মা ওরাও তো আমারই মতো দুঃখিনী মা। তাদের কথা স্মরণ করি এবং কামনা করি আল্লাহ সবাইকে সবর করার তাওফিক দান করুক। আমার ফয়সল ছিল অত্যন্ত ধীরস্থির, বু্িদ্ধমান ছেলে। বেশ কয়েক বছর আগে যখন আমাদের বাসায় গ্যাস ছিলো না, হিটারে রান্না করতাম। তখনকার একদিনের ঘটনাÑ সুইচ লাগানো অবস্থায়ই আমি হিটারের তার ঠিক করতে হাত দিতেই কারেন্টে শট খেয়ে আমি দূরে পড়ে যাই। তখনও আমার হাতে তার লাগানো। ফাহাদ চিৎকার দিয়ে আমাকে ধরতে আসে কিন্তু ফয়সল কোনো কথা না বলেই তাড়াতাড়ি করে হিটারের সুইচটা খুলে দেয়। ফয়সল অনেক কঠিন কাজকেও সতর্কতার সাথে আঞ্জাম দিতে পারত।
২৮ অক্টোবর সকালবেলা আমাদের এলাকার কয়েকজন বোন বলাবলি করছিল, ফুয়াদের আম্মার ছেলেগুলো এ যুগের ছেলেদের থেকে আলাদা, তারা হীরা ও রতেœর চেয়ে মূল্যবান। এই দুর্ঘটনার পর সেই বোনেরা যখন আমাকে দেখতে আসে, তখন তারা বলল, সেই দিন সকালবেলাই ওদের নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এখনও সকালবেলা যদি হাঁটতে বের হই, অনেকেই বলাবলি করে ওনার ছেলেদের মতো ছেলে সমাজে খুব কমই আছে।

এটা বাহাদুরি নয়। এটা মহান রাব্বুল আলামিনের অশেষ মেহেরবানি। ফয়সলের আব্বা সন্তানদের সুশিা দিয়ে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার নৃছা পোষণ করতেন। আল্লাহ যেন ফয়সলকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নিয়ে তার বাবাকে শহীদের পিতা হিসেবে কবুল করেন এবং আমাদের জন্যও ফয়সল নাজাতের উছিলা হয় এই কামনা করি।
প্রিয় সন্তানটার অনেক গুণাবলি আছে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। সর্বশেষ আমি এই কথাই বলতে চাই, আমাদের সন্তানেরা যে দ্বীন কায়েমের জন্য জীবন দিয়ে দ"ষ্টান্ত স্থাপন করে গেল, আমরাও যেন সেই দ্বীনের পথে অবিচল থেকে অন্যায় ও অসত্যের মূলোৎপাটন করে অসত্যের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম করে যেতে পারি। সে সত্যপথে আমরাও এগিয়ে যাব এবং আমাদের পাড়া-প্রতিবেশী পরিবার-পরিজন, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এই পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করব।
আমি ফয়সলের মা অর্থাৎ সম¯- ছাত্রশিবিরের মা। আমি জ্ঞানে তোমাদের চেয়ে কম হতে পারি কিন্তু আমার অনুরোধ তোমাদের প্রতিÑ তোমরা সত্য ও ন্যায়ের পথে অটল থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও, পিছিয়ে যেও না, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন। এই পথে যারা চলবেন, আল্লাহর ঘোষণা তারা বিরাট সফলতার অধিকারী হবে। আল্লাহ তোমাদেরকে এবং আমাদেরকে এই পথের জন্য কবুল করুন। আমিন।
লেখিকা : শহীদ ফয়সলের আম্মা

এক নজরে শহীদ আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল
নাম : আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল
পিতা : মো. আহসানুল হাই
মাতা : সাইয়্যেদা হাসনা বানু
স্থায়ী ঠিকানা : পাইনাদী, মোস্তফানগর, সানারপাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ
ভাইবোন : ৫ ভাই ও ২ বোন
শিাজীবন : শাহাদাতের সময় তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
সাংগঠনিক জীবন : সংগঠনের কর্মী ও অধ্যয়নরত বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
শাহাদাতের তারিখ ও স্থান : ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগাং রোডে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলায় মারাত্মক আহত হয়ে ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে শহীদ হন।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আব্দুল্লাহ আল-ফয়সাল

পিতা

মো. আহসানুল হাই

মাতা

সাইয়্যেদা হাসনা বানু

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৫ ভাই ও ২ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

পাইনাদী, মোস্তফানগর, সানারপাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন

শাহাদাতের স্থান

ইবনে সিনা হাসপাতাল


শহীদ আব্দুল্লাহ আল-ফয়সাল

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আব্দুল্লাহ আল-ফয়সাল


শহীদ আব্দুল্লাহ আল-ফয়সাল

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আব্দুল্লাহ আল-ফয়সাল