শহীদ মীর কাসেম আলী (রহ) : যে জীবন প্রেরণার!

মীর কাসেম আলী একটি জীবন, একটি ইতিহাস। তিনি আমাদের প্রিয় সংগঠন, পথহারা লাখো তরুণ-মেধাবীর ঠিকানা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রিয় প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর হাত ধরে এই প্রিয় কাফেলা ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কয়েকজন টগবগে তরুণ-যুবক নিয়ে যাত্রা শুরু করে। যারা জাহেলিয়াতের পাহাড়সম বাধা মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে আগামী দিনে দক্ষ, দেশপ্রেমিক ও খোদাভীরু নাগরিক উপহার দেয়ার লক্ষ্যে অবিরাম ছুটে চলছেন। সেই সৌভাগ্যবানদের অন্যতম তিনি।

এক আটাশের রক্ত শুকায়নি বহু ২৮ রক্তে লাল

বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম একটি দিন। বর্বরতম ঘটনার নির্মম দলিল। সেদিন এমন ন্যক্কারজনক নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছিল, বাংলাদেশের ইতিহাস যতদিন আলোচিত হবে ততদিন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরও আলোচনা হবে। রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার নৃশংসতার ঘটনাকে চাপা দিয়ে কিংবা অস্বীকার করে ইতিহাস রচনা করার সুযোগ কারো পক্ষে নেই। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার পটপরিবর্তন অনেকটাই হয়েছিল এই তান্ডবলীলার মাধ্যমে।

বদর দেখিনি, দেখেছি আটাশ অক্টোবর, দেখেছি আল্লাহর সাহায্য

আটাশে অক্টোবর ছিলো এক অসম নির্মম আক্রমন৷ জামাত- শিবিরের নিরীহ গুটিকয়েক নেতাকর্মীদের উপর সারাদেশ থেকে একত্রিত করা হাজার- হাজার অস্ত্রধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নারকীয় তান্ডব৷ সূত্রমতে ইন্ডিয়া থেকেও সন্ত্রাসী আমদানী করা হয়েছিলো,কারণ ঘটনাটি ছিলো পূর্বপরিকল্পিত৷ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী তাঁর কারাগারের স্মৃতি বইয়ে তুলে ধরেন আটাশে অক্টোবর ছিলো প্রি-প্ল্যান্ড৷ তিনি লিখেন " বেশ কিছুদিন আগে কানাডার আইনজিবী মিঃ স্লোন গোটা বাংলাদেশ ঘুরে কানাডা যাবার পথে নিউইয়র্ক সাংবাদিকদের বলেছিলেন 'মাইনাস টু ফর্মুলা' নাকি অনেক আগের এবং পূর্বপরিকল্পিত৷ আটাশে অক্টোবরের ঘটনাও নাকি চিল ঐ পরিকল্পনার অংশ৷ মওদূদ সাহেবকে এটা 2005 সালে একজন এমপি এবং একজন সম্পাদক বলেছিলেন৷"

রক্তভেজা ২৮ শে অক্টোবর

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানবতাবিরোধী অপরাধের তালিকা করলে তার শীর্ষেই থাকবে আওয়ামী সন্ত্রাসের ঘৃণ্য দলিল রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবরের নির্মমতার ইতিহাস। তৎকালিন সময়ে সদ্যবিদায়ী চারদলীয় জোট সরকারের বিদায়লগ্নে আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অস্ত্রধারী ক্যাডারদের প্রকাশ্য দিবালকে নৃশংসতা জাতির জীবনে এ রক্তভেজা ইতিহাসের জন্ম দিয়ে গেলো। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সন্ত্রাসী বাহিনী সেদিন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের উপর যে পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে ইতিহাসে তা নজিরবিহীন।

লক্ষ প্রাণে জোয়ার জাগায় শহীদ আব্দুল মালেক

ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৫ আগষ্ট ঐতিহাসিক একটি দিন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকালের সেরা মেধাবী ছাত্র আবদুল মালেকের শাহাদাত দিবস। এ বছর ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী হিসেবে ইসলামী শিক্ষা দিবস নামে দিনটিকে উদযাপন করবে এদেশের আপামর তৌহিদী ছাত্র-জনতা। দীর্ঘ ৪ যুগ পেরিয়ে আজও আমাদের চেতনায় নাড়া দিয়ে যায় মেধাবী ছাত্র আবদুল মালেকের শাহাদাত। আবদুল মালেকের শাহাদাতে শুধুমাত্র এদেশের জনগণের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়নি বরং বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তর থেকে বিবেকবান মানুষের কান্নার ধ্বনি শোকের আবহ তৈরি করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকালের সেরা এমন একজন মেধাবী ছাত্রের নির্মমভাবে শহীদ হওয়াকে কেউ সহজে মেনেও নিতে পারেনি। শহীদ আবদুল মালেকের শাহাদাতের ঘটনাটি ছিল বাম এবং ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্রের ফসল।

শহীদ আবদুল মালেক ইসলামী শিক্ষা-আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

শহীদ মালেক! সেতো কোনো ব্যক্তির নাম নয়, একটি আন্দোলনের নাম। যে নাম ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীর হৃদয়ের মণিকোঠায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা। যে নাম বিপ্লবী সুর সৃষ্টি করে, স্পন্দন জাগায় হৃদয়ে হৃদয়ে, স্বপ্ন জাগায় হাজারো যুবকের মনে। মালেক আজ পৃথিবীতে নেই, তবে উদ্ভাসিত হয়ে আছেন হাজারো নক্ষত্রের মাঝে।

ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের কিংবদন্তি মডেল শহীদ আবদুল মালেক

শহীদ আবদুল মালেক ভারতীয় উপমহাদেশের ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যার আলো ঠিকরে পড়েছে ইসলামী আন্দোলনের সকল কর্মীর অন্তরে। আজকে সবার কণ্ঠে ফেরে যাঁর নাম, দেশের আদর্শবাদী সংগ্রামী তরুণদের মনের মণিকোঠায় যাঁর স্থান, বাংলাদেশে যিনি ছাত্র-ইসলামী আন্দোলনের ইমাম, তিনি হলেন আমাদের সকলের প্রিয় শহীদ আবদুল মালেক। একটি উন্নত নৈতিক চরিত্রসম্পন্ন যুব-ছাত্রসমাজ ছাড়া একটি জাতির এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব

শহীদ বেশে ফিরে এলেন আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ শাহাদাত

দেখতে দেখতে ৪টি বছর পেরিয়ে গেল। সময় চলে যায় কিন্তু স্মৃতিগুলো বারবার হৃদয়ের অন্তরালে হানা দেয়। কিছুতেই ভুলে থাকা যায় না শহীদের স্মৃতিগুলো। আমি দায়িত্বশীল থাকাকালীন অবস্থায় অনেক ভাইকে শহীদ হতে দেখেছি। চোখের সামনে বাতিলের আঘাতে অসংখ্য ভাইয়ের আহত, পঙ্গুত্ব ও শাহাদাতের অনেক স্মৃতিই চোখের সামনে ভেসে আসে বার বার। তেমনি আমার জীবনে যার শাহাদাতের স্মৃতিগুলো বারবার ভেসে আসে সে আমার প্রিয় ভাই “শহীদ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ শাহাদাত”।

ইবনুল ইসলাম পারভেজ : সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ

আমরা জানি সকল মানুষই মরণশীল। শহীদেরা অন্যের চাইতে আরও নির্মমভাবে হাত-পা কর্তিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তারাও মৃত্যুর পর আর ফিরে আসেন না। তারা মরে না, তাদেরকে অন্য মৃতদের মধ্যে শামিল করা যায় না। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে একাধিকবার বলেছেন, “আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না।” (সূরা বাকারা : ১৫৪)

জান্নাতের বাগানে প্রস্ফুটিত একটি গোলাপ

সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব পৃথিবীর চিরন্তন ইতিহাস। মানুষ যখন অন্যায়, অত্যাচার আর অসত্যে নিমজ্জিত, শয়তান তার অনুসারীদের সাথে নিয়ে পৃথিবীতে শয়তানি শক্তির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ব্যস্ত; তখন আল্লাহ মানবজাতির কল্যাণে যুগে যুগে পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবী-রাসূল ও তাদের সঙ্গী-সাথী হিসেবে প্রেরণ করেছেন দ্বীনের জন্য জীবন উৎসর্গকারী মর্দে মুজাহিদ। নবী-রাসূলদের পর তাদের উত্তরাধিকারীরা এ দায়িত্ব পালনে ব্রত হন। তারা শয়তানি শক্তি নির্মূলের জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন, এমনকি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে সাক্ষী হয়ে আছেন।