শহীদ মুহাম্মদ গোলাম জাকারিয়া

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১৯ মে ১৯৯৬ | ৮৭

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

মুহাম্মদ গোলাম জাকারিয়া বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন নিবেদিতপ্রাণ সাথী ছিলেন। সংগঠনের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও স্বপ্ন ছিল বিপুল বিশাল। তিনি মনে প্রাণে সংগঠনকে ভালোবাসতেন।

একনজরে শহীদ মুহাম্মদ গোলাম জাকারিয়া
নাম : মুহাম্মদ গোলাম জাকারিয়া
পিতা : মরহুম আব্দুল খালেক মোল্লা
মাতা : কাফিয়া বেগম
সাংগঠনিক মান : সাথী
সর্বশেষ পড়াশোনা : আইসিএস পরীক্ষার্থী
সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজে, দাগনভূঞা, ফেনী
শিক্ষায় বিশেষ কৃতিত্ব : ২য় ও ৩য় শ্রেণীতে বৃত্তি এবং ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি অর্জন
জীবনের লক্ষ্য : ডাক্তার হওয়া
শহীদ হওয়ার স্থান : শিবির মেস, দাগনভূঁইয়া, ফেনী
আঘাতের ধরন : বোমার আঘাত
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রদলের গুন্ডাবাহিনী
শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯.০৫.১৯৯৬ (রাত ১১টা)
যে শাখার শহীদ : ফেনী জেলা
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- শ্রীনদ্দী, পো- চান্দের হাট, থানা+জেলা- নোয়াখালী
ভাই বোনদের সংখ্যা : ৪ ভাই ২ বোন (তিনি ৫ম)
পরিবারে সদস্য সংখ্যা : ১৩ জন
শহীদের স্মরণীয় বাণী : ‘জীবনের বিনিময়ে হলেও ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।’

শহীদের বড় ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া
শাহাদাতের পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে শহীদের বড়ভাই বলেন; ‘আর কোনো জাকারিয়াকে যেন এরকম প্রাণ দিতে না হয়'।


ঘটনা সংক্ষেপ
রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে দাগনভূঁইয়া থানার সাংগঠনিক মেস থেকে বের হন। ঠিক তখনি ওঁৎপেতে থাকা ছাত্রদলের বোমার আঘাতে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।

কিছু স্মৃতি কিছু কথা
আ.ন.ম আব্দুর রহীম

১৭ই মে ভোর ৫টা, ফজরের নামাজ পড়ে পড়ার টেবিলে বসতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় বাসার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হল। দরজা খুলতেই দেখি মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয় সহকর্মী নাজিম ভাই। কি খবর জিজ্ঞেস করতেই ভেউ ভেউ করে কেঁদে দিলেন। আমি সান্তনা দিয়ে তাকে ড্রইং রুমে বসিয়ে বললাম কি ব্যাপার? সে বলল দাগনভূঞায় আমাদের একজন ভাই শাহাদাত বরণ করেছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ গতকালই বিকালে দাগনভূঞাতে প্রোগ্রাম করে এসেছি। শাহাদাতের ঘটনার মতো কোন পরিস্থিতি ছিল না। যখন জিজ্ঞেস করলাম কোন ভাইটিকে এভাবে অকালে চলে যেতে হলো-যখন বলল গোলাম জাকারিয়া আমি নির্বাক হতভম্ব হয়ে পড়লাম, বিস্ময়ের বিমূঢ়তা কাটিয়ে করণীয় কি তা চিন্তা করলাম এবং প্রস্তুতি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। বাসা থেকে প্রথম যখন রিকশায় মেসের দিকে যাচ্ছিলাম তখন নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হারিয়ে যাচ্ছিলাম জাকারিয়ার মাঝে, তার সাথে অতিবাহিত হওয়া সময়ের মাঝে। তার সাথে কথোপকথনের সংলাপগুলো মনে হচ্ছিল কানে ঘন্টার মতো বাজছে। মেসে গিয়ে দেখি জেলা সভাপতি জনাব নিজামুদ্দীন ফারুক ভাই বাড়ি থেকে ফেরেনি।

মেস থেকে সোজা জামায়াত অফিসে গিয়ে জেলা আমীরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে খবর দিয়ে বৈঠকে বসলাম। বৈঠকে কাজ ঠিক করে আমার দায়িত্ব পড়ল দাগনভূঞা গিয়ে লাশের পোস্ট মর্টেম ও জানাযার ব্যবস্থা করা এবং থানায় গিয়ে মামলার বিষয়টা দেখা। আমি মহিপাল পার হতেই জেলা সভাপতির সাক্ষাৎ পেলাম, উনি বাড়িতে থেকেই খবর পেয়ে ভোরে দাগনভূঞা এসে লাশ পোস্টমর্টেমের ব্যবস্থা করেছেন। আনা হল ফেনী ট্রাংক রোডের লাশ ঘরে। ইতোমধ্যে চতুর্দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ায় শত শত কর্মী তাদের প্রিয় ভাইটিকে দেখার জন্য ভিড় জমাতে শুরু করল। ২ টায় ট্রাংক রোডে প্রতিবাদ সমাবেশ ও জানাযায় প্রস্তুতি চলতে লাগলো, কেন্দ্র থেকে তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল মুহতারাম মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া ভাই এলেন, পোস্ট মর্টেম শেষে কফিন নিয়ে আনা হলো ঐতিহাসিক ট্রাংক রোড চত্বরে শুরু হল জানাযা পূর্ব প্রতিবাদ সমাবেশ। হাজার হাজার জনতার সামনে আমি যখন মাইকে শহীদের বড় ভাই বক্তব্য রাখবেন বলে ঘোষণা দিলাম তখন জনতার গগণবিদারী শ্লোগানে ফেনীর আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুলছিল। ট্রাংক রোডের জানাযা শেষে দাগনভুঞার উদ্দেশ্যে কফিন নিয়ে রওয়ানা হলাম সবাই। যখন দাগনভুঞা পৌঁছলাম, দেখলাম উত্তাল অগ্নিগর্ভ দাগনভূঞায়। হাজার হাজার ছাত্র যুবক জনতা পূর্ব থেকেই প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ছিল।

দাগনভূঞার প্রতিবাদ সমাবেশে শহীদের কলেজের সম্মানিত প্রিন্সিপাল তার প্রিয় ছাত্রটির এ অকাল মৃত্যুতে যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখেছিলেন তা আজও আমার কানে প্রতিধ্বনিত করে। তিনি বলেছিলেন, “আমি আমার বাগানের সেরা ফুলটিকে হারালাম। দাগনভূঞা কলেজ হারাল তার সেরা ছাত্রটিকে। এ মৃত্যুর কি কোন জবাব নেই?” আসলেই কোন জবাব নেই। এই দেশ, জাতি এই মৃত্যুর কোন জবাব দিতে পারবে না। দাগনভূঞায় জানাযা শেষে শহীদের কফিন নিয়ে যাওয়া হল তার গ্রামের বাড়ি বসুরহাট। সেখানেও ৩বার জানাযা শেষে জাকারিয়া ভাইদের পারিবারিক গোরস্থানে জনমের মত রেখে এলাম আমার প্রিয় ভাইটিকে। আসার সময় কোন গাড়ি পাচ্ছিলাম না। শহীদের বাড়ি থেকে তার মা, ভাইবোনদের গগনবিদারী কান্না হৃদয়টাকে খান খান করে দিচ্ছিল।

দাগনভূঞার এক পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে আমাদের এক কর্মী আমাকে তার মোটরসাইকেল দিয়ে বললেন, রহীম ভাই আপনি আমার গাড়ি নিয়ে যান, আমি দাগনভূঞা সাথী শাখা সভাপতি সোহেল ভাইসহ রাত ১১টায় শহীদের বাড়ি থেকে রওয়ানা হলাম। গাড়ি ড্রাইভ করতে পারছিলাম না। বার বার আনমনা হয়ে যাচ্ছিলাম। শাহাদাতের কয়েকদিন পূর্বেই তাঁর সাথী শপথ হয়েছিল। তার সাংগঠনিক সময় কম হওয়ার কারণে সাথী করাতে আমরা চাচ্ছিলাম না। এ বিষয়টা দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সে বলেছিল, “রহীম ভাই আমি কথা দিলাম শুধু সময় নয় আমার জীবনটাই সংগঠনের জন্য দিয়ে দিব তবুও আমাকে সাথী বানান। আমি এগিয়ে যাব।” সত্যিই যে সংগঠনের জন্য সে জীবনটাই দিয়ে দিবে তা কি তখন কল্পনা করেছিলাম? না করেনি সে এগিয়ে গিয়েছে অনেক অনেক দূর অত দূরে আমাদের অনেকেরই হয়ত যাওয়া হবে না। দুষ্কৃতিকারীরা কেড়ে নিয়েছে তার জীবন। ভেঙ্গে খানা খান করে দিয়েছে একটি পরিবারের স্বপ্নসাধ।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মুহাম্মদ গোলাম জাকারিয়া

পিতা

মরহুম আব্দুল খালেক মোল্লা

মাতা

কাফিয়া বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৪ ভাই ২ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম- শ্রীনদ্দী, পো- চান্দের হাট, থানা+জেলা- নোয়াখালী

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

আইসিএস পরীক্ষার্থী, ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজে, দাগনভূঞা, ফেনী

শাহাদাতের স্থান

শিবির মেস, দাগনভূঁইয়া, ফেনী


শহীদ মুহাম্মদ গোলাম জাকারিয়া

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ গোলাম জাকারিয়া


শহীদ মুহাম্মদ গোলাম জাকারিয়া

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ গোলাম জাকারিয়া