শহীদ এস. এম. কাউছার

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ০৭ মে ১৯৯৪ | ৬৭

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

“শেষ পর্যন্ত যখন তাকে শহীদ করে দেয়া হল তখন তাকে বলা হয়, ‘দাখিল হও জান্নাতে’। সে বলল, ‘হায় আমার জাতি যদি জানতে পারত কোন জিনিসের বিনিময়ে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং সম্মানীতদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।”
- (সুরা ইয়াসিন: ২৬,২৭)

পৃথিবীর ইতিহাস সত্য আর মিথ্যার দ্বন্দ্বের ইতিহাস। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত চলছে বাতিলের অত্যাচারের স্টিম রোলার। বাংলার এ সবুজ ভূখণ্ডেও বাতিলের চক্রান্ত থেমে নেই। বিশ্বের অপরাপর দেশের মত এদেশেও নব্য জাহিলিয়াত মাথাচাড়া দিয়েছে। নির্যাতনে নিষ্পেষিত করেছে তৌহিদী জনতাকে। সে নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন দীপ্ত প্রতিভার এক সাহসী তরুণ এস.এম. কাউছার। বিনয়ী ও অমায়িক ব্যবহারের প্রিয় ভাই কাউছার ছিলেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নির্বাচিত এ.জি.এস। ১৯৯৪ সালের ৩০ এপ্রিল ছাত্রদলের ঘাতকদের নির্মম আঘাতে আহত হয়ে ৭ মে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে তিনি চলে যান মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে।

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত বোয়ালখালী থানার সৈয়দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শিক্ষায় এই গ্রামটি অন্য গ্রামগুলো থেকে এগিয়ে। যার মূলে ছিল দু’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়। এই গ্রামের বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মকর্তা এস. এম. আবু জাফর তার পিতা। তিনি তাঁর পরিবারের সবাইকে একদিকে যেমন আধুনিক শিক্ষা দিতেন তেমনি দ্বীনি শিক্ষা দিয়ে সবাইকে নৈতিক দিক থেকে করেছিলেন বলিষ্ঠ। ৮/৯ সদস্যের বিশাল পরিবার। এই পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য এস.এম. কাউছার। একটি আদর্শ পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আদর যত্নের পরিমাণ তার প্রতি ছিল অনেক বেশি। চিন্তাহীন ভাবনাহীন কেটে যায় তার দিন। পাখি ধরে তাকে আদর করে খাওয়ানো ছিল তার শখ।

শিক্ষাজীবন
শিক্ষার উদ্দেশ্যে ভর্তি হলেন নিজ গ্রামের স্বনামধন্য সৈয়দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথম দিকে ফলাফল তত ভালো না হলেও শেষ দু’বছর তিনি এতটাই বদলে গেলেন যে, আজও সেই স্কুলের প্রবীণ শিক্ষকসহ দু’জন শিক্ষক তাকে আলাদাভাবে মনে রেখেছেন। সেখান থেকে পাস করে ভর্তি হলেন একই গ্রামের সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি পেলেন তিনি। একই স্কুল থেকে ১৯৯২ সালে এসএসসি পাস করেন কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে। তারপর ভর্তি হলেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। প্রথম থেকেই মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখলেন তিনি। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক পরিচিত মুখ এস. এম. কাউছারের সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা সবাইকে মুগ্ধ করতো। তার শ্রেণী পরীক্ষার ফলাফলও সবাইকে তাক লাগিয়েছিল। ইতোমধ্যেই তিনি সংগঠনের সাথী হন। পলিটেকনিকে তার একটি বছর অতিক্রম না করতেই তিনি এতটা সুপরিচিত হন যে, বিপুল ভোটে এজিএস নির্বাচিত হন। থাকতেন তিনি বাদুরতলার এক বাসায়, প্রতি সপ্তাহে মাকে দেখতে একবার করে বাড়ি যেতেন তিনি।

হায়েনাদের ছোবল থেকে রক্ষা পাননি শহীদ কাউছার
৩০ এপ্রিল ১৯৯৪ সাল। বরাবরের মত সেদিনও তিনি মাকে দেখে শহরে ফিরছিলেন। সন্ধ্যার সময় এসএম কাউছার যখন বাসায় ফিরছেন তখন তার মাথার ধারে কাছে এমন কোনো ঘটনার ইঙ্গিতও ছিল না। কিন্তু হায়েনারা অপেক্ষা করছিল রুদ্ধশ্বাসে। কাছাকাছি এলেই ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে কাউছারের উপর। কিছু বুঝে উঠার আগেই মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সুস্থ হয়েছেন ভেবে তিনি নিজে নিজেই চলে যান গ্রামের বাড়ি। সেখানে তিনি একদিন ভালোই থাকেন। কিন্তু সে ভাল যে ভাল ছিল না তা বুঝা গেল সন্ধ্যা থেকেই। মাথা ব্যথা, বমি ও রক্তক্ষরণ হতে থাকে অনবরত। দ্রুত তাকে শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ডা. পরামর্শ দিলেন তাকে মাদ্রাজে নেয়ার জন্য। সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।

তার বড় দুই ভাই দুবাই থেকে এক ঘন্টায় ব্যবস্থা করেছিলেন ২ লক্ষ টাকা। কিন্তু কাউছার তার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মহান আল্লাহর সাক্ষাতে যাওয়ার জন্য সন্ধ্যা ৬.০৫ মিনিটে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করলেন। শোক সাগরে ভাসিয়ে গেলেন তার সঙ্গীদের। বুক খালি হলো মা মমতাজ বেগমের। ভাই হারা হলো একমাত্র বোন লুৎফুন্নেছা। বিদেশ থেকে ভালো আছেন কিনা খোঁজ নিতে গিয়ে শাহাদাতের খবর পেলেন দুই ভাই। বিদেশ থেকে ফিরেই ভাইদের প্রশ্ন : কী অপরাধ করেছিল আমাদের ছোট ভাই কাউছার? কেন তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হলো। আমরা তার বিচার চাই। কিন্তু আজো হয়নি তাদের ভাই হত্যার বিচার। আইনের শাসন নিভৃতে কেঁদে চলেছে আজো। আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কাউছার হত্যার বিচার হবে, রক্তের বদলা হবে সকল শহীদের এই প্রত্যাশাই আজ শহীদের সাথীদের।

এক নজরে শহীদ এস.এম. কাউছার
নাম : এস. এম. কাউছার
পিতার নাম : এস. এম. জাফর
মাতার নাম : মমতাজ বেগম
ভাই বোন : ৭ ভাই, ১ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট
ঠিকানা : সৈয়দপুর, চাঁন্দের হাট, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম
আহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : ৩০ এপ্রিল ১৯৯৪, বাদুরতলা
শাহাদাতের তারিখ ও স্থান : ৭ মে, ১৯৯৪ সাল, নগরীর একটি ক্লিনিক
সাংগঠনিক মান : সাথী
শিক্ষাজীবন : যন্ত্রকৌশল বিভাগে ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ এস. এম. কাউছার

পিতা

এস এম জাফর

মাতা

মমতাজ বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৭ ভাই ১ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

সৈয়দপুর, চাঁন্দের হাট, বোয়ালখালী,চট্টগ্রাম

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

ইলেকট্রনিক্স, ২য় বর্ষ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

শাহাদাতের স্থান

বাদুরতলা, চট্টগ্রাম