শহীদ নুরুল আলম

১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৭ - ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪ | ৬৫

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

পৃথিবীর ইতিহাস সত্য এবং মিথ্যার দ্বন্দ্বের ইতিহাস। সেই সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বে সত্যের সৈনিক সেনানী শহীদ নুরুল আলম। সত্যের পথে চলতে গিয়ে তাকে ছাড়তে হয়েছিল নিজ গ্রাম। এরপর থেকে থামেনি তার পথচলা। নব্য জাহেলিয়াতের নরঘাতকদের নির্মম আঘাতে নিহত হতে হয়েছে শিবির কর্মী প্রিয় ভাই শহীদ নুরুল আলমকে। তিনি এখন আল্লাহর মেহমান আর আমাদের প্রেরণার উৎস।

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
চট্টগ্রাামের কিলিং জোন বলে খ্যাত ফটিকছড়ি থানার একট পরিচিত গ্রাম শাহনগর। শহীদের রক্তস্রোত বিধৌত এই থানা যেমন কোথাও পাহাড় আর কোথাও সমতল, মানুষের মনও তেমনি কোথাও কোমল কোথাও কঠোর নিষ্ঠুর বর্বর। কোথাও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মিলনমেলা, কোথাও বা আবার বাতিল শক্তির প্রচন্ড দাপট। বাতিল শক্তির কাছে প্রতিদিন মার খাচ্ছে নিরীহ বনি আদম, অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।

ফটিকছাড়ি যেন একটি মৃত্যুপুরী। আর মর্দে মুমিন বান্দাদের এক শহীদি ঈদগাহ। শহীদের রক্তে লাল হয়ে গেছে গোটা ময়দান। এই ময়দানের সবুজে ঘেরা শান্ত গ্রাম শাহনগর। প্রকৃতির এক অপূর্ব সমাবেশ এই গ্রামে। প্রতিদিন মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসে আজানের সুমধুর ধ্বনি। হাইয়া আলালা ফালাহ। অর্থাৎ কল্যাণের দিকে আসো। গ্রামের মানুষগুলো একথা বুঝেই যেন ইসলামের পথে একটি হয়েছিল। আহমদ জেবল হোসেন সওদাগর এই গ্রামেরই এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। তার ঘরে ১৯৬৭ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নিল ৪র্থ সন্তান মুহাম্মদ নুরুল আলম গোটা পরিবার যেন নূরে ভরে গেল।

শিক্ষাজীবন
ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলেন তিনি। ১৯৮৩ সালে নাজিরহাট কলিজিয়েট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নাজিরহাট ডিগ্রি কলেজ চট্টগ্রাম থেকে কৃতিত্বের সাথে এইএসসি পাস করেন। ১৯৮৮ সালে ফটিকছড়ি ডিগ্রি কলেজ থেকে বি.কম. শেষ করেন এবং ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমকম-এর ছাত্র ছিলেন। সবসময়ই তার মধ্যে জ্ঞান অর্জনের অদম্য স্পৃহা কাজ করত। ইসলামকে জানার জন্য মন ছিল ব্যাকুল ।

শাহাদাতের পেক্ষাপট
১৯৯৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পবিত্র রমজানের দিন। বড় জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করার জন্য তিনি রিকশাযোগে নগরীর সিরাজ-উদ-দৌলা রোড হয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে বহনকারী রিকশা যখন গুলজার বেগম স্কুলের কাছে পৌঁছালো তখন আগে থেকেই ওঁত পেতে থাকা সশস্ত্র ছাত্রদলের ক্যাডাররা তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি চালাতে লাগল। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই তিনি ঢলে পড়লেন মাটিতে। শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেলেন। জীবন দিয়ে তিনি মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে গেলেন। বেঁচে থাকতে ডায়েরির পাতায় যে কামনার কথা লিখে গেছেন তা আল্লাহ তায়ালা কবুল করেছেন।

জানাযা ও দাফন
সারা শহর শাহাদাতের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারা চট্টগ্রাম। পরের দিন সকল পত্রিকায় এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হয়। একই দিন (১৩ ফেব্র“য়ারি) চট্টগ্রাম জানাজার নামাজে ইমামতি করেন দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলনা সাঈদ আবু নোমান। গ্রামের বাড়িতে ২য় দফা জানাজা শেষে শাহনগর উত্তরপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

শহীদের স্মরণীয় বাণী
বাতিল শক্তিগুলোর আদর্শ দিয়ে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে প্রশাসনকে লেলিয়ে দিয়ে তাদের ঘরছাড়া করে। পরিবার থেকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হয় তাকে বাতিলের প্রতিরোধ করা থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু তিনি পরিবারকে এই বলে বুঝাতে সক্ষম হলেন বাবা তোমার আরও ছেলে সন্তান আছে আমার জীবনের বিনিময়ে যদি তারা সুখে থাকতে পারে, হাজার হাজার মানুষ যদি বাতিলে নির্যাতন থেকে বাঁচতে পারে তাহলে ক্ষতি কী? বাতিলের মোকাবেলায় কৌশলগত কারণে তিনি চট্টগ্রাম শহরে থাকেন।

শহীদদের কলম থেকে

কফিন
-নুরুল আলম

আমার কফিন চুমো খেয়ো মা
তোমার ঠোঁটের স্পর্শে হবে আমার পাপ মোচন
আমি তোমার অবাধ্য সেই দুষ্টু ছেলে
মোনাজাত করিও দুঁহাত তুলে
আমি চলে যাচ্ছি দুঃখ কি মা?
অসমাপ্ত কাজ একদিন শেষ হবেই
কেঁদো না মা, দুঃখিনী মা আমার
মুক্তি সূর্য একদিন উঠবেই।
আমার রক্তে শোধ একদিন হবেই
কফিন হয়ে আর কেউ আসবে না সেই দিন
তোমার কোলে
আমি আবার আসব সেই মহান বিপ্লবের দিনে
স্বাধীনতা হয়ে।

শহীদ নুরুল আলম ভাই নেই, আর আসবেও না, কিন্তু জীবন দিয়ে শিখিয়ে গেলেন কাপুরুষের মত বেঁচে লাভ নেই। জিহাদ করেই মরতে হবে। হে নুরুল আলম আমরাও নতুন করে শপথ নিলাম তোমার রেখে যাওয়া অপূর্ণ কাজ জীবনের বিনিময়ে হলেও উজ্জীবিত রাখবো। আল্লাহ তৌফিক দিন। হে আল্লাহ তুমি প্রিয় নুরুল আমিন ভাইকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যদায় ভূষিত কর। আমিন।

একনজরে শহীদ নুরুল আলম
নাম : নুরুল আলম
পিতার নাম : আহমদ জেবল হোসেন সওদাগার
সাংগঠনিক মান : কর্মী
সর্বশেষ পড়াশোনা : এমএসএস ১ম বর্ষ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : নাজির হাট কলেজিয়েট উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি এবং ফটিকছড়ি ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে এইচএসসি কৃতিত্বে সাথে পাস করেন।
চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৮৮ সালে বি কম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে এমকম পাস করেন।
শাহাদাতের তারিখে ও স্থান : ১২-০২-১৯৯৪, সিরাজউদ্দৌলা রোড, চন্দনপুর, চট্টগ্রাম।
আঘাতের ধরন : গুলি
যার আঘাতে নিহত : ছাত্রদল
যে শাখার শহীদ : চট্টগ্রাম : মহানগরী
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- শাহনগর, ডাকঘর- নাজিরহাট, থানা- ফটিকছড়ি, জেলা- চট্টগ্রাম।
ভাই বোন : ৫ ভাই ২ বোনের মাঝে তিনি ২য়।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ নুরুল আলম

পিতা

আহমদ জেবল হোসেন সওদাগর

জন্ম তারিখ

সেপ্টেম্বর ১৮, ১৯৬৭

ভাই বোন

৫ ভাই ২ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

শাহনগর, নাজিরহাট, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

এম কম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শাহাদাতের স্থান

সিরাজউদ্দৌলা রোড, চন্দনপুরা, চট্টগ্রাম