শহীদ সাইজুদ্দীন

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১৮ জুলাই ১৯৯২ | ৪৭

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

১৮ই জুলাই ১৯৯২ ইতিহাসে কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এ দিন রাজধানীতে জামায়াতের জনসভা ফেরত কর্মীদের ওপর তথাকথিত ঘাতক ও দালাল নির্মূল কমিটি জল্লাদরা বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণ করে। এতে শিবির কর্মী মোহাম্মদ সাইজুদ্দীন (১৪) ও আতিকুর ইসলাম দুলালকে (২২) কাপুরুষোচিতভাবে হত্যা করেছিল তারা। এই ঘটনায় আহত ও বুলেটবিদ্ধ হয়েছিল আরো ৩৫ জন। সে ছিল এক নির্মম দৃশ্য!

পরিচিতি
শহীদ মোহাম্মদ সাইজুদ্দীন মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত মীরেশ্বরা গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল মান্নান বেপারীর আট সন্তানের মধ্যে সাইজুদ্দীন ছিলেন সবচেয়ে প্রিয়। মা রাবেয়া বেগম খুব ভালবেসে প্রিয় পুত্রকে আলেম বানানোর জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করান।

শাহাদাতের প্রেক্ষাপট
ঐ দিন ছিল জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর চত্বর জামায়াতে ইসলামী আহত ঐতিহাসিক জনসমাবেশ। স্মরণকালে বৃহত্তম এই সমাবেশে রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। দৈনিক বাংলা মোড় থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত এই বিশাল চত্বর লোকে লোকারণ্য ছিল। গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়ানোর পরও কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। যে এক অভাবনীয় দৃশ্য। মনে হয়েছিল রাজধানীতে মানুষের ঢল নেমেছে। স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পর দৈনিক বাংলা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত যেমন অসংখ্য লোকে ভরে গিয়েছিল এ দৃশ্য তাকেও তার মানায়। এর সাথে সাথে নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবর। গোলাম আযমের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরের ঘর ইত্যাদি গগণবিদারী শ্লোগান ফ্যাসিস্ট গণআদালতীদের ভিত কাঁপিয়ে তুলেছিল। তথাকথিত নির্মূল কমিটি জামায়াতের সমাবেশ পন্ড করার কুমতলবে উস্কানিমূলকভাবে পালা সমাবেশ আহ্বান করেছিল। সমাবেশে আসার সময় জনতার উপর বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে ককটেল নিক্ষেপ ও বোমা হামলা চালানো হয়। তারা চেয়েছিল যে কোনভাবে হাঙ্গামা বাধিয়া সমাবেশ পন্ড করে দেয়। কিন্তু সমাবেশে আগত ছাত্র জনতার পরম ধৈর্যের মুখে তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয় মাগরিবের পূর্বে। এ দিকে হাজারো ষড়যন্ত্রের মুখে জামায়াতের জনসমাবেশের ঐতিহাসিক সফলতা ও বিপুল সংখ্যক জনসমাগম দেখে ঘাতক কমিটির দুর্বৃত্তদের মাথা ঘোরপাক খেতে থাকে। দুর্বৃত্তরা খুনের নেশায় উন্মাদ বনে যায়।

শাহাদাতের ঘটনা
১৮ ই জুলাই ১৯৯২ সালে মাগরিব নামাজের পর ঢাকার আশপাশ থেকে আগত ছাত্র জনতা বাসে চড়ে পায়ে হেঁটে ফিরে যাচ্ছিল। মুন্সিগঞ্জ থেকে আগত জামায়াত শিবিরে কর্মীরা বাসে উঠার জন্য মতিঝিলের দিকে যাচ্ছিল। তাদের বাসটি রাখা ছিল জনতা ব্যাংক ও বাংলার বাণী পত্রিকার সম্মুখস্থ রাস্তায়। নির্মূল কমিটির ১৫/২০ জন সশস্ত্র খুনি পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতেছিল খুনের নেশায়। জামায়াত শিবির কর্মীরা যখন বাসে উঠছিল ঠিক তখন ঘাপটি মেরে থাকা দুর্বৃত্তরা বোমা হামলা ও স্টেনগানের ব্রাশফায়ার করে। মুহুর্তের মধ্যে বিস্তর এলাকা ধেুাঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ ও বোমার আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন শিবিরকর্মী সাইজুদ্দীন (১৪) ও আতিকুল ইসলাম দুলাল (২২) দুর্বৃত্তরা বোমা হামলা ও ব্রাশফায়ারে পর লাঠি রড. হকিস্টিক দিয়ে নির্দয়ভাবে পিটায়। দুর্বৃত্তচক্রের এই জঘন্য হামলায় অন্তত ৫০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে মনিরুজ্জামান মুন্না ও শাহ আলমের অবস্থা ছিল গুরুতর।

একনজরে শহীদ মোহাম্মদ সাইজুদ্দীন
নাম : মোহাম্মদ সাইজুদ্দিন
পিতা : মো. আব্দুল মান্নান বেপারী
মাতা : মুসাম্মাৎ রাবেয়া বেগম
ঠিকানা : গ্রাম-মীরেশ্বরা, ডাকঘর- পঞ্চশর, থানা+জেলা- মুন্সিগঞ্জ
ভাই বোন : ৬ ভাই ২ বোনের মাঝে তিনি ৩য়
শখ : খেলাধুলা ও দ্বীনের কাজ করা
শিক্ষাগত যোগ্যতা : ৫ম শ্রেণী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : পঞ্চশর দারুস সুন্নাত আলিম মাদরাসা
আঘাতের ধরন : ব্রাশ ফায়ারে বুক ও মাথা ঝাঁঝরা হয়ে যায়
শহীদ হওয়ার স্থান : শিল্পব্যাংক ভবনের সামনে, মতিঝিল
হামলাকারী : ঘাদানিক কমিটির সশস্ত্র গুণ্ডাদের হাতে
কততম শহীদ : ৪৭তম
শাহাদাতের তারিখ : ১৮ জুলাই ১৯৯২
সাংগঠনিক মান : কর্মী
শাখা : ঢাকা মহানগরী পূর্ব

শহীদের মায়ের প্রতিক্রিয়া
আমার অন্যসব ছেলেদের থেকে আলাদা ছিল সাইজুদ্দীন। সবার থেকে যে সবচেয়ে ভাল ছিল সে ছিল আমার সাইজ। তাই আল্লাহ আমার হৃদয়ের অতি-উজ্জ্বল রত্ন নিয়ে গেছেন। সে অন্যদের থেকে খুব কম কথা বলত। পড়ালেখার ক্ষেত্রে অনেক কষ্ট করেছে।

দায়িত্বশীলের প্রতিক্রিয়া
সাইজুদ্দীন ছিলেন আনুগত্যের উজ্জল নক্ষত্র। যেকোনো সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। দায়িত্ব দেওয়ার সাথে সাথে নিঃসংকোচে দায়িত্ব পালনে উদ্যত হতেন। একটি ঘটনা না বললেই নয়। একদিন ইফতার মাহফিলের জন্য কিছু জিনিসপত্র আনার জন্য তাকে পাঠানো হয়। তাকে বলা হয় রিক্সা নিয়ে জিনিসগুলো আনতে। কিন্তু রিক্সাওয়ালা ভাড়া বেশি চাওয়ার কারণে তিনি নিজেই মাথায় করে নিয়ে আসেন। তাঁর এমন দ্বীন-চিন্তায় অভিভূত হয়ে যাই আমরা। তিনি ছিলেন নিজ দায়িত্ব পালনে অনন্য দৃষ্টান্ত।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ সাইজুদ্দীন

পিতা

মোঃ আবদুল মান্নান ব্যাপারী

মাতা

মোছাম্মৎ রাবেয়া বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৬ ভাই ২ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

মীরেশ্বেরা, পঞ্চশর, মুন্সিগঞ্জ

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

৫ম শ্রেনী, পঞ্চশর দারুস সুন্নাত আলিম মাদরাসা

শাহাদাতের স্থান

শিল্পব্যংক ভবনের সামনে, মতিঝিল