বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

অদম্য মেধাবীরা দেশের অমূল্য সম্পদ —শিবির সভাপতি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান বলেন, “অদম্য মেধাবীরা শত বাধা অতিক্রম করে নিজেদের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভালো ফল করেছে। তারা অসাধ্যকে সাধন করার উজ্জ্বল নজির স্থাপন করেছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে অদম্য মেধাবীরা দেশ, সমাজ ও পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তারা অবহেলার পাত্র নয়; বরং হার না মানা এই অদম্য মেধাবীরা দেশের অমূল্য সম্পদ।”

তিনি আজ ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে এস.এস.সি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত অদম্য মেধাবী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আয়োজনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শিবির সভাপতি বলেন, “নানা কারণে দেশের মানুষ আজ হতাশায় নিমজ্জিত। তবে বহু দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও মেধা-সম্পদে আমরা এগিয়ে। এদেশের শিক্ষার্থীরা বরাবরই মেধাবী, যা তারা বারবার বিভিন্ন পর্যায়ে ভালো ফললাভের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী দরিদ্রতার কাছে হার মেনে অসময়ে ঝরে যায়। আর প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে যারা অসাধারণ মেধার স্বাক্ষর রাখে প্রতিবন্ধকতার কারণে তাদের মেধাকে দেশের কল্যাণে কাজে লাগানো যায় না।
পরিচর্যার অভাবে এ মেধাবী শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত তাদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখলেও পরবর্তী সময়ে আর এগিয়ে যেতে পারে না। মেধাবীদের সঠিক পরিচর্যা করতে পারে রাষ্ট্র। পৃথিবীর সকল দেশেই অদম্য মেধাবীদের আলাদাভাবে মূল্যায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়। কিন্তু এদেশে তাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সরকার কখনো কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসেনি; অথচ তাদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে তারাই দেশ ও জাতির কল্যাণে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে তুলে ধরতে পারবে। এ অমূল্য সম্পদকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া চরম দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। এই অবস্থায় আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ববান হতে হবে। এসব অদম্য মেধাবীদের দিকে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। অদম্য মেধাবীরা যেন সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।”

তিনি সমবেত অদম্য মেধাবীদের উদ্দেশে বলেন, “তোমরা সকল শিক্ষার্থীর জন্য অনুকরণীয়। কেননা, তোমরা দেখিয়েছ কীভাবে প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে সামনে এগোতে হয়। খেয়াল করলে দেখবে, বাংলাদেশের সকল সমস্যার মূলে দুর্নীতি। তবে তোমারা মেধা ও সততার সমন্বয় করতে পারলে বাংলাদেশ একদিন সোনার বাংলায় পরিণত হবে। আমাদের বিশ্বাস, দৃঢ়তার সাথে পথ চলতে পারলে একদিন তোমরাই বাংলাদেশকে বদলে দেবে, ইনশাআল্লাহ। যে পথ তোমরা পাড়ি দিয়েছ, তাতেই তৃপ্ত হবার সুযোগ নেই। দেশকে ভালোবেসে নিজেদের ক্যারিয়ার গঠনে তোমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে। কষ্টে অর্জিত ফলাফলকে সফল করতে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন জরুরি। আর এক্ষেত্রে ছাত্রশিবিরের প্রতিদিনের ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ সিস্টেম অসাধারণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।”

মেধাবীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “ছাত্রশিবির এমন এক সমাজ গঠন করতে চায়, যে সমাজ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ! এই দ্বীন পূর্ণতা লাভ করবে, এমনকি ভ্রমণকারী সানআ থেকে হাজরা মাউত পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করবে; কিন্তু আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় পাবে না’।”

তিনি আরও বলেন, ছাত্রশিবির মেধাবীদের প্রিয় ঠিকানা । আমরা চাই তোমরা এই অর্জন ও মেধাকে যথাযথ বিকাশ ঘটিয়ে নিজেকে দেশ এবং জাতির জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলো। দেশ, জাতি, মানবতা ও সভ্যতার জন্য কল্যাণমূলক ভূমিকা পালন করো। ছাত্রশিবির অতীতেও অদম্য মেধাবীদের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে, ইনশাআল্লাহ।”

অনুষ্ঠানে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত অদম্য মেধাবীদের সংবর্ধনাস্বরূপ ক্রেস্ট প্রদানের পাশাপাশি নগদ অর্থ ও বই প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, ছাত্রশিবির প্রতিবছরই 'নানা প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে যারা মেধার স্বাক্ষর রাখেন' সেই অদম্য মেধাবীদের জন্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে অঞ্চল, শাখা ও বিভিন্ন পর্যায়ে সংবর্ধনার আয়োজন করে থাকে।