ইসলামে মিডিয়ার গুরুত্ব
মিডিয়াকে আমরা কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারি না। আমরা যারা ইসলামকে ভালোবাসি এবং ইসলামের প্রসার কামনা করি, তারা বর্তমান বাস্তবতায় মিডিয়ার প্রতি গুরুত্ব দিতে বাধ্য। বর্তমানে এমন মানুষ একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি টিভি দেখেন না বা রেডিও শোনেন না কিংবা খবরের কাগজ পড়েন না। মিডিয়া এখন আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ায়। এই ইন্টারনেটও একটি এ যুগের গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া। এ যুগে যে কোনো তথ্যের জন্য মানুষ ইন্টারনেটের শরণাপন্ন হচ্ছে। বহির্বিশ্বের সকল ছাত্র-ছাত্রী প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য ছুটে আসে ইন্টারনেটের দুয়ারে।
ইসলামের বিরুদ্ধ শক্তি এই মিডিয়াগুলোকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের বারোটা বাজিয়ে যাচ্ছে। মুসলিমদের মন-মানসে তাদের চিন্তা-চেতনা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আজকের মুসলিমরা কথা বলছে আল্লাহ-রাসূলদের দুশমনদের সুরে। এমনটি কিন্তু এমনি এমনি হচ্ছে না। হচ্ছে তাদের অব্যাহত চেষ্টা ও অবিরাম প্রচেষ্টার ফলে।
একটি রিপোর্টটি পড়লে আমার কথার গুরুত্ব বুঝতে পারবেন- ‘ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট যেসব ধর্মযাজক তাঁদের বাণী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি ধর্মযাজকদের ওয়েবসাইটে নিজস্ব ব্লগ খোলার নির্দেশ দিয়েছেন। পোপ ধর্মীয় বাণী প্রচারের জন্য এবং অন্য ধর্ম ও সংস্কৃতির লোকজনের সঙ্গে কথা বলার জন্য সম্ভব হলে সব মাল্টিমিডিয়া টুল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। পোপ বেনেডিক্ট এক বার্তায় বলেন, শুধু ই-মেইল ব্যবহার বা ওয়েব সার্ফ করাই যথেষ্ট নয়, নিজেদের প্রকাশ করা এবং নিজ নিজ সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ধর্মযাজকদের সব ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়েবে পোপের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে লক্ষ করা গেছে। ভিডিও ও ছবি আদান-প্রদান করার ওয়েবসাইট ইউটিউবে পোপের একটি নিজস্ব চ্যানেল রয়েছে। এই চ্যানেলের মাধ্যমে পোপ তাঁর ধর্মীয় বাণী প্রচার করেন।’ আলহামদুলিল্লাহ, যুগের এ প্রয়োজনকে সামনে রেখে অনেকেই এখন ইসলামী মিডিয়ার কথা ভাবছেন। অনেকে কাজও শুরু করেছেন। বাংলা ভাষায় ইসলাম প্রচার এবং ইসলামী জ্ঞান বিতরণে বেশকিছু ওয়েবসাইটও প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।
আগে পৃথিবীর অনেক দেশেই ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তারিত কোনো তথ্য পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হত। বর্তমানে এ অবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন মানুষ বাড়িতে বসে এমনকি নিজের খাস কামরায় শুয়েও অনায়াসে ইসলাম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে। আর মোবাইলে নেট সার্ভিস যোগ হওয়ায় তথ্য চলে এসেছে প্রযুক্তি সচেতন মানুষের হাতের মুঠোয়।
ইন্টারনেট কীভাবে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রাখছে তার ধারণা পাওয়া যায় ‘আল-সুন্নাহ’ নামক একটি ইসলামী সাইটের একজন দায়ীর বিবরণ থেকে। সাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বলেন,‘ইন্টারনেট চ্যাটে আমাকে নিউজিল্যান্ডের এক বন্ধু জানিয়েছেন, তিনি বছর তিনেক আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তার বাবা-মা এখনো এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
আমেরিকান তরুণী বোন জামিলা জানিয়েছেন, তিনিও ইসলাম গ্রহণ করেছেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি ইন্টারনেট থেকে ইসলামি বই-পুস্তক প্রিন্ট করে রাখেন। তারপর সাপ্তাহিক ছুটির দিন সেগুলো মনযোগ দিয়ে পড়েন। তিনি আমার কাছে অনেক ছাত্র ও গবেষকের পক্ষে মেইল করেন। আমি ইসলাম সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসার জবাব দেই।
আমি সর্বশেষ যে মেইলের জবাব দিয়েছি সেটা পাঠিয়েছেন ১৫ বছর বয়সী এক বৃটিশ তরুণ। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন মৃত্যুদণ্ডকে ইসলাম কোন দৃষ্টিতে দেখে? আমি আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের মেইলও পেয়েছি। তিনি আমার কাছে ইসলাম বিষয়ে অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন।’
বাংলাদেশে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ঘন্টা ভাড়া নিয়ে অনেকে ইসলামী প্রোগ্রাম চালু করেছেন। মাসিক, পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক অনেক ইসলামী ম্যাগাজিন থাকলেও ইসলামী কোনো দৈনিক নেই। ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল মাত্র দুয়েকটি খবরের কাগজ রয়েছে। সবচেয়ে দুঃখের কথা যে মাধ্যমটি সবার ঐক্যমতে ইসলামের সেবায় কাজে লাগানো যেতে পারে, সেই রেডিও নিয়ে ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণদের কাঙ্ক্ষিত তৎপরতা নেই। মোবাইলে এফএম রেডিও চালু হওয়ায় এখন এই প্রাচীন মাধ্যমটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একে আমাদের কাজে লাগানো দরকার।
শহরের প্রতিটি মোবাইলে এখন মানুষ রেডিও শোনে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে ইসলামের অমীয় বাণী পৌঁছাতে, ইসলামের আদর্শ তুলে ধরতে একটি এফএম রেডিও চালু এখন সময়ের দাবি।অবশ্য এ কথা ঠিক যে, ইসলাম প্রচারে মিডিয়া প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিযোগিতার বাজারে সুস্থ মানসিকতা নিয়ে টিকে থাকা অনেক কঠিন। সমাজের সারা দেহে যেখানে পচন ধরেছে, সেখানে ইসলামী মিডিয়ায় ভালো বিজ্ঞাপন পাওয়া যায় না।
সাধারণ মানুষ ইসলাম বিমুখতার দিকে ঝুঁকে পড়ায় ইসলামী মিডিয়ার প্রতি তাদের আগ্রহও কম। এটিও এক সমস্যা যে, মানুষ মন্দটাকেই বেশি পছন্দ করে, নেতিবাচক সংবাদের প্রতিই মানুষের যত আগ্রহ এবং অসুস্থ বিনোদনেই মানুষ বেশি মজে থাকতে চায়। এসব অজুহাত সত্য হলেও আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। আমাদের কাজ আমাদের করে যেতে হবে। মানুষের রুচি কিন্তু পরিবর্তনশীল। মানুষের রুচি বদলেছে যেমন সত্য তেমনি তাদের রুচি বদলানোর দায়িত্বও তো আমাদেরই নিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ إِنْ أُرِيدُ إِلَّا الْإِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ
‘যে কাজ থেকে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি, তোমাদের বিরোধিতা করে সে কাজটি আমি করতে চাই না। আমি আমার সাধ্যমত সংশোধন চাই।’
আলহামদুলিল্লাহ, মুসলমানদের হৃদয়ে এখনো ঈমানের প্রদীপ জ্বলছে। সবার অন্তরে এখনো কমবেশি আল্লাহ-রাসূলের ভালোবাসা রয়েছে। একদল লোক যদি তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়োগ করেন এবং সঠিক নেতৃত্ব তারা খুঁজে করতে পারেন, তবে এখনো মানুষের জন্য ইতিবাচক অনেক কিছু করা সম্ভব। মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা সম্ভব। আপনারা শুনলে খুশি হবেন, পাশ্চাত্য সমাজে এখন ইসলামের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।ইসলামী ব্যাংকিং, ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও ইসলামী মিডিয়া সেসব দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পরিবর্তিত এই বিশ্বব্যবস্থায় মিডিয়ার প্রতি আমাদেরও কিছু করণীয় রয়েছে।
বিশেষত যারা সমাজপতি, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি তাদের দায়িত্ব রয়েছে। সরকার ও রাষ্ট্রও এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না। মানুষের ভালোমন্দ জানতে হলে তাদের মিডিয়ার সাহায্য নিতে হবে। তারপর এগিয়ে যেতে হবে সমস্যাগ্রস্ত বিপন্ন মানুষের দিকে। পুঁজিপতিরা যেহেতু শুধু অর্থের পেছনে ছোটে, সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থের চেয়ে তাদের কাছে ব্যক্তি স্বার্থই বড়, তাই যারা সমাজের বুঝ ও বিবেকবান নাগরিক রয়েছেন তাদের দায়িত্ব সৎ ও ইসলামী মিডিয়ার দিকে সাহায্যের হাত প্রলম্বিত করা।
মিডিয়া পরিচালনা করতে প্রয়োজন অঢেল অর্থের। এ অর্থ সংগৃহীত হয় প্রধানত বিজ্ঞাপন থেকে। আর বিজ্ঞাপনদাতাদের আগ্রহ নীতিনৈতিকতাহীন ইসলাম বৈরি মিডিয়ার দিকে। ইসলামের পক্ষের মিডিয়ায় অশ্লীল বিজ্ঞাপন দিতে পারে না বলে ওসবকেই তারা বেছে নেয়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের যাদের অর্থ দিয়েছেন, প্রভাব-প্রতিপত্তি দিয়েছেন, তাদের উচিত নতুন নতুন ইসলামী মিডিয়া প্রতিষ্ঠায় পৃষ্ঠপোষকতা করা। যারা মানুষের মধ্যে সততা ও নীতি-নৈতিকতার প্রসারে বিরুদ্ধ ও প্রতিকূল পরিবেশেও কাজ করছে তাদেরকে আর্থিক ও নৈতিক সমর্থন যোগানো।
আমাদের সরকারও এ দায় এড়াতে পারে না। সরকার যেহেতু দেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি বাস্তবায়নে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে আর সুনাগরিক তৈরিতে এসব মিডিয়া অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তাই সরকারের কর্তব্য এদের সহযোগিতা দেয়া। সরকারি বিজ্ঞাপনই মিডিয়াগুলোর অস্তিত্বের অন্যতম স্তম্ভ। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে ক্ষমতা দেন তাঁর সৃষ্টি করা পৃথিবীতে তার বান্দাদের ওপর শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং সবাইকে এক আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য। নেতৃত্ব পাওয়ার সেই নেতৃত্বকে পরিচালিত করতে মানুষকে সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার পথে।
মুসলমান সারা পৃথিবীর কল্যাণের জন্য কাজ করবে। শুধু মুসলমান নয় একজন মুসলমান অমুসলিমদের জন্যও শুভ ও হীত কামনা করবে। দল-মত ও ধর্ম নির্বিশেষে আল্লাহর সকল বান্দাকে কল্যাণের পথে আহ্বান জানাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, النَّصِيحَةُ ينُ الد
‘দীন তথা ইসলাম হলো মানুষের কল্যাণকামিতা।’
অতএব সবার কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট হওয়া উচিত। সবার হীত চিন্তায় ব্যাকুল হওয়া উচিত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে তার দীনের কল্যাণে কাজ করার তাওফীক দান করুন। সবাইকে দুষ্ট মিডিয়ার মন্দ প্রভাব থেকে দূরে থাকার এবং সৎ মিডিয়া প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা রাখার তাওফীক দান করুন। আমীন।
সংশ্লিষ্ট
- দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদকের স্ত্রীর ইন্তেকালে ছাত্রশিবিরের শোকবার্তা
- অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের ইন্তেকালে ছাত্রশিবিরের শোকবার্তা
- মাওলানা আব্দুস সোবহানের ইন্তেকালে ছাত্রশিবিরের গভীর শোক
- ইবি'র দুই মেধাবী ছাত্র ওয়ালীউল্লাহ ও মুকাদ্দাসের সন্ধান দাবী করে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি
- শাইখুল হাদীস আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ এর ইন্তেকালে ছাত্রশিবিরের শোক
- জাতির প্রত্যাশা পূরণে সুদৃঢ় পথচলা অব্যাহত রাখতে হবে-আমীরে জামায়াত
- মেয়র প্রার্থী ইশরাকের সাথে শিবির নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ উল্লেখ করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও কিছু গণমাধ্যমের মিথ্যা খবরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ।
- ২০২০ সেশনের জন্য ছাত্রশিবিরের সেটআপ সম্পন্ন
- ডাকসু’র ভিপিসহ আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপর ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সন্ত্রাসীদের হামলা ও বর্বর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
- বিজয়ের স্বপ্ন পূরণে সমৃদ্ধ আগামীর পথে অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে-শিবির সভাপতি