শহীদ খুরশীদ আলম

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ | ৫

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে ফটিকছড়ি, নাজিরহাটের প্রতিটি মানুষ আজও আওয়ামী সন্ত্রাসের ভয়াবহতার কথা স্মরণ হলেই শিউরে ওঠেন। খুন, ডাকাতি, অপহরণ, নারীর সম্ভ্রমহানি, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড এই জনপদে ছিল নিত্যদিনের তুচ্ছ ঘটনা। শান্তির এই জনপদকে আওয়ামী সন্ত্রাস মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল। ছেলেহারা মা, ভাইহারা বোন, সন্তানহারা পিতার করুণ আহাজারি এই জনপদের আকাশ-বাতাসকে ভারী করে রেখেছে। ‘৮৫ থেকে ‘৯১ পর্যন্ত শুধু এ দু’এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবির ও জামায়াতের ১৭ জন নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। আর এ বাকশালী চক্রের সন্ত্রাসের শিকার হয়ে যিনি প্রথম শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন, তিনি হলেন শহীদ খুরশীদ আলম।

ব্যক্তিগত পরিচিতি
শহীদ খুরশীদ আলম চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার ধলই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ইসলাম মাস্টার এবং মা মরিয়ম খাতুন।

সেদিন যা ঘটেছিল
শাহাদাতের সময় শহীদ খুরশীদ আলম হাটহাজারী থানার কাটিরহাট মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। রেওয়াজ অনুযায়ী প্রত্যেক বছরের মতো সেবারও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) দিবসের মাহফিল আয়োজন করা হয়েছিল হাটহাজারী থানার ফরহাদাবাদ হাইস্কুল ময়দানে। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা আব্দুল জব্বার। কিন্তু সন্ত্রাস যাদের রক্তের সাথে মিশে আছে তাদের নিকট এ মাহফিল ছিল পীড়াদায়ক। পীর সাহেবও রক্ষা পেলেন না আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে। পীর সাহেব মাহফিলের উদ্দেশে চট্টগ্রাম শহর থেকে কাটিরহাটে পৌঁছলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গাড়ি থামিয়ে গতিরোধ করে। দুষ্কৃতকারীরা পীর সাহেবকে হত্যার চেষ্টা চালায়। আল্লাহর রহমতে লোকজনের হস্তক্ষেপে জীবনে রক্ষা পেয়ে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন তিনি।

শাহাদাতের ঘটনা
পীর সাহেবের রক্ষা পাওয়া মেনে নিতে পারেনি আওয়ামী-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। খুনের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তারা। সে সময় শিবিরকর্মী খুরশীদ আলম কাটিরহাট থেকে মনিয়া পুকুরস্থ বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। খুরশীদ আলমকে দেখে খুনের নেশা চেপে বসে সন্ত্রাসীদের মাথায়। হায়েনার দল কাপুরুষোচিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপর। উপর্যুপরি ছুরি ও লাঠির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয় নিরপরাধ খুরশীদের দেহকে। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন খুরশীদ। এতেও থেমে থাকেনি পাষণ্ডরা। নরপিশাচরা খুরশীদের জিহ্বা টেনে বের করে উল্লাসে মেতে উঠে। এমনকি খুনিচক্র তাঁর লজ্জাস্থান ইটের আঘাতে থেঁতলে দেয়। এরপর তাঁকে মৃত ভেবে রাস্তার পাশে জমিতে ফেলে রেখে সরে পড়ে। এলাকার লোকজন ছুটে এসে রক্তাক্ত নিস্তেজ খুরশীদকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ডাক্তাররা প্রাণপণ চেষ্টা করেন খুরশীদের জ্ঞান ফিরাবার। শিবিরকর্মীরা নিজেদের রক্ত দিয়ে প্রিয় ভাইটিকে বাঁচানোর জন্য ছুটে আসেন। কিন্তু না, ক্ষণিকের পৃথিবীর মায়া পেছনে ফেলে রাত ২টা ১৫ মিনিটে খুরশীদ পৌঁছে যান তাঁর প্রিয় রবের সান্নিধ্যে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

খুরশীদ আলম ভাই আর নেই। আর কোনোদিন তিনি আসবেন না এই পৃথিবীতে, কিন্তু থেমে থাকেনি খুনিরা। এরপর থেকে একের পর এক খুন করে চলছে উন্মাদের মতো। কিন্তু তারা জানে না খুরশীদ আলম যে পথের সূচনা করে গেলেন সে পথের পথিকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলবে এটাই স্বাভাবিক। খুন আর সন্ত্রাস সে গতিকে থামাতে পারবে না কখনো।

শহীদ খুরশীদ আলমের মায়ের বক্তব্য
‘আমার ছেলে নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও খুনিরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর একটাই অপরাধ ছিল- সে নামাজ পড়ত, রোজা রাখত, দ্বীনি ইলম শিক্ষা করত। আমি জানি না আমার ছেলের খুনিদের সঠিক বিচার দুনিয়ায় হবে কি না। কিন্তু কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সঠিক বিচার পাবই। আমি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, যেন খুনিদের হাতে আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’

এক নজরে শহীদ খুরশীদ আলম
নাম : মোহাম্মদ খুরশীদ আলম
পিতা : মো: ইসলাম মাস্টার
পরিবারের মোট সদস্য : ৭
সাংগঠনিক মান : কর্মী
সর্বশেষ পড়াশোনা : আলিম পরীক্ষার্থী
সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : কাটিরহাট এম. আই সিনিয়র মাদ্রাসা
জীবনের লক্ষ্য : জামায়াত-শিবিরকে ভালোবেসে, এ সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা
আহত হওয়ার স্থান : শাহাজাহান শাহের মাজার গেটের দক্ষিণে, সোনাইবুকল, বাদামতল, হাটহাজারী
আঘাতের ধরন : জিহ্বা কেটে ফেলা, দা, ছুরি, কিরিচ দিয়ে শরীরে বিভিন্ন অংশে মারাত্মক আঘাত
শাহাদাতের স্থান : কাটিরহাট
শাহাদাতের তারিখ ও সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৫; রাত ২টা ১০ মিনিট
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রসেনা, (সেনা ও ছাত্রলীগের তৈয়ব চক্র) যৌথভাবে
শাহাদাতের স্থান : চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ খুরশীদ আলম

পিতা

মোঃ ইসলাম মাস্টার

মাতা

মরিয়ম খাতুন

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম : ধলই, থানা : হাটহাজারী, জেলা : চট্টগ্রাম।

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

আলিম পরীক্ষার্থী, কাটিরহাট এম.আই সিনিয়র মাদ্রাসা

শাহাদাতের স্থান

কাটিরহাট, হাটহাজারী


শহীদ খুরশিদ আলম

ছবি অ্যালবাম: শহীদ খুরশিদ আলম


শহীদ খুরশিদ আলম

ছবি অ্যালবাম: শহীদ খুরশিদ আলম