শহীদ নজরুল করিম

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ০৪ জুন ১৯৯২ | ৪৪

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছায়াতলে এসে দ্বীনের জন্য শহীদ হয়ে যারা ধন্য হয়েছেন, তাদের মাঝে একজন হলেন নজরুল করিম। কিলিংজোন ফটিকছড়িতে মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আরেক নিষ্ঠুর হামলার শিকার ইসলামী ছাত্রশিবির কর্মী নজরুল করিম (২০)। ১৯৯২ সালের জুন মাসের ৫ তারিখে রাতের আঁধারে মুজিববাদী খুনিরা লজিংবাড়িতে গিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে নজরুল করিমকে।

প্রাথমিক পরিচয়
তিনি ফটিকছড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক অবস্থা ভালো ছিল না। তিনি ছিলেন গরিব পরিবারের মেধাবী ছাত্র। ১৯৮৬ সালে স্থানীয় শাহ নগর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ৪টি বিষয়ে লেটারসহ এসএসসি পাস করেন নজরুল। আর্থিক অনটনের কারণে দূরবর্তী কোনো কলেজে ভর্তি না হয়ে নারায়ণ হাট কলেজে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন।

শাহাদাতের ঘটনা
স্থানীয় হালদাকুল গ্রামে ফরিদ মাস্টারের বাড়িতে লজিং থেকে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন নজরুল করিম। প্রতিদিনের মতো ঘটনার সময়ও ছাত্রদের পড়াচ্ছিলেন এবং নিজেও পড়ছিলেন তখন রাত প্রায় সাড়ে ৮টা। এমন সময় মুজিববাদী গুণ্ডাবাহিনী শাহজাহান তৈয়ব চক্র বাড়িতে ঢুকে ব্রাশফায়ার করে দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন নজরুলকে দ্রুত নারায়নহাট স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। কিন্তু এর পূর্বেই তিনি জান্নাতের বাসিন্দা হয়ে যান। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। নজরুলের শরীরে ৫টি স্থানে বুলেট বিদ্ধ হয়। পরদিন সকাল ১০টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং লাশ চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়।

এই হত্যাকাণ্ডের মাত্র কয়েকদিন পূর্বেই আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা নাজিরহাট-ফটিকছড়িতে প্রকাশ্য জনসভায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের নির্দেশ দেন, ‘একটা একটা জামায়াত শিবির ধরে ধরে খতম করতে হবে।’ আওয়ামী লীগ নেত্রীর এই দায়িত্বহীন নির্দেশের পর ঘাতকরা নতুন করে হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে। এর পূর্বে দুর্বৃত্তরা হানা দিয়ে নারায়ণহাটে দোকানপাট লুট করে। এর কিছুদিন পূর্বে জনৈক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে এবং ১৭ দিন আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায়।

শহীদের দাফন
ময়নাতদন্তের জন্য ৫ জুন ১৯৯২ সালে লাশ দাফন করা যায়নি। ৬ জুন শনিবার ১০টায় লালদীঘি ময়দানে শহীদ নজরুলের জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহীদের লাশ গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ির শাহ নগরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুনরায় জানাযার পর লাশ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

প্রতিবাদ জ্ঞাপন
নজরুল করিম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। চট্টগ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে হত্যাকারীদের ধিক্কার জানিয়ে বিচার দাবি করে। ঠাকুরগাঁও এর শিবিরকর্মী ইকবাল হোসেনের মর্মান্তিক শাহাদাতের মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে নজরুলকে খুন করা হয়।

শিবিরের ৪৪তম শহীদ
শহীদ নজরুল করিম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪৪ তম শহীদ এবং নাজিরহাট ফটিকছড়ি মিলিয়ে নজরুল করিম সহ মোট ২১ জন শিবির কর্মীকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। আল্লাহর পথের দিকে মানুষকে আহবান করায় তাকে মাত্র ২০ বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করতে হয়।

একনজরে শহীদ নজরুল করিম
শহীদ : নজরুল করিম
পিতা : মরহুম শামসুল আলম
মাতা : মরহুমা আনোয়ারা বেগম
ঠিকানা : শাহ নগর, ফটিকছড়ি, জেলা : চট্টগ্রাম
ভাইবোনদের সংখ্যা : ৬ ভাই ৩ বোন
শহীদ অবস্থান: ৪৪তম
একাডেমিক যোগ্যতা : এইচএসসি পরীক্ষার্থী নারায়ণহাট কলেজ
সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : নারায়ণহাট আদর্শ ডিগ্রি কলেজ
সাংগঠনিক মান : কর্মী
ঘটনার বিস্তারিত : নারায়ণহাট ফরিদ মাস্টারের বাড়িতে লজিং ছাত্র পড়ানোর সময় জানালা দিয়ে গুলি করে।
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রলীগ
আহত হওয়ার তারিখ : ০৫-০৬-১৯৯২ রাত ৮টা
কবর যেখানে : পারিবারিক গোরস্থান
যে শাখার শহীদ : চট্টগ্রাম জেলা পূর্ব।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ নজরুল করিম

পিতা

শামসুল আলম

মাতা

আনোয়ারা বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৬ ভাই ৩ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

শাহনগর, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

নারায়নহাট আদর্শ ডিগ্রী কলেজ

শাহাদাতের স্থান

নারায়নহাট