শহীদ আবদুল্লাহ আল মঞ্জু

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১৩ এপ্রিল ২০১২ | ১৩৯

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

বিগত ১৩, ১৪ জানুয়ারি ’১২ তারিখে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার পান্টী ঈদগাহ ময়দানে সামাজিক সংগঠন ‘আন-নূর’ এর উদ্যোগে একটি তাফসীর মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের বাধার মুখে প্রশাসন তা স্থগিত করে। এই মাহফিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ২টি মামলা করে। প্রথম মামলার আসামি ১৯ জন এবং দ্বিতীয় মামলার আসামী করা হয় ১১ জনকে। ফলে সকল আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পরও তাফসীর মাহফিল হয়ে ওঠেনি। খোনে বলে রাখা দরকার, যে ইউনিয়নে ঘটনাটি ঘটে সেই পান্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি সমর্থিত, আর যে ওয়ার্ডে ঘটনাটি ঘটে সেই ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরুষ ও মহিলা মেম্বার দু’জনই জামায়াত সমর্থিত। আর বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হুসনে জাফর হলেন কুমারখালী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি। এত বড় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হওয়ার পরও পান্টী তথা কুমারখালীতে দিনি দিন জামায়াত-শিবিরের উত্থানকে তিনি ভালো চোখে দেখেননি। এ জন্য তিনি এবং তার বাহিনী মওকা খুঁজছিলেন জামায়াত শিবিরকে কিভাবে উচিত শিক্ষা দেয়া যায়!

গত ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল ‘আন-নূর’র উদ্যোগে একটি কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে একটি প্রশ্ন ছিল ‘কততম তাফসীর মাহফিল বন্ধ করে দেয়া হয়?’। মূলত এই প্রশ্ন দেখে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বলেন যে, এর মাধ্যমে তারা রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তারা কুইজ প্রতিযোগিতা ও প্রশ্নপত্র বিলি বন্ধ করার কথা বলেন। তারা বলেন; কুইজ প্রতিযোগিতায় এই প্রশ্ন দিয়ে জামায়াত-শিবির তাফসীর মাহফিল বন্ধ করাটাকে একটি দলিল হিসেবে রেখে দিতে চাইছে। তারা কূটকৌশলে মেতে উঠে। এক পর্যায়ে আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা গোপন মিটিং করে ও সংগঠিত হয়। ১২ এপ্রিল তারিখে ‘আন-নূর’ এর সভাপতি ও জেলা ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক বনি আমিনের ছোট ভাই নাজমুল, বড় ভাই শিবলী নোমান ও বাবা আবদুল মা’বুদের উপর আওয়ামীলীগ নেতা রুহুল আমীন ও আবদুল লতিফের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন ক্যাডার অতর্কিত হামলা চালায় এবং শিবলী নোমানকে (জামায়াত সমর্থিত মহিলা মেম্বার নূর বানুর স্বামী) ধরে নিয়ে যায়। এতে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার সমস্ত মানুষ স্পষ্টত দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক গ্রুপে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা অন্যপক্ষে জামায়াত-বিএনপিসহ এলাকাবাসী। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পুলিশের ভূমিকা উপস্থিত সবাইকে বিস্মিত করে। জামায়াত-বিএনপিসহ এলাকাবাসী কিছু ব্যক্তি আহত হলে পুলিশ উল্টো আহতদের সাময়িকভাবে আটকে রাখে এবং পরবর্তী যে কোনো ঘটনার জন্য জামায়াত-বিএনপি পক্ষকে দায়ী করা হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়। ইতঃপূর্বে, অন্যায়ভাবে তাফসীর মাহফিল বন্ধ এবং স্থানীয় প্রশাসন ও আওয়ামীলীগের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে উত্তেজিত আওয়ামীলীগের একটি গ্রুপ আবুল হুসেন, হাছেন ও মোহসিন (পারিবারিকভাবে আওয়ামীলীগ) এর নেতৃত্বে জামায়াতে যোগ দেয়ার কথা ঘোষণা করে। এতে আওয়ামীলীগের অপর গ্রুপ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং জামায়াত-শিবিরের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার ঘৃণ্য নকশা করে।

১৩ এপ্রিল সকালে ফজরের নামাজের পর মিনারুল নামে একজন বিএনপি কর্মী পান্টী বাজারে যাওয়ার পথে রুহুল আমীন ও আবদুল লতিফের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের আওয়ামী গুণ্ডা তার উপর হামলা করে এবং মাথা ফাটিয়ে দেয়। পরে তারা জামায়াত কর্মী ইউসুফ আলীকে আহত ও রক্তাক্ত করে। পুলিশের সহায়তায় আওয়ামীলীগ কর্মীরা ব্যাপক আক্রমণ করে বসে এলাকাবাসীর উপর। এ সময় জামায়াত ও বিএনপি আত্মরক্ষামূলক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সকাল থেকেই শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ। একটি গ্রুপ শিবির কর্মী আবদুল্লাহ আল মঞ্জু ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে তার উপর হামলা চালায়। মঞ্জু তখন ফজরের নামাজ আদায় করে, কুরআন অধ্যয়ন করে বিশ্রাম নিয়ে থাকেন। হামলার সময় তিনি দাঁত ব্রাশ করতে করতে বাড়ির বাইরে আসেন। পেছন হতে কয়েক হাত দূর থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে আওয়ামীলীগ কর্মী বাদশার ছেলে ফারুক ও রুবেল একটি ধরালো ফালা নিক্ষেপ করে। ফালাটি পেছন থেকে তাঁর ডান কাঁধের নিচ দিয়ে ঢুকে ডান বুকের একটু উপর দিয়ে বের হয়ে পড়ে। মঞ্জু নিজ হাতে টান দিয়ে সেটা খুলে ফেলেন এবং তাৎক্ষণিক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। জবাই করা প্রাণীর মত ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। তখন সময় আনুমানিক সকাল সাড়ে ৮টা। ৪৫ মিনিটের মধ্যে মাইক্রোযোগে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে আনা হয়। আনার পর সাড়ে ৯ টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য

শহীদের কফিন বাড়িতে পৌঁছার সাথে সাথে এক অবর্ণনীয় দৃশ্য অবতারণা হয়। আগে থেকেই শহীদের লাশ দেখার জন্য হাজারো জনতার বাঁধভাঙা ঢল নামে। একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারিয়ে মা-বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। শরীরের রক্ত পানি করে তিল তিল করে বড় করা সন্তানের লাশ আজ চোখের সামনে। এটা কিভাবে বিশ্বাস করা যায়! গর্ভধারিণী মায়ের আহাজারিতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠছিল। শহীদের সাথীরা বাকরুদ্ধ। ষাটোর্ধ্ব এক মুরুব্বি বলছিলেন; আজ সকালেই মঞ্জু মসজিদের জামায়াতে আমার সাথে ফজরের নামাজ আদায় করেছে। এটা কিভাবে মেনে নেয়া যায়? পাঁচওয়াক্ত নামাজি মাসুম ছেলেকে যারা খুন করলো আল্লাহ তাদের বিচার করো!’

এক নজরে শহীদ আবদুল্লাহ আল মঞ্জু
নাম : আবদুল্লাহ আল মঞ্জু
পিতা : মু. আবদুর রশিদ
মাতা : মোছাম্মাৎ রুবিয়া খাতুন
বয়স : ১৭ বছর
স্থানীয় ঠিকানা : পান্টি, কুমারখালী, কুষ্টিয়া
ভাইবোন : ১ ভাই, ১ বোন
শিক্ষাজীবন : একাদশ শ্রেণী, পান্টি ডিগ্রী কলেজ
সাংগঠনিক মান : কর্মী
শাহাদাতের তারিখ ও স্থান: ১৩ এপ্রিল ২০১২, নিজ গ্রাম
যাদের আঘাতে শহীদ : আওয়ামী গুণ্ডাবাহিনী
যে শাখার শহীদ : কুষ্টিয়া জেলা।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আবদুল্লাহ আল মঞ্জু

পিতা

মু. আবদুর রশিদ

মাতা

মোছাম্মাৎ রুবিয়া খাতুন

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

১ ভাই, ১ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

পান্টি, কুমারখালী, কুষ্টিয়া

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

একাদশ শ্রেণী, পান্টি ডিগ্রী কলেজ

শাহাদাতের স্থান

নিজ গ্রাম


শহীদ আব্দুল্লাহ আল মঞ্জু

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আব্দুল্লাহ আল মঞ্জু


শহীদ আব্দুল্লাহ আল মঞ্জু

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আব্দুল্লাহ আল মঞ্জু