শহীদ মুহাম্মদ আখতারুল কবির

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ৩১ অক্টোবর ১৯৯৫ | ৭৭

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

৩১ মে অক্টোবর মঙ্গরবার সকাল ১০টা। সীমান্তবর্তী শার্শা থানার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাগআঁচড়া আফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে শান্তিপূর্ণপরিবেশে ক্লাস শুরু হয়েছিল। ক্যাম্পাসে ঝুলছিল ইসলামী আদর্শের পতাকাবাহী বাংলার একমাত্র আদর্শবাদী ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিেিবর একটি দাওয়াতি ব্যানার, যে ব্যানার টানানোর উদ্দেশ্য হলো, নবাগত ছাত্রছাত্রীদেরকে কালজয়ী আদর্শ ইসলামের দিকে আহ্বান করা।

এ ব্যানারে মাধ্যমে ইসলামী ছাত্রশিবিরে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীকে ডেকে বলছিল হে তরুণেরা আমরা তোমাদেরকে মহান আল্লাহর পথে ডাকছি। আমরা তোমাদেরক ডাকছি কালজয়ী সুমহান আদর্শ ইসলামের দিকে, আমরা ডাকছি আল কুরআন নির্দেশিত পথের দিকে। আমরা তোমাদের ডাকছি সন্ত্রাসনির্ভর নেতৃত্ব প্রত্যাখ্যান করে আল কুরআনের শাসন ও সৎলোকের নেতৃত্বে মেধার সুষ্ঠু ব্যবহার করে আদর্শ চরিত্রবান সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার কার্যকরী পথের দিকে। কিন্তু ইসলাম ও মানবতার শত্রু ছাত্রদল নামধারী খুনি দল খুনের নেশায় মত্ত রক্তপিপাসু সশস্ত্র গুণ্ডারা ইসলামের এ দাওয়াতকে মেনে নিতে পারেনি। তারা চায় না যে বাংলার তরুণ ছাত্রসমাজ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ ইসলামের দিকে ধাবিত হোক। তারা চায় না যে, আমাদের তরুণ ছাত্রসমাজ সন্ত্রাস নির্ভর ছাত্র, গুণ্ডাদের নেতৃত্বে প্রত্যাখ্যান করুক। কারণ তাতে তাদের সকল কিছু পন্ড হয়ে যাবে।

সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনা
ছাত্রদলের নেতৃত্বে বহিরাগত মাস্তানদের সাহায্যে রামদা, চাইনিজ কুড়াল, কাটা রাইফেল বোমাসহ মারাত্মক অস্ত্র শস্ত্র, নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত শিবিরে কর্মীদের উপর। যখম হয় শিবিরে থানা সভাপতি নজরুল ইসলামসহ ১০জন নেতা কর্মী। এ হামলার ফলশ্রুতিতে আত্মরক্ষার মানসে শত শহীদের উত্তরসূরি শিবিরে কর্মীরা নিরীহ ও শান্তিকামী ছাত্রদেরকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বিনষ্টকারী ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে যার ফলে সন্ত্রাসীচক্র পিছু হটতে বাধ্য হয়।

এ পরাজয়ের গ্লানি ঢাকবার জন্য এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চোরাকারবারি ও বহু মামলার পলাতক আসামিদের নিয়ে মোল্লা আব্দুর রাজ্জাক ও রফিক হাসানের নেতৃত্বে টুপি দাড়িধারী ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী বেশ কযেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। অগণিত বোমার বিস্ফোরণে ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে তারা সেদিন সীমান্তবর্তী বাগআঁচড়া বাজারে কায়েম করেছিল রাম রাজত্ব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জনগণের টাকায় লালিত পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতি এ ঘটনা সংঘটিত হলো তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে এবং নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিয়ে সুুস্থ মস্তিষ্কে সকল কিছু অবলোকন করে।

শহীদ আক্তার অন্যদের চোখে
কেমন ছিলো আক্তারুল কবির? সকলেরই এক জবাব, ভালো। কলেজে পড়েও যে দ্বীনদার মুত্তাকি বলতে যা বোঝায় যায় আক্তার তার সফল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। শহীদের সবচেয়ে কাছের মানুষ ৪ মাস আগের বিবাহিত স্ত্রী রুমা আকতার, বাল্যশিক্ষক সাইফুল ইসলাম, মসজিদের ইমাম নেছার আলী, শহীদের কলেজে অধ্যাপক শেখ ফজলুর হক, কৃষক রুহুল আমিনসহ এলাকার আবালবৃদ্ধবণিতা সকলেই আক্তারের আচার আচরণে মুগ্ধ আক্তার সম্পর্কে কিছু একটা জানতে চাইলে অশ্রুসজল চোখ হয়ে সবাই এক বাক্যে বললেন এমন ছেলে হয় না। কি এক যাদুর স্পর্শে সোনার মানুষের পরিণত হয়েছিল সে।

খুনিরা পিতা-মাতার শেষ শখটিও পূরণ করতে দিল না
পিতা-মাতার শেষ শখটি পূরণ করতে দিল না খুনিরা। একমাত্র মেয়ের অকাল মৃত্যুর পর তারা কলেজ পড়ুয়া ছেলে আক্তারকে বিয়ে দিয়ে মাত্র ৪ মাস আগে ঘরে পুত্রবধূ এনেছিলেন মেয়ের অভাব পূরণ করার জন্য। কিন্তু নতুন সংসারে পরিচিত হবার পূর্বেই তাকে হতে হলো বিধবা। একমাত্র মেয়ে হারা পিতা-মাতার শোকের পানি চোখ থেকে মুছতে না মুছতেই কানে এলো পুত্র হারাবার খবর। ছাত্রদলের জল্লাদ ও কসাই বাহিনীর এই নৃশংসতা প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে হতবাক করেছে।

শহীদ আক্তারুল কবীরের পিতা একজন সামান্য মুদি ব্যবসায়ী। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে পিতার ব্যবসা এবং পরিবারের বিভিন্ন কাজে নিয়মিত সাহায্য করতেন তিনি। ছোটবেলা থেকে আক্তার অত্যন্ত সৎ ও ধর্মভীরু বলে পরিচিত ছিল। শিবিরে যোগ দেওয়ার পর তার পুরো আচার আচরণে হয়ে ওঠে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। কলেজের ছাত্র হলেও তিনি কখনও নামাজ কাজা করেননি। ফজেরের আজান হলে ছুটে যেতেন মসজিদে। বাড়ির পাশের মসজিদে নিজে আজান দিতেন। আবার মুসল্লিদের অনুরোধে তাকে নামাজের ইমামতি করতে হতো।

ঘটনার দিন সকালে মারাত্মক অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিনের মত কুরআন হাদীস পড়তে ভুল করেননি। আক্তারের দাীনদারিত্ব ও অস্বাভাবিক গুণাবলী বারবার মনে করিয়ে দেয় শহীদের মর্যাদা একমাত্র আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি লাভ করে। শাহাদতের সময় দ্বীনের এই অকুতোভয় সৈনিক ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলেন।

একনজরে শহীদ পরিচিতি
নাম : মুহাম্মদ আক্তারুল কবির
পিতার নাম : মুহাম্মাদ আজগর আলী
মাতার নাম : মোছা. জোহরা খাতুন
স্ত্রী নাম : রুমা আক্তার
সাংগঠনিক মান : কর্মী

শিক্ষাজীবন
বাগআঁচড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে পাশ্ববর্তী বাগআঁচড়া হাইস্কুল থেকে ১৯৯৩ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর বাগআঁচড়া ডা. আফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে শুরু হয় তার কলেজ জীবন। শাহাদাতের আগ পর্যন্ত তিনি এ কলেজের নিয়মিত ছাত্র ছিলেন।
আহত হওয়ার স্থান : বাগআঁচড়া বাজার
আঘাতের ধরন : বোমা হামলা
যাদের আঘাতে নিহত : ছাত্রদল
শহীদ হওয়ার তারিখ : ৩১.১০.১৯৯৫
যে শাখার শহীদ : বাগআঁচড়া সাথী শাখা
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : বাগআঁচড়া পো: বাগআঁচড়া, থানা : শার্শা , জেলা : যশোর
ভাই ও বোন : ৪ ভাই ১ বোন
ভাইদের মাঝে অবস্থান : ১ম
ভাইবোনদরে মাঝে অবস্থান : ২য়

শাহাদাতের শহীদের পিতার প্রতিক্রিয়া
আক্তার দ্বীনের জন্য জীবন দিয়েছে। কিন্তু সে আল্লাহর এ জমিনে ইসলামী সমাজ দেখে যেতে পারেনি। তোমরা কি পারবে আক্তাতারের সেই স্বপ্ন সাধ পূরণ করতে? প্রশ্ন করেছেন শহীদ আক্তারের গর্বিত পিতা মুহ্ম্মাদ আজগর আলী ৫ নভেম্বর ১৯৯৫ বাগআঁচড়া প্রাইমারি স্কুল ময়দানে স্মরনাতীতকালের এক বৃহত্তম ছাত্রগণ জমায়েতে তিনি বক্তৃতা করছিলেন। অত্যন্ত আবেগ আপ্লুত ও দৃঢ় প্রত্যয়ভরা জিজ্ঞাসা সেদিন বাগআঁচড়ার আকাশে বাতাসে ধ্বনিতে প্রতিধ্বনিতে হয়েছিল। সাথে সাথে হাজার হাজার ছাত্র জনতা দু’হাত তুলে শহীদের পিতার প্রশ্নের জবাব দিয়েছিল নিশ্চয়ই আমরা আক্তারের ভাই, তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা নীরব হব না, নিস্তব্ধ হব না।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মুহাম্মদ আখতারুল কবির

পিতা

মুহাম্মদ আজগর আলী

মাতা

মোছাম্মাৎ জোহরা খাতুন

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৪ ভাই ১ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

বাগআঁচড়া, শার্শ, যশোর

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

বাগআঁচড়া ডাঃ আফিল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ

শাহাদাতের স্থান

বাগআঁচড়া বাজার


শহীদ মুহাম্মদ আখতারুল কবির

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ আখতারুল কবির


শহীদ মুহাম্মদ আখতারুল কবির

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ আখতারুল কবির