শহীদ রফিকুল ইসলাম

১৫ মার্চ ১৯৯৯ - ০৩ মার্চ ২০১৩ | ১৬৪

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

“আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় রফিকুল কোন ডায়েরি কিনতে পারেননি। কিন্তু তাতে কী, ২০ টাকা মূল্যের চন্দ্রা ডিমাই খাতাতেই তিনি লিখেছেন মানবজীবনের অনেক বড় বড় বাণী। যেমন, জীবনে সফলতা বা সুখ পেতে হলে দুঃখের জ্বালা সহ্য করতে হবে। কথাটি হয়তো খুবই ছোট মাত্র এক বাক্যে, এগারো শব্দেই শেষ। ফুটপাথেই এমন হাজারে বাণী সংবলিত বই অহরহ পাওয়া যায়। কিন্তু সাত ভাইবোনের সবার ছোট অতি আনন্দের সোনালি জীবনের প্রাতে ১৪তম জন্মদিনের মাত্র ১২ দিন আগে এই বাক্যের প্রতি বিশ্বাসের দৃঢ়তায় বলে কয়ে নিজের কলিজা বিলিয়ে দেয়া কি এতই সহজ।”

শহীদের পরিচিতি
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি উপজেলার জোতগোসাইদাস গ্রামে শহীদ মো: রফিকুল ইসলাম ১৯৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা গোলাম মোস্তফা ও মাতা মাসতারা বেগমের তিন ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট এবং খুব আদরের। পিতা ভুসি, গম ইত্যাদির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। অভাবের সংসারে দরিদ্র পিতা-মাতা অর্থাভাবে ছেলেমেয়েদের জন্য পড়ালেখার ভালো কোন ব্যবস্থা করতে পারেননি। বহু কষ্টে চার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। যাদের একজন আবার স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্তা। বড় দুই ছেলেকে শত ইচ্ছা সত্ত্বেও পড়াশুনা শেষ করাতে পারেননি। শুধুমাত্র ছোট ছেলে শহীদ মো: রফিকুল ইসলাম লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সবার ছোট এবং পড়ালেখা করছে সব মিলিয়ে তাকে নিয়ে ছিল পিতা-মাতা, ভাইবোনদের অনেক বড় স্বপ্ন। রফিকুলের নিজেরও স্বপ্ন ছিল আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে পিতা-মাতা সংসার এবং দেশ ও জাতির জন্য অনেক কিছু করবেন। কিন্তু স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের ঘাতক বুলেট তাদের সকলের স্বপ্নকে এক নিমিষেই নিভিয়ে দেয়।

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন
দিনটি ছিল ৩ মার্চ ২০১৩। সেদিন ছিল আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অবৈধ ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। সারাদেশের মত রাজশাহীর গোদাগাড়ীতেও হরতাল সফল করার লক্ষ্যে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও পিকেটিং হয়। তৌহিদি জনতা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে এবং প্রচুর পরিমাণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এভাবেও তৌহিদি জনতাকে রাস্তা থেকে সরাতে না পেরে পুলিশ নিজেই পিছু হটে। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে বিজিবি যোগ দিলে সংঘর্ষে নতুনমাত্রা যোগ হয়। এতে পুলিশ বিজিবি যৌথভাবে জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে।

এতে শত শত লোক গুলিবিদ্ধ হন। সকাল সাড়ে ৯টায় শহীদ মো: রফিকুল ইসলাম বুকের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন। তার জানাযার নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক। জানাজায় প্রায় ৬ হাজার লোক উপস্থিতি ছিলেন। জানাযা পরবর্তী সময়ে বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল বের করার প্রস্তুতি নিলেও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারির কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

শহীদের স্বজনদের কথা
শহীদের বাবা : আমি তাকে বলতাম যে, তোমাকে সাঈদীর মত বড় হতে হবে। আমার ছেলে মারা গেছে তাতে দুঃখ আছে কিন্তু কষ্ট নেই। কারণ আল্লামা সাঈদীর মুক্তির জন্য আমার ছেলের মত আমার পরিবারের সবাইকে যদি মরতে হয় তবু যেন তার মুক্তি হয়। কিন্তু তবুওতো বাবা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আর বলেন, আহা, প্রতিদিন ফজরের পর ও কুরআন পড়তো। ছাত্রশিবিরের মাত্র কর্মী হলে কী হবে, ৬ বছর বয়স থেকেই কখনোই ওর নামাজ কাজা হয়নি। চাঁদের মাস হিসাব করে রোজা রাখতো। আমি একটি স্থানীয় মসজিদের ইমাম। আমি না থাকলে সে-ই ইমামতি করতো। হায়! মাত্র ১৪ বছরের এতটুকু ছেলে শুধু মিছিল করার জন্য ওকে হত্যা করা হলো। ঘাতক বুলেট ওর বুকের বাম পাশে লেগে পেছন দিক দিয়ে কলিজাসহ বেরিয়ে যায়। হায়রে বাতিল শক্তি কত বোকা। তারা বুঝে না ওর শাহাদাতের পর এখানে ইসলামের জগরণ আরো বেড়ে গেছে। মসজিদের মুসল্লি সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।

শহীদের গর্বিত মা : ২৮ ফের্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় হওয়ার পর থেকে পড়ালেখায় সে মন বসাতে পারেনি। ছোট মানুষ তবুও কষ্টের কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেছে, ‘মা লেখাপড়া করে কী হবে সাঈদী সাহেবের জন্য প্রয়োজনে আমি শহীদ হয়ে যাব। হরতালের দিন বাসিভাত খেয়ে এ কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছে যে, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈসীর মত এত বড় আলেমকে ফাঁসি দেযার পর আমি আর ঘরে বসে থাকতে পারছি না। তাই আমি প্রতিবাদ মিছিলে যাচ্ছি। মিছিলে যাবার আগে বলেছে, আমাকে ভাল-মন্দ খেতে দাও, আমি আল্লাহর পথে শহীদ হবো। এ ছাড়া ও বলেছে তার জমি সব ভাইবোনকে ভাগ করে দিতে।
আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় রফিকুল কোন ডায়েরি কিনতে পারেনি। কিন্তু তাতে কী, ২০ টাকা মূল্যের চন্দ্রা ডিমাই খাতাতেই তিনি লিখেছেন মানবজীবনের অনেক বড় বড় বাণী। যেমন, ‘জীবনের সফলতা বা সুখ পেতে হলে দুঃখের জ্বালা সহ্য করতে হবে।’ কথা হয়তো খুবই ছোট মাত্র এক বাক্যে, এগারোটি শব্দেই শেষ। ফুটপাথেই এমন হাজারো বাণীসংবলিত বই অহরহ পাওয়া যায়। কিন্তু সাত ভাইবোনের সবার ছোট, অতি আনন্দের সোনালি জীবনের প্রাতে ১৪তম জন্মদিনের মাত্র ১২ দিন আগে এই বাক্যের প্রতি বিশ্বাসের দ"ঢ়তায় বলে কয়ে নিজের কলিজা বিলিয়ে দেয়া কি এতই সহজ?

ব্যক্তিগত প্রোফাইল
নাম : শহীদ মো: রফিকুল ইসলাম

জন্ম তারিখ ও বয়স : ১৫.০৩.১৯৯৯ ইং ১৪ বছর

আহত হওয়ার তারিখ : ০৩.০৩.২০১৩ সকাল ১০টা
শাহাদাতের তারিখ : ০৩.০৩.২০১৩, বুকের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন, স্থান : গোদাগাড়ীতে শাহাদাত বরণ করেন
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : জোতগোসাইদাস, ডাকঘর : শ্রীমন্তপুর, ইউনিয়ন : গোদাগাড়ী পৌরসভা, উপজেলা গোদাগাড়ী, জেলা : রাজশাহী
পিতা : গোলাম মোস্তফা, বয়স প্রায় ৫৫ বছর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন
মাতা : মাসতারা বেগম, বয়স প্রায় ৪৫ বছর, গৃহিণী
ভাইবোনের বিবরণ : ১ম ছেলে : শহীদ মো: রফিকুল ইসলাম, দাখিল নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন, ২য় ছেলে : ফারুক দিনমজুর, তৃতীয় ছেলে : রবিউল ইসলাম দিনমজুর, ১ম মেয়ে মোসা: রোজলি বেগম, গৃহিণী, ২য় মেয়ে : শিউলি বেগম, গৃহিণী, তৃতীয় মেয়ে : মেরিনা, গৃহিণী, চতুর্থ মেয়ে : মোতাহারা, গৃহিণী।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ রফিকুল ইসলাম

পিতা

গোলাম মোস্তফা

মাতা

মাসতারা বেগম

জন্ম তারিখ

মার্চ ১৫, ১৯৯৯

ভাই বোন

৩ ভাই ৪ বোন সবার ছোট

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম : জোতগোসাইদাস, ডাকঘর : শ্রীমন্তপুর, ইউনিয়ন : গোদাগাড়ী পৌরসভা, উপজেলা গোদাগাড়ী, জেলা : রাজশাহী

সাংগঠনিক মান

কর্মী

শাহাদাতের স্থান

গোদাগাড়ীতে


শহীদ রফিকুল ইসলাম

ছবি অ্যালবাম: শহীদ রফিকুল ইসলাম


শহীদ রফিকুল ইসলাম

ছবি অ্যালবাম: শহীদ রফিকুল ইসলাম