শহীদ রেজবুল হক সরকার প্লাবন

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১৫ জুন ২০০৫ | ১২৩

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

বাতিল যখন আদর্শের কাছে পরাজিত হয় তখন বেছে নেয় কাপুরুষোচিত সহিংস আক্রমণের পথ। রেজবুল হক সরকার এমনই একজন মানুষ। যার আদর্শের কাছে পরাজিত হয়ে চিরধ্বংসের ভয়ে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার পায়তারা করলো বাতিল শক্তি। তারা জানতো প্লাবনের দাওয়াতে স্কুলের অধিকাংশ ছাত্র কুরআনের পথে আসছে। স্কুলে তারা যে অন্যায় অত্যাচার করতো প্লাবন তার প্রতিবাদ করতেন। তারা জানতো প্লাবন খুব মেধাবী ছাত্র। এ মেধাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে না পারলে তাদের চাঁদাবাজি, গুণ্ডামি, চুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ মেধাবীর নির্দেশেই। তারা ভয় পেতে থাকলো এভাবে সবাইকে দাওয়াত দিতে থাকলে সবাই শিবির হয়ে যাবে। তাহলে তাদের মতো গুণ্ডামি করবে? তাই তারা বেছে নিল প্লাবন নামের এই নিষ্পাপ ফুলটিকে।

ঘটনার বিবরণ
১৩ তারিখ বেলা ২ টার সময় যুবদল সন্ত্রাসী মতিয়ার, সাইফুর গংরা বন্দর শাখা সভাপতি মোজাম্মেল ভাইকে শিবির ছেড়ে যুবদল করতে হুমকি দেয়। আবার বিকেল বেলা মিছিল দেয় রুবেল, বকুল, লিটনের নেতৃত্বে। শ্লোগান ছিল ‘হৈ হৈ রই রই, জামাত শিবির গেলি কই/ একটা দুইটা শিবির ধর, সকাল বিকাল নাস্তা কর। পরের দিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটি মিছিল উপজেলা শহর প্রদক্ষিণ শেষে চৌমাথায় সমাবেশ করার সময় বিএনপি সেক্রেটারি জুয়েল ও যুবদল সভাপতি রুবেল বাধা দেয়। এতে করে উত্তেজনা দেখা দিলে শিবিরের দায়িত্বশীলরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মিছিলসহ অফিসে যেতে থাকে। এসময় যুবদল, ছাত্রদল লাঠি-সোটা, রড, কিরিচ, পিস্তলসহ শিবির অফিসের দিকে ধেয়ে আসে। তখন শিবির কর্মীরা আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করে। তখন তারা পালিয়ে যুবদল অফিসে আশ্রয় নেয়। পুলিশ এসে শিবির কর্মীদের ধাওয়া করে পিছিয়ে দেয়। এ সংঘর্ষ চলাকালে শিবির নেতা মোজাম্মেল, সোলায়মানসহ কয়েকজন আহত হন। তখন শিবির কর্মীরা পুলিশের অনুরোধে অফিসে ফিরে আসেন। এ সময় উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও সাবেক জেলা সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ভাই বাড়ি থেকে আসার সময় রাব্বি হোটেল মোড়ে যেতেই রিপন, রুবেল, জুয়েল, লিটনের নেতৃত্বে তাদের উপর হামলা করে মারাত্মকভাবে আহত করে। এ সময় পুলিশের সামনেই তারা সশস্ত্র মহড়া দিতে থাকে। এ দিকে শহীদ প্লাবন সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে প্রাইভেট পরে বন্দরে আসেন সংঘর্ষের খবর নিতে। এ সময় রাত ৮.১৫ থেকে ৮.৩০ পর্যন্ত যুবদল অফিস অতিক্রম করার সময় লিয়াকত, বকুল, রুবেল, লিটন, জুয়েলসহ ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী খুনের নেমায় তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার নিচের পাটির সাতটি দাঁত ভেঙে যায়। পুরো মাথা থেতলে দেয়। একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় পলাশবাড়ী থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তখনই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মেডিকেল কলেজ সভাপতিসহ তাকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়। অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে ১৪ তারিখ বিকেলে ঢাকায় পাঠানো হয়। অবস্থার কোনো উন্নতি না হয়ে সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে ১৫ জুন সকাল ৯.০০ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান পরপারের মহাউদ্যানে।


রেজবুল হক প্লাবন তখন উঠতি তরুণ। সবে মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।

এক নজরে শহীদ রেজবুল হক সরকার (প্লাবন)
নাম : মুহাম্মাদ রেজবুল হক সরকার (প্লাবন)
পিতা : মোহাম্মাদ আজাদুল হক সরকার
মাতা : মৃত মোসা: নাফিসা আকাতর + মোসা : মাসলিনা আকতার
ঠিকানা : গ্রাম উনিয়া গাড়ী প্রফেসর পাড়া
পোষ্ট : পালাশবাড়ী থানা: পলাশবাড়ী, জেলা : গাইবান্ধা
ভাইবোন : ১ ভাই, ২ বোন ( তিনি ২য়)
একাডেমিক যোগ্যতা : এসএসসি ফলপ্রার্থী, পরবর্তী সময়ে ফল আসে তিনি অ+ পেয়েছেন।
সাংগঠনিক মান : কর্মী
শাহাদাতের তারিখ ও স্থান : ১৫ জুন ২০০৫ ঢাকা মেডিকেল
কবর স্থান যেখানে : পাবনাপুর দাদার বাড়ি পলাশবাড়ী থানা, গাইবান্ধা
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রদল, যুবদলের ক্যাডার
যে শাখার শহীদ : গাইবান্ধা জেলা
শহীদের শখ : ইসলামী সঙ্গীত শোনা ও বই পড়া।

মা বাবার প্রতিক্রিয়া
বাবা ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে খুবই নিবিড় সম্পর্ক ও শ্রদ্ধা বোধ ছিল। সে কখনো কোন অন্যায় সহ্য করতো না সবাই তাকে গালি দিলও সে কাউকে গালি দিত না সে কখনো নামাজ কাযা করতো না।

সহপাঠির প্রতিক্রিয়া
প্লাবন ভাই মেধাবী ছাত্র হিসেবে সামনের সারিতে বসার ব্যাপারে উৎগ্রীব থাকতো। একদিন সামনে সারিতে বসতে না পেরে দেওয়ালে সাথে ঘেষে পিছনের সারিতে বসে, শিক্ষক এসে বললো প্লাবন তুমি পিছুনে কেন সে বসেছিল আমি সামনের সারতে বসতে পারি নাই তাই পিছনে বসেছি। শিক্ষা আদর করে তাকে প্রথম সারিতে সাবনো ব্যবস্থা করলো।

ছোট বোন রিপার প্রতিক্রিয়া
আমার কাছে আমার ভাইয়া অনেক ভাল ছিল, এখন ওকে আমি অনেক মিস করি। আমার অনেক ইচ্ছা ছিল সে ডাক্তার হবে আমি সবাইকে বলতে পারব আমার ভাইয়া ডাক্তার অথচ আমার ভাইয়ার কথা আমি কাউকে বলতে পারি না।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ রেজবুল হক সরকার প্লাবন

পিতা

মোহাম্মাদ আজাদুল হক সরকার

মাতা

মৃত মোসা: নাফিসা আকাতর + মোসা : মাসলিনা আকতার

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

২য়

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম উনিয়া গাড়ী প্রফেসর পাড়া পোষ্ট : পালাশবাড়ী থানা: পলাশবাড়ী, জেলা : গাইবান্ধা

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

এসএসসি ফলপ্রার্থী, পরবর্তী সময়ে ফল আসে তিনি A+ পেয়েছেন।

শাহাদাতের স্থান

১৫ জুন ২০০৫ ঢাকা মেডিকেল


শহীদ রেজবুল হক সরকার প্লাবন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ রেজবুল হক সরকার প্লাবন


শহীদ রেজবুল হক সরকার প্লাবন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ রেজবুল হক সরকার প্লাবন