শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩

নতুন শিক্ষাক্রমে ইসলামী শিক্ষা উপেক্ষা এবং ইসলামবিরোধী বিষয় সংযুক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

নতুন প্রজন্মকে ইসলামবিমুখ করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে সরকার -ছাত্রশিবির

২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির বইয়ে ইসলামী শিক্ষা উপেক্ষা এবং ইসলামবিরোধী বিষয় সংযুক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইসলামী আদর্শ মুছে দিয়ে অশ্লীলতা, পৌত্তলিকতা শিক্ষা সংযুক্তির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে সরকার। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির বইয়ে ইসলামী শিক্ষা উপেক্ষা করে ইসলামবিরোধী বিষয় সংযুক্তি করেছে সরকার।

৬ষ্ঠ শ্রেণির ১০টি বইয়ের মধ্যে ৯টি বইয়েই অত্যন্ত সুকৌশলে ইসলামী বিশ্বাস, আদর্শ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অন্যদিকে পৌত্তলিকতা, অশ্লীলতা ও ইসলামবিরোধী ভিনদেশি কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরা হয়েছে। ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে চরম ইসলামবিরোধী, বিতর্কিত ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রত্যাখ্যাত ‘বিবর্তনবাদ’ সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এ বইয়ে অসংখ্য কল্পিত দেব-দেবীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি প্রকাশের মাধ্যমে পৌত্তলিকতা ও অশ্লীলতা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। বইটিতে উপমহাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে বিভিন্ন অর্জনে বিতর্কিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরলেও মুসলিমদের ত্যাগী ও ঐতিহাসিক ভূমিকাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

'বিজ্ঞান’ বইয়ে পৌরাণিক কাহিনি উল্লেখ করে বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বইটিতে ১১জন উলঙ্গ নারী-পুরুষের ছবি দিয়ে বিভিন্ন লজ্জাস্থানের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ বইয়ে বয়ঃসন্ধিকালের নির্লজ্জ বর্ণনা ও বিকৃত, অবাধ যৌনতার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। বইগুলোতে মুসলিম ও বাংলাদেশি সুস্থ সংস্কৃতি উপেক্ষা করে ভারতীয় ও পাশ্চাত্য নগ্ন সংস্কৃতিতে উৎসাহিত করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে সুকৌশলে উগ্র হিন্দুত্ববাদ প্রবেশ করানো হয়েছে। এ পাঠ্যপুস্তুক শুধু ইসলামবিরোধীই নয়; বরং সরাসরি ইতিহাস বিকৃত ও দেশের ওপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শামিল। মুসলমান দূরে থাক; কোন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষ এ বিকৃত, নির্লজ্জ, উদ্ভট, বানোয়াট, কল্পিত বিষয়ে পরিপূর্ণ পাঠ্যপুস্তক মেনে নিতে পারে না।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এর আগেও সরকার প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের চূড়ান্ত রূপরেখায় ধর্মশিক্ষা বাদ দিয়ে ইসলামবিদ্বেষী গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ সংযোজন করেছে। কোমলমতি মুসলমান শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজাতীয় সংস্কৃতি, ভিন্নধর্মীয় আচার-আচরণ ও কুসংস্কার-শিক্ষা সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। ইসলাম ধর্মবিষয়ক এবং মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক গল্প-রচনা ও কবিতাসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের প্রতি উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন রচনা, গল্প ও কবিতা একতরফাভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সরকার একদিকে ইসলাম শিক্ষাকে পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিচ্ছে অন্যদিকে বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে ধর্মহীন শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠান চালু করে আগামী প্রজন্মকে অধার্মিক, অনৈতিক ও পাপাচারে নিমজ্জিত নাগরিক তৈরির নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। ফলে দেশে সুদ-ঘুস, মদ-জুয়া, যিনা-ব্যভিচার, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, দুর্নীতি ও পাপাচার জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। দেশ ও ইসলামবিরোধী সরকারের এই আত্মঘাতী জাতি-বিনাশী সিদ্ধান্ত দেশের ধর্মপ্রাণ ছাত্র-জনতা কিছুতেই মেনে নেবে না।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন- ২০১০ সালে বিতর্কিত ইসলামবিমুখ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার পর থেকেই ধর্মহীন এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে দেশের আলেমসমাজ, বুদ্ধিজীবীবৃন্দ, রাজনৈতিক দলসমূহ, পেশাজীবী ও ইসলামপ্রিয় ছাত্র-জনতা। ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বিকল্প প্রস্তাবনাও সরকারের কাছে পেশ করা হয়। কিন্তু এসব দাবি ও সংশোধনীর প্রতি কোনো তোয়াক্কা না করে সরকার বিশেষ অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত রয়েছে। আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, ইসলামপ্রিয় ছাত্র-জনতা নাস্তিক্যবাদী এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেবে না। সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আবেগ-অনুভূতি, মতামত ও ন্যায়সংগত দাবিকে মূল্যায়ন করতে হবে। অন্যথায় জনদাবিকে অবমূল্যায়ন করার খেসরাত দিতে হবে। আমরা অবিলম্বে এ নীতিহীন সিদ্ধান্ত বাতিল করে ইসলামী মুল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষানীতি, শিক্ষা আইন ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।”