শহীদ মুহাম্মদ আবদুল মান্নান চৌধুরী

০১ জানুয়ারি ১৯৮০ - ০৬ মার্চ ১৯৯৭ | ৯১

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

শাহাদাত সবচেয়ে বড় নেয়ামত- যা সকলের সৌভাগ্যে থাকে না। শহীদরা আমাদের জন্য সবচেয়ে গৌরবের, সবচেয়ে বড় প্রেরণার উৎস। চলার পথে শহীদের ঘটনাপ্রবাহ আমাদের স্মৃতির পতাকা ভারী করে তোলে। অবশেষে আরেকটি তাজা প্রাণ, আল্লাহর পথে নিবেদিত সৈনিক অকালে ঝরে গেল ইসলাম নামের শান্তির মহীরুহ থেকে। খোদাদ্রোহী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের লেজুড়ভিত্তিক ছাত্রসংগঠন ছাত্রসমাজের কলংক মুজিববাদী ছাত্রলীগ নামের সন্ত্রাসীদের হাতে ফটিকছড়ি ভুজপুরে নির্মমভাবে খুন হন মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে আবদুল মান্নান ছিলেন তৃতীয়। চৌধুরীপাড়া পাইন্দং নিবাসী মোহাম্মদ এজাহার মিয়ার পুত্র আবদুল মান্নান ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র ও সম্ভাবনাময় তরুণ।

কী কারণে হত্যা করা হলো
আবদুল মান্নান ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। কর্মী হিসেবে দৈনিক ব্যক্তিগত রিপোর্ট লেখা, নামাজ পড়া, সকাল বেলা কুরআন-হাদীস পড়া ছিল তার নিয়মিত কাজ। তিনি সাধারণ ছাত্রদেরকে নামাজের দিকে, ইসলামের দিকে আহবান করতেন। এটাই ছিল তার অপরাধ। তার দাওয়াতি কার্যক্রম’৯৬ এর সংসদ নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে নির্বাচনী তৎপরতায় ঘাতকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এইচএসসি অধ্যয়নরত একজন কলেজ ছাত্রের এই ধরনের তৎপরতা দেখে ঘাতকরা মনে করেছিল একে যদি মেরে ফেলা না হয় তাহলে এলাকার সব ছাত্রকে শিবির বানিয়ে ফেলবে। যার কারণে তারা এলাকায় আর সন্ত্রাস চাঁদাবাজি করতে পারবে না, শুধু এই কারণেই জীবন দিতে হলো আমাদের প্রিয় মান্নান ভাইকে।

যেভাবে হত্যা করা হলো
সেই দিন ৬ মার্চ ’৯৭ বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষা চলছিল। আবদুল মান্নান তার ভাই ও অন্য আত্মীয়দের নিয়ে বিবিরহাটের পরীক্ষা কেন্দ্রে যান। পরীক্ষা শেষে যথারীতি লজিং বাড়িতে এসে খাওয়া দাওয়া সেরে পাঞ্জাবি-টুপি পরে আসরের নামাজ পার্শ্ববর্তী মসজিদে জামায়াতের সাথে আদায় করেন। নামায শেষে বাড়ি ফেরার পথে ছাত্রলীগের চিহ্নিত অস্ত্রধারী গুণ্ডাবাহিনী পাশে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে। তিনি পাশাপাশি আসতেই তারা হায়েনার মতো হামলে পড়ে মান্নানের উপর। সন্ত্রাসীরা তাকে ফকির মাওলানার পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। প্রথমে বেদম প্রহার করে এর পর তার বুকের উপর গুলি করে। ঘটনাস্থলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আবদুল মান্নান। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও হায়েনার দল তার বুকে উপর্যুপরি গুলি চালায় এবং উল্লাস করতে থাকে। তার তাজা রক্তে রঞ্জিত এই শিবিরের পথ।

খুনিদের বিচার হবে কি
ফটিকছড়ির সাধারণ মানুষ এবং ছাত্র-জনতার জিজ্ঞাসা- কেন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে ফটিকছড়িতে একে একে ২৬ জন ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীকে প্রাণ দিতে হলো? সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, প্রবাসী সর্বস্তরের জনগণ আওয়ামী সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির শিকার তাই ফটিকছড়ির সর্বস্তরের মানুষের জিজ্ঞাসা, এ সরকারের হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, নির্যাতন কবে বন্ধ হবে? মান্নানসহ অন্যান্য নিরপরাধ মানুষের খুনিদের বিচার কবে হবে?

একনজরে শহীদ মুহাম্মদ আবদুল মান্নান চৌধুরী
নাম : মুহাম্মদ আবদুল মান্নান চৌধুরী
পিতা : মুহাম্মদ এজহারুল হক চৌধুরী
মাতা : নুরজাজাহন বেগম
ঠিকানা : চৌধুরী পাড়া, পাইন্দং, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম
ভাই বোনদের সংখ্যা : ৬ ভাই ২ বোন
শহীদ অবস্থান : ভাইদের মধ্যে ৩য়
জন্মতারিখ : ১৯৮০ ইং
একাডেমিক যোগ্যতা : এইচএসসি পরীক্ষার্থী
সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : ফটিকছড়ি ডিগ্রি কলেজ
সাংগঠনিক মান : কর্মী
ঘটনার বিস্তারিত : মসজিদে ইমামতির সাথে আসর নামাজ পড়ে বের হয়ে আনুমানিক ১০০ হাত দূরে যেতে না যেতে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা গুলি করে।
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রলীগ ক্যাডার
যে শাখার শহীদ : চট্টগ্রাম উত্তর জেলা
আহত হওয়ার তারিখ : ৬ মার্চ ১৯৯৭ ফকির মাওলানার পুকুর পাড়, পাইন্দং, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
কবর যেখানে : পারিবারিক গোরস্থান।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মুহাম্মদ আবদুল মান্নান চৌধুরী

পিতা

মুহাম্মদ এজহারুল হক চৌধুরী

মাতা

নুরজাজাহন বেগম

জন্ম তারিখ

জানুয়ারি ১, ১৯৮০

ভাই বোন

৬ ভাই ২ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

চৌধুরী পাড়া, পাইন্দং, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ফটিকছড়ি ডিগ্রি কলেজ

শাহাদাতের স্থান

মসজিদে ইমামতির সাথে আসর নামাজ পড়ে বের হয়ে আনুমানিক ১০০ হাত দূরে যেতে না যেতে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা গুলি করে।


শহীদ মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান চৌধুরী

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান চৌধুরী


শহীদ মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান চৌধুরী

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান চৌধুরী