শহীদ মুহাম্মদ সাহাব উদ্দিন

০১ জানুয়ারি ১৯৮০ - ২৬ অক্টোবর ১৯৯৮ | ৯৬

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

২৬ অক্টোবর ’৯৮ দুপুর ১২.৩০ মিনিটে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার গুণবতী ডিগ্রি কলেজে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করেন শিবিরের কর্মী মুহাম্মদ সাহাব উদ্দিন।

সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনা
সেদিন ছিল গুণবতী ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর নবাগত ছাত্রদের দ্বিতীয় দিবস। ছাত্রশিবির কর্মীরা কলেজ ক্যাম্পাসে নতুন ছাত্রদের মাঝে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছিলেন সকাল থেকে। কিন্তু ইসলামবিরোধী আওয়ামী বাকশালী গোষ্ঠীর তা কোনোভাবেই সহ্য হচ্ছিল না। তাই তারা পরিকল্পনা আঁটতে থাকে হামলে পড়ার জন্য। শিবির নেতৃবৃন্দ তা আঁচ করতে পেরে সকল কর্মীকে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে যখন বের হয়ে আসছিলেন ঠিক তখনই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা কাটারাইফেল, পিস্তল, বোমাসহ মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিনদিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণ করে। গুলিবিদ্ধ হন সাহাব উদ্দিন, জাফর আহমদ শিপন, নুরুন্নবী, কাদের ও ইসমাইল। এর কিছুক্ষণ পর গুলিবিদ্ধ সাহাব উদ্দিন ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন।

২৭ অক্টোবর। চৌদ্দগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ময়দানে সকাল ১১টায় শহীদের প্রথম জানাযা, সকাল হতেই শত শত শিবিরকর্মী ও জনতা সমবেত হতে লাগলো। চৌদ্দগ্রামের রাজপথ শহীদের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত করতে থাকে। হাজারো জনতা অপেক্ষমাণ শহীদের কফিনের জন্য। অবশেষে ছাত্রশিবিরের প্রাক্তন সভাপতি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও শিবিরের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দসহ জনতার বিশাল বহরসহ লাশের গাড়ি চৌদ্দগ্রাম বাজারে আসতেই সর্বস্তরের জনতা ছুটে আসেন। হাজারো মানুষের ভিড়। সকলের চোখেই পানি, শহীদের লাশ এক নজর দেখার জন্য এলাকাবাসীসহ সকলেই হুমড়ি খেয়ে পড়লেন তারপর ইউনিয়ন পরিষদ ময়দানে শহীদের প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

গুণবতী অভিমুখে শহীদের লাশ
প্রথম জানাযা শেষ করে শহীদের লাশ নিয়ে যাওয়া হলো তাঁর স্মৃতিবিজড়িত গুণবতী হাইস্কুল মাঠে। খবর পৌঁছানোর সাথে সাথেই ছুটে আসে হাজারো ছাত্র-জনতা। বন্ধুহারা ছাত্রদের আর্তচিৎকারে শিবিরকর্মী ও সাধারণ জনতার আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ যেন আবেগের অকৃত্রিম ভালোবাসা। সমবেত হাজারো জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখলেন চৌদ্দগ্রামের গণমানুষের নেতা ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও শহীদের গর্বিত পিতা জনাব আবদুল হক। সেদিন শহীদের সাথীদের বুক ফাটা আর্তনাদে গুণবতী স্কুল মাঠের উপস্থিত জনতা কান্না ধরে রাখতে পারেনি। অবশেষে স্কুল মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় শহীদের জানাযার লাশ নেয়া হল গুণবতী কলেজ মাঠে, হাজারো জনতা জানায় উপস্থিত হন। সকলের চোখে যেন অশ্রুর নদী বইছিল।

রাজবল্লভপুরের পথে শহীদের লাশ
গুণবতী কলেজ মাঠে জানাযা শেষে শহীদের কফিন নিয়ে শহীদের নিজ গ্রাম রাজবল্লভপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা হয়। কফিনবাহী গাড়ি গ্রামে পৌঁছালে হাজারো নারী-পুরুষ ছুটে আসেন শহীদ সাহাব উদ্দিনকে এক নজর দেখার জন্য। সে এক হৃদয় ভাঙা হৃদয়। চোখের পানি যেন কারোরই বাধা মানছে না। পুত্রশোকে মায়ের আর্তচিৎকার। ভাই হারা ভাইদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে রাজবল্লভপুরের আকাশ-বাতাস। বাকরুদ্ধ শহীদের সাথীরা। কী জবাব দেবে তারা। মা-বাবার প্রশ্ন কেন তাকে হত্যা করা হলো? সান্ত্বনা দেয়ার মতো কোনো ভাষা কারো জানা ছিল না। তারপরও ডা. তাহের শহীদের আত্মীয় স্বজন ও পিতা-মাতাকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করলেন।

শহীদের বাড়ির সামনেই সর্বশেষ জানাযা অনুষ্ঠিত হলো। জানাযাপূর্ব সমাবেশে শহীদের পিতা দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, তার সন্তান দ্বীনের বিজয়ের জন্য শাহাদাত বরণ করেছে। তাই তিনি শহীদের পিতা হতে পেরে গর্বিত। জানাযার পর শহীদের লাশ চিরনিদ্রায় শায়িত করা হলো। কবরে লাশ নামানোর পর দেখে মনে হচ্ছিল শহীদের হাসিমাখা মুখখানি যেন জান্নাতে যাওয়ার আনন্দে উদ্বেলিত।

ঘটনার দিন খুব সকালেই সাহাব উদ্দিন ঘুম থেকে উঠে ফজর পড়ে গোসল শেষ করলেন। তারপর পাড়ার অন্যান্য শিবির কর্মীকে খবর দিলেন কলেজে যাওয়ার জন্য। তিনি তার সাথীদের বললেন; আওয়ামীলীগের অত্যাচার আর সহ্য হয় না। চল তাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। ঠিকই শহীদ সাহাব উদ্দিন সেদিন ময়দানে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাণপণ সংগ্রাম করে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করলেন। কে জানতো সেদিন সাহাব উদ্দিন সকাল থেকেই জান্নাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? গ্রামের সকলেই এক নামে তাঁকে ভাল এবং বিনয়ী ছেলে হিসেবেই জানতো। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বুক কাঁপলো না সুন্দর স্বভাব চরিত্রের এই ছেলেটির বুকে বুলেট বিদ্ধ করতে?

একনজরে শহীদ মুহাম্মদ সাহাব উদ্দিন
নাম : মুহাম্মদ সাহাব উদ্দিন
পিতা : আবদুল হক
মাতা : মনোয়ারা বেগম
জন্ম : ১৯৮০ সালে
শাহাদাত : ২৬ অক্টোবর ’৯৮ ইং
সাংগঠনিক মান : কর্মী
ঠিকানা : রাজবল্লমপুর, গুণবতী, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা।
ভাই বোনদের সংখ্যা : ৪ ভাই (তিনি সর্বকনিষ্ঠ)
একাডেমিক যোগ্যতা : এইচএসসি অধ্যয়নরত
সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : গুণবতী ডিগ্রি কলেজ।
ঘটনার বিস্তারিত : নবীনবরণ অনুষ্ঠানের পরের দিন অতর্কিত আক্রমণ করে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা।
যাদের আঘাতে শহীদ: আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক
আহত হওয়ার তারিখ : গুণবতী, পদুয়া রোডের মাথায়
কবর যেখানে : পারিবারিক গোরস্থান
যে শাখার শহীদ: কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ
শখ : বই পড়া ও বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়া অত্যন্ত ন্যায় পরায়নও পরোপকারী ছিল। কারো কোনো বিপদ দেখলে তা সমাধান করার চেষ্টা করতো।

শহীদের বাবার প্রতিক্রিয়া
শাহাদাতের পর শহীদ সাহাব উদ্দিনের পিতা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন; আমার ছেলের কোন দোষ ছিল না। সে শুধু ইসলামের কথা বলতো। এ জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। শহীদের পিতা হতে পেরে আমি গর্বিত। তবে এভাবে যেন আর কোনো মা বাবার বুক খালি না হয়। আল্লাহর নিকট তিনি হত্যাকারীদের বিচার চান।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মুহাম্মদ সাহাব উদ্দিন

পিতা

আবদুল হক

মাতা

মনোয়ারা বেগম

জন্ম তারিখ

জানুয়ারি ১, ১৯৮০

ভাই বোন

৪ ভাই (তিনি সর্বকনিষ্ঠ)

স্থায়ী ঠিকানা

রাজবল্লমপুর, গুণবতী, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা।

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

এইচএসসি অধ্যয়নরত, গুণবতী ডিগ্রি কলেজ।

শাহাদাতের স্থান

গুণবতী, পদুয়া রোডের মাথায়


শহীদ মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন


শহীদ মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন