বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০২২

জাবি’তে ছাত্রলীগের গেস্টরুম নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কর্তৃক নবীন শিক্ষার্থীদের ‘গেস্টরুম নির্যাতনের’ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমান বলেন, সরকার ও প্রশাসনের সরাসরি মদদে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসগুলোকে সন্ত্রাসের আখড়ায় পরিণত করেছে। শিক্ষার্থীদের হলগুলোকে টর্চার সেলে পরিণত করে সেগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।  সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চিহ্নিত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কর্তৃক নবীন শিক্ষার্থীদের অশ্রাব্য গালাগালি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের দৃশ্য দেশবাসীকে দেখতে হয়েছে। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী জায়েদ (মার্কেটিং, ৪৯তম ব্যাচ), আজিম সাকিব (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ৪৯তম ব্যাচ), রাসেল (মার্কেটিং, ৪৯তম ব্যাচ), রিজভী (৪৯তম ব্যাচ), লালন (ইংরেজি বিভাগ, ৪৯তম ব্যাচ), তানিম (পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স, ৪৯তম ব্যাচ) ও ইয়াসির মোহাম্মদ আমিনের (নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, ৪৯তম ব্যাচ) নেতৃত্বে নবীন ছাত্রদের ওপর এ পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। এভাবে প্রতিনিয়তই ঢাবি, বুয়েট, ঢামেকসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা গেস্টরুম নামক ছাত্রলীগের টর্চাস সেলে ভয়ংকর নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। বুয়েটে গেস্টরুম নামক টর্চার সেলে নিয়ে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে খুন করে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে। এ নৃশংস ঘটনার পর সারাদেশে ছাত্রলীগের প্রতি জনগণের ঘৃণা ও ধিক্কারের ঝড় উঠেছিল। সম্প্রতি ইডেন কলেজে সাধারণ ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগ নেত্রীদের নির্যাতন, মারামারি, অসভ্যতা, হল বাণিজ্য, অশ্রাব্য আচরণ জাতিকে লজ্জিত করেছে। এরপরও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা প্রতিটি ক্যাম্পাসে এমন বর্বর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। স্পষ্টভাবেই সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে। শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে যেতে বাধ্য করছে। এভাবে ক্যাম্পাসে নির্যাতন ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বরাবরই ছাত্রলীগের প্রতি নতজানু নীতি অবলম্বন করে যাচ্ছে। এ অসভ্য বর্বরতা কোনো সভ্য রাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র হতে পারে না।

নেতৃবৃন্দ বলেন, একজন শিক্ষার্থী সীমাহীন পরিশ্রম ও পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। অভিভাবকরা একবুক আশা নিয়ে সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। জাতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগামীর দেশ গড়ার কারিগর ও সভ্য মানুষ তৈরি হবে- এমনটিই প্রত্যাশা করে। কিন্তু ছাত্রলীগ নামক অমানুষদের সন্ত্রাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ মানুষ গড়ার স্থান নয়; বরং খুন, নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদক, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মের উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে- যা শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও জাতিকে শঙ্কিত করে তুলেছে। এ অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মেধাবী ছাত্রদের ভবিষ্যৎ, অভিভাবকদের স্বপ্ন ও জাতির প্রত্যাশাকে ছাত্রলীগ নামক দানবদের হাতে তুলে দেওয়া যায় না। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বর্বরতা থেকে ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। দায়িত্বজ্ঞানহীন, সন্ত্রাসের কাছে নতজানু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ব্যর্থতা এ জাতি আর দেখতে চায় না।
ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের জান-মাল রক্ষা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করার জন্য আমরা ছাত্রসমাজ ও সচেতন দেশাবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।