শহীদ শিহাব উদ্দিন

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১৬ জুন ১৯৮৯ | ৩১

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

আলেমে দ্বীন হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন শহীদ শিহাব উদ্দিন। আর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে চেয়েছিলেন সমাজকে। কিন্তু আঁধারের সাথে যাদের মিতালি, আঁধারকেই তারা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। আঁধারের বুক চিরে সোনালি সকালের আগমন তাদেরকে খুব পীড়া দেয়। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তারা চায় আঁধারের রাজত্ব ধরে রাখতে। সন্ত্রাসী, রক্তপিপাসু ছাত্রলীগের নিকট তেমনি পছন্দ নয় রাজনীতিতে সন্ত্রাসীদের পরিবর্তে মেধাবীদের আগমন ঘটুক। এ কারণেই তারা মেধাবীনির্ভর বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে। তাদের সন্ত্রাসের এক করুণ শিকার শহীদ শিহাব উদ্দিন।

ব্যক্তিগত পরিচয়
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানাধীন ঘড়িহান গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা হাশমত উল্লাহর চতুর্থ সন্তান শিহাব উদ্দিন। মায়ের নাম তফুনের নেছা। শহীদ শিহাব উদ্দিন ছিলেন ৫ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে চতুর্থ। মাওলানা হাশমত উল্লাহ ছিলেন মাছিমপুর ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। শহীদ শিহাবুদ্দিনের শাহাদাতের মাত্র ৪ বছর পরে তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন।

শিক্ষাজীবন
শহীদ শিহাব উদ্দিন শোল্লা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তারপর এসে ভর্তি হন মাছিমপুর ফাজিল মাদ্রাসায়। এখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ফাজিল পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। কামিল ভর্তি হন চট্টগ্রাম নাজিরহাট আলিয়া মাদ্রাসায়। অল্প কিছুদিন পরেই কামিল পরীক্ষা। বাড়ি থেকে পরীক্ষা দেয়ার জন্য নাজিরহাটে চলে আসেন। কিন্তু হায়েনাদের আঘাতে তিনি আর পরীক্ষা দিতে পারলেন না। তবে সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় ঠিকই তিনি উত্তীর্ণ হয়ে গেলেন। আর সে কারণেই আল্লাহর পথে জীবন বিলিয়ে শাহাদাতের সর্বোত্তম নজরানা পেশ করলেন। শাহাদাতবরণের আগে শিহাব উদ্দিন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম জেলা পূর্ব শাখার কর্মী ছিলেন।

যেভাবে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করলেন শিহাব উদ্দিন
১৯৮৯ সালের ১৫ জুন। তখন রাত প্রায় ৯টা। শিহাব উদ্দিন একটু আগেই জামায়াতের সাথে এশার নামাজ আদায় করেছেন। এবার রাতের খাওয়া সারার জন্য নাজিরহাট বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। বাজারে যাওয়ার পথেই তিনি সন্ত্রাসের কারিগর ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কবলে পড়লেন। শিহাব উদ্দিনকে দেখামাত্রই পাষণ্ডরা পেছন থেকে গুলিবর্ষণ করে। শিহাব উদ্দিন আত্মরক্ষার জন্য দৌড়ে একটি হোটেলে ঢুকে পড়েন। তবুও তিনি রক্ষা পাননি দুর্বৃত্তচক্রের কবল থেকে। হায়েনারা হোটেলে ঢুকেই খুনের উন্মাদনায় কাটা রাইফেল দিয়ে ঝাঁঝরা করে দেয় শিহাব উদ্দিনের বুক। ঘটনাস্থলে আমাদের প্রিয় ভাইটি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন)।

জানাজা ও দাফন
শিহাব উদ্দিনের শাহাদাতের পরদিন ১৬ জুন অসংখ্য মানুষ সমবেত হয়ে শহীদের জানাজা নামাজ আদায় করেন। জানাজা শেষে শহীদের সাথীরা লাশ নিয়ে রওয়ানা হন চাঁদপুরের উদ্দেশে। ঐদিন রাতে শহীদের লাশ ফরিদগঞ্জ থানার মোল্লাগ্রামের নিজ বাড়িতে পৌঁছে। সেখানে শহীদের আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। পরদিন ১৭ জুন সকাল ১০টায় পুনরায় জানাজার নামাজ শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সেই ‘মা’ ডাক এখনো মনে পড়ে
শহীদ শিহাব উদ্দিন তাঁর মাকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন। যখন তাঁর মাকে দেখতেন না তখন অনেকটা পাগলপারা হয়ে পড়তেন। তাঁর মা বলেন, ‘আজো তাঁর ‘মা’ ডাক আমার মনে পড়ে। মনে হয় কে যেন দূর থেকে ‘মা’ বলে ডাকছে।’ তাঁর মা যখন একটি ডিম ভেজে দিতেন তখন নিজে পুরো অংশ না খেয়ে মায়ের জন্য অর্ধেক রেখে দিতেন। এই ছিল তাঁর মায়ের প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টান্ত।

একনজরে শহীদ শিহাব উদ্দিন
নাম : শিহাব উদ্দিন
পিতার নাম : মাওলানা হাশমত উল্লাহ
মাতার নাম : তফুনের নেছা
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- ঘড়িহান, থানা- ফরিদগঞ্জ, জেলা- চাঁদপুর
সাংগঠনিক শাখা : চট্টগ্রাম জেলা পূর্ব
সাংগঠনিক মান : কর্মী
শাহাদাতের তারিখ : ১৬ জুন, ১৯৮৯
শাহাদাতের স্থান : নাজিরহাট আলিয়া মাদ্রাসা
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রলীগ
আঘাতের ধরন : ব্রাশফায়ার
ভাই-বোন : ৯ জন (৫ ভাই, ৪ বোন)
সর্বশেষ পড়াশোনা : কামিল পরীক্ষার্থী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : নাজিরহাট আলিয়া মাদ্রাসা

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ শিহাব উদ্দিন

পিতা

মাওলানা হাশমত উল্লাহ

মাতা

তফুনের নেছা

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৫ ভাই ৪ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রামঃ ঘড়িহান, থানা- ফরিদগঞ্জ, জিলা- চাঁদপুর

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

কামিল, নাজিরহাট আলিয়া মাদ্রাসা

শাহাদাতের স্থান

নাজিরহাট আলিয়া মাদ্রাসা