শহীদ আলী আজগর খান লিমন

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ২৪ এপ্রিল ২০১৩ | ১৬৮

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

“খুব সকালে মা সালাতুল ফজর শেষে কুরআন পড়েন। কিছুক্ষণ পর লিমন এসে মাকে বলেন, আমাকে নাশতা তৈরি করে দাও আমি স্কুলে যাবো। মা বললেন, আজ হরতাল স্কুলে যেতে পারবি না। এ কথা বলে বাড়ির গেটে ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে চাবি চালের মটকায় লুকিয়ে রেখে নিশ্চিত হলেন। ... কিছুক্ষণ পর গেটের বাইরে জানালা দিয়ে মা মা বলে ডেকে চাবি রেখে বলল; আমি চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর মা চতুর্দিক থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনেন ... তার পর সব শেষ। লিমন হচ্ছে সৌদি প্রবাসী ধনী ব্যক্তির একমাত্র আদরের দুলাল। একমাত্র কন্যাসন্তান ছাড়া এই পৃথিবীতে হতভাগ্য পিতা-মাতার আর কেউ রইলো না। সাথে জানাযায় সমবেত জনতা কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং আহাজারি করতে থাকে, ইয়া আল্লাহ আর কত লাশ চাই এই জালেম সরকারের।”

শহীদের পরিচিতি
শহীদ আসগর আলী লিমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানার উপরাজারামপুর গ্রামে ২০০০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো: লোকমান হোসেন ও মাতা মোসা: আকলিমা বেগমের ২ সন্তানের মধ্যে একমাত্র পুত্র এবং ছোট সন্তান ছিলেন তিনি। পরিবারের ভরণ পোষণ ও সন্তানদের সচ্ছল জীবন যাপনের জন্য দীর্ঘদিন প্রবাসে কর্তরত শহীদের পিতা জনাব মো: লোকমান হোসেন। তিনি ১৯৯৩ সালে থেকে সৌদি আরবে থাকেন। রাজারামপুর হামিদিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র স্নেহধন্য সন্তান শহীদ আসগর আলী লিমনকে ঘিরে মায়ের স্বপ্ন ছিল, পড়ালেখা করে একদিন বড় কিছু হবে, তাদের দুঃখ কষ্ট মুছে দিবে। কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে সদা প্রস্তুত ছাত্রশিবিরের কর্মী শহীদ লিমন নিজের জীবন দিয়ে চলে গেলেন জান্নাতের পানে।

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন
২৪ এপ্রিল খুব সকালে মা সালাতুল ফজর শেষে কুরআন পড়েন। কিছুক্ষণ পর লিমন এসে মাকে বলেন, আমাকে নাশতা তৈরি করে দাও আমি স্কুলে যাবো। মা বললেন, আজ হরতাল, স্কুলে যেতে পারবি না। এ কথা বলে বাড়ির গেটে ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে চাবি চালের মটকায় লুকিয়ে রেখে নিশ্চিত হলেন। লিমন সকালে নাশতা না করেই বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর গেটের বাইরে জানালা দিয়ে মা মা বলে ডেকে চাবি রেখে বলল; আমি চলে গেলাম। মা সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে দেখলেন সে দ্রুত ছুটে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর মা চতুর্দিক থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনেন। এর পর সব শেষ।

সরকারি দলের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনীর নিত্য অত্যাচার নির্যাতনের শিকার গোটা রাজশাহী। কয়েক দিন আগে হঠাৎ র‌্যাব গ্রেফতার করে গুম করে ফেলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী মহানগরীর অফিস সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম মাসুমকে। মাসুম শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল ভাইয়ের আপন ছোট ভাই। ২৪ এপ্রিল ’১৩ আনোয়ারুল ইসলাম মাসুমের গুমের প্রতিবাদে সংগঠন হরতাল আহবান করে। এ হরতালের সমর্থনে দুপুর ১২টায় রাজশাহীর উপশহরের উপরাজারামপুর মোড়ে ছাত্রদের মিছিল শুরু হয়। সদা সক্রিয় মাসুম নারায়ে তাকবির শ্লোগানে মিছিলে যোগদান করেন। শ্লোগানে শ্লোগানে অন্য সাথীদের সাথে এগিয়ে চলেন লিমন। হঠাৎ বাধা দেয় পুলিশ। শুরু হয় সংঘর্ষ নির্বিচারে গুলি ছুড়ে পুলিশ। পুলিশের গুলি সরাসরি লিমনের গলা ভেদ করে অপর পাশে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে তিনি লুটিয়ে পড়েন। কেন্দ্রীয় সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। উল্লেখ্য, যে একই মিছিলে অংশগ্রহণকারী আপন খালাতো ভাই শিবিরের সদস্য মো: আবদুল কাদের ঘটনাটি বর্ণনা করেন। 

শহীদের আপনজনদের কথা
শহীদ লিমনের মামা বলেছেন, আমার ভাগ্নে শহীদ হয়েছেন। আর শহীদদের মরণ নেই বরং তারা জীবিত এবং রবের পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত। শহীদ লিমনের মা বলেছেন : আমি শহীদের মা হতে পেরে নিজে গর্ববোধ করছি।

ব্যক্তিগত প্রোফাইল
নাম : শহীদ আসগর আলী লিমন
জন্ম তারিখ ও বয়স : ২০০০ সাল। বয়স ১৩ বছর প্রায়। আহত হওয়ার তারিখ : ২৪.০৪.২০১৩, সময় বেলা ১১টা আনুমানিক
শাহাদাতের তারিখ : ২৪.০৪.৩০১৩ সময় দুপুর ১২টা আনুমানিক
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : উপরাজারামপুর, ইউনিয়ন ও ডাকঘর : উপরাজরামপুর, থানা : সদর, জেলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ
পিতা : মো: লোকমান হোসেন, সৌদি আরব প্রবাসী
মাতা : মোছা: আকলিমা বেগম, বয়স প্রায় ৪২ বছর, গৃহিণী
ভাইবোনের বিবরণ : শহীদ আসগর আলী লিমন, মোসা: লিপি বিবাহিতা, গৃহিণী

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আলী আজগর খান লিমন

পিতা

মো: লোকমান হোসেন

মাতা

মোছা: আকলিমা বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

২ ভাই-বোন তিনি ২য়

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম : উপরাজারামপুর, ইউনিয়ন ও ডাকঘর : উপরাজরামপুর, থানা : সদর, জেলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সর্বশেষ পড়ালেখা

রাজারামপুর হামিদিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর


শহীদ আলী আজগর খান লিমন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আলী আজগর খান লিমন


শহীদ আলী আজগর খান লিমন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আলী আজগর খান লিমন