শহীদ এ. কে. এম. গোলাম ফারুক

০৯ জানুয়ারি ১৯৭০ - ২০ জুলাই ১৯৯১ | ৪১

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না, এসব লোক প্রকৃতপক্ষে জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পার না।’ (সূরা আল বাক্বারা : আয়াত - ১৫৪)

আমাদের এই ছাত্রশিবির আল কুরআনের বাণীতে স্নাত ও উজ্জীবিত। তাইতো দ্বীনি আন্দোলনের কাফেলায় এসে আমাদের অনেক ভাইকে হারিয়েছি। পেয়েছি শাশ্বত সত্যের আলোয় রক্তস্নাত কফেলার উপাধি। যাক যত রক্ত, উপরোক্ত বাণীই আমাদের প্রেরণার উৎস। কাচের পূর্ণ আস্তীর্ণ পথে যেমন হাঁটতে গেলে এক পা ফেলতে না ফেলতেই সাদা কাচের টুকরা লাল হয়ে যায়; তেমনি এ ছাত্রশবির যেদিন থেকে হাঁটা শুরু করেছে সেদিন থেকে তাঁর আপাদমস্তক রক্ত ঝরছে প্রতিনিয়ত। এই বাস্তবতায় ইসলামবিদ্বেষী হায়েনার থাবায় শহীদ গোলাম ফারুকের রক্ত এক স্রোতস্বিনীর আকার ধারণ করেছিল।

পূর্ণ নাম এ কে এম গোলাম ফারুক। বরিশালে বাকেরগঞ্জ উপজেলার ঘরপাশা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত কৃষক আবুল কাসেম হাওলদারের গৃহে জন্ম নেয় তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী গোলাম ফারুক। তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি হন, বড় ডাক্তার হয়ে মানুষকে সেবা করবেন এই স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসীরা তাঁর সে স্বপ্নকে অঙ্কুরেই নির্মূল করে দেয়। ভেঙ্গে ফেলে তার আশার প্রাচীর।

১৭ জুলাই ১৯৯১ সাল। প্রতিদিনের মতোই নতুন আভাস নিয়ে সূর্য তার দীপ্তি ছড়িয়ে আঁধারকে আলোকিত করে বয়ে আনে এক শুভ সকাল। নতুন প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাস নবীনদের পদাচারণায় মুখরিত। আর ২য় বর্ষের ছাত্র গোলাম ফারুক তার সহপাঠীদের নিয়ে ব্যস্ত ডিসেকশন হলে। শরীর ব্যবচ্ছেদ করে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য ছাত্রছাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছে মৃতদেহের চারপাশে। তখন কে জানত আজই ফারুকের সাথে তাদের শেষ ক্লাস। গুপ্ত ঘাতকদের হায়েনার মরণ ছোবল তাকে কুরে কুরে নিঃশেষ করে নিয়ে যাবে মৃত্যুর হিম শীতল কুঠুরিতে?

শুধু ইসলামী আন্দোলন করার অপরাধেই আওয়ামী লীগের ছাত্র নমাধারী গুণ্ডা কর্মীরা তাকে সকল ছাত্রছাত্রীর সামনে অপমান করে। এরাই ক্লাসে, খেলার মাঠে, ডাইনিং হলে সামান্য বিষয় নিয়ে মারামারির সুত্রপাত ঘটাত। সেদিন গোলাম ফারুক অপমানের প্রতিবাদ করতে গেলে হায়েনার মত চড়াও হয় মারার পরিকল্পনা নিয়ে। ঘটনার দিন উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্লাসেই তর্ক-বিতর্ক শুরু করে। এক পর্যায়ে শিশির কুমারসহ ৭/৮ জন ছাত্রলীগ কর্মী প্রাকটিক্যাল ক্লাসেই ফারুকের উপর আক্রমণ চালায়। উপস্থিত ছাত্র-শিক্ষক হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও পারেনি। ডিসেকশন কক্ষের একপাশে নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে দুবৃর্ত্তরা ফারুকের প্রতি টুল নিক্ষেপ করলে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান। ফলে জরুরিভাবে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সবাই ভেবেছিল আবার বেঁচে উঠবেন তিনি, সুষ্ঠুভাবে চলাফেরা করবেন। কিন্তু না এভাবেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। এ যেন হৃদয়ের ভেতর থেকে অবিরত ধারা কোনক্রমেই বন্ধ হতে চায় না। মাথায় আঘাত পাওয়ায় মস্তিষ্কেও রক্তক্ষরণ হয়েছে। রক্ত দেয়ার জন্য অনেকেই ভিড় করেছিল সেদিন। গোলাম ফারুককে ফিরে পাবার আশায় অনেকেই রক্ত দিলো। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় ১৯ তারিখ রাত থেকে শুরু হয় খিচুনি ও শ্বাসকষ্ট। ডাক্তারদের প্রচেষ্টা, সতীর্থদের দোয়া, কর্মীদের অক্লান্ত সেবা সবকিছুকে পিছনে রেখে, দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে ২০ তারিখ রাত ৩ টায় শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন তিনি। প্রীতিডোরে বাঁধা কর্মীদের রক্ত না নিয়ে বরং তার রক্ত ইসলামের পথে ঢেলে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার উত্তপ্ত রাস্তাকে শীতল করার প্রয়াস পেয়েছেন।

একনজরে শহীদ এ. কে. এম. গোলাম ফারুক
নাম : এ. কে. এম. গোলাম ফারুক
পিতার নাম : মৃত আবুল কাশেম হাওলাদার
মাতার নাম : মুসাম্মাৎ রাহিমা বেগম
ঠিকানা : গ্রাম- ঘরপাশা, পো: ছোট কৃষ্ণকাঠী, থানা- বাকেরগঞ্জ, জেলা - বরিশাল
পরিবারে ভাই-বোন সংখ্যা : ৫ ভাই বোন
একাডেমিক যোগ্যতা : বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন
সাংগঠনিক মান ও দায়িত্বসমূহ : কর্মী
জন্মতারিখ ও স্থান : ৯ জানুয়ারি ১৯৭০ সাল, ছোটকৃষ্ণকাঠী, পাদ্রিশিবপুর, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল।
আহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : ১৭.০৭.১৯৯১, বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ
যাদের আঘাতে শহীদ : মুজিববাদী ছাত্রলীগ
শাহাদাতের তারিখ ও স্থান : ২০ জুলাই ১৯৯১ সালে শহীদ হন।
কবরস্থান যেখানে : নিজবাড়ি
যে শাখার শহীদ : বরিশাল মহানগরী
শহীদের শখ : বই পড়া ও এলাকার রোগীদের সেবা করা
আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী বা প্রত্যক্ষ দর্শীর প্রতিক্রিয়া :
“ছিঁড়ে যাক পাল ভেঙে যাক হাল আসুক তমসা ঘোর সপ্ত-সিন্ধু পাড়ি দিয়ে তবু আনতেই হবে নতুন ভোর”।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ এ. কে. এম. গোলাম ফারুক

পিতা

আবুল কাশেম হাওলাদার

মাতা

মুসাম্মাৎ রহিমা বেগম

জন্ম তারিখ

জানুয়ারি ৯, ১৯৭০

ভাই বোন

৫ ভাইবোন

স্থায়ী ঠিকানা

ঘরপাশা, ছোট কৃষ্ণকাঠী, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

এম বি বি এস, ২য় বর্ষ, বরিশাল মেডিকেল কলেজ

শাহাদাতের স্থান

বরিশাল মেডিকেল কলেজ