শহীদ আমীর হোসাইন

০১ জানুয়ারি ১৯৬৯ - ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ | ১৬

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার নিভৃত গ্রাম ভাটিরটেক-এ ১৯৬৯ সালে জন্মগ্রগ্রহণ করেন শহীদ আমীর হোসাইন। তাঁর মায়ের নাম মোসাম্মৎ খায়রুন্নেছা এবং বাবার নাম মো: মোয়াজ্জেম হোসেন।

শিক্ষাজীবন
তিনি নোয়াখালীর স্বাধীন গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। শাহাদাতের সময় চট্টগ্রামের রেলওয়ে কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। শাহাদাতকালে তাঁর হাতে দশম শ্রেণীর অঙ্ক বই ও খাতা ছিল যা তাঁর রক্তাক্ত দেহের পাশে পড়ে ছিল। শিক্ষকের বাসায় পড়াশোনা শেষ করেই তিনি মিছিলে গিয়েছিলেন, যে মিছিল হলো তাঁর শহীদি কাফেলায় নাম লেখানোর মিছিল।

শাহাদাত
১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭। স্বৈরাচারী শাসক এরশাদের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর শিকার হয়েছিলেন ইসলামী আন্দোলনের দুই কিশোর কর্মী, ১০ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র শিবিরকর্মী শহীদ আমীর হোসাইন এবং আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র শহীদ হাফেজ মুহাম্মদ আব্দুর রহীম। ওই বছরেরই ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পটিয়ায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতীয় ছাত্রসমাজের হামলার প্রতিবাদে এবং সেই হামলায় শহীদ জাফর জাহাঙ্গীর ও বাকীউল্লাহর হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে সেদিন চট্টগ্রামে হরতাল আহ্বান করে শিবির। হরতাল শেষে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল চত্বরে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশ শেষে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। লালদিঘীর উদ্দেশে মিছিলটি যখন জেনারেল হাসপাতাল অতিক্রম করছিল ঠিক তখন হাসপাতালের পাহাড় ও পাশের ভবন থেকে একের পর এক ১২টি পেট্টলবোমা নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীরা, একই সাথে নির্বিচার গুলি চালায়। বোমার ধোঁয়ায় পুরো এলাকা ঢেকে যায়। হামলার আকস্মিকতায় শিবিরকর্মীরা প্রথমে একটু বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও পরক্ষণে সুসংগঠিত হয়ে হামলাকারীদের প্রতিহত করে। এরই মধ্যে দেখা যায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন রাস্তায় আল্লাহর এক প্রিয় মানুষের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। মোহাম্মদ আমীর হোসাইন শহীদ হয়েছেন। বোমা ও গুলির আঘাতে শহীদের শরীরের অনেকাংশ উড়ে গেছে, বাকিটাও আঘাতে আঘাতে জর্জরিত; শহীদের রক্তে রাস্তার কালো পিচ লাল হয়ে আছে। মিছিলের সঙ্গীরা তাঁকে খুঁজে পাওয়ার কিছু পরেই আল্লাহর কাছে চলে গেলেন তিনি।

ওদিকে সারা শহরে খবর ছড়িয়ে গেল আহত ভাইদের জন্য রক্ত প্রয়োজন। মেডিকেল কলেজ চত্বরে দলে দলে ছুটে আসতে লাগলেন শিবিরকর্মীরা। ব্লাড ব্যাংকে প্রচণ্ড ভিড়। ‘আমি আগে, আমি আগে’ বলে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানির অধীর আগ্রহ ব্যক্ত করতে থাকেন কর্মীরা। এ দৃশ্য দেখে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স সবাই অবাক হয়ে যায়। কী অপূর্ব সে দৃশ্য! ওদিকে জেনারেল হাসপাতালের সামনে বোমা ও গুলিতে ত্রাসের এক রাজত্ব কায়েম হওয়ার পরক্ষণেই সংঘবদ্ধ শিবিরকর্মীরা ঘিরে ফেলে সে ভবনটি। সামনেই সশস্ত্র ঘাতক এ কথা জানার পরও ছাত্রশিবিরের বীর মুজাহিদরা সাহসিকতার সাথে এগিয়ে যান তাদের হাতে-নাতে ধরার জন্য। বারোজন হামলাকারীকে তারা আটক করেন এবং তাদের পুলিশে সোপর্দ করে দেন। হাসপাতালের ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয় ২টি তাজা বোমা ও দুটি বিচ্ছিন্ন আঙুল। পরে পুলিশ এসে শিবিরকর্মীদের সহযোগিতায় আরো চারজন হামলাকারীকে আশপাশের লোকালয় থেকে গ্রেফতার করে।

মায়ের প্রতিক্রিয়া
“শহীদের মা হয়ে আমি গর্বিত। তাঁর ছোট ভাইদেরকেও সংগঠনের কাজ করে শহীদ হতে বলি।”

নিজ এলাকায় তাঁর শাহাদাতের প্রভাব
স্থানীয় শিবিরকর্মী মহিউদ্দিন বলেন, শহীদ আমীর হোসাইনের শাহাদাতের পূর্বে আমরা স্থানীয় তরুণ সমাজ ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। কিন্তু আমীর ভাইয়ের মৃত্যুর কথা শুনে তাঁর বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলাম। তাঁর শাহাদাতের মধ্য দিয়ে আমাদের এলাকার তরুণ সমাজ ইসলামী আন্দোলনের সাথে পরিচিত হয়। আজ এ এলাকা শহীদ আমিরের রক্তের বিনিময়ে ইসলামী আন্দোলনের পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে।

একনজরে শহীদ আমীর হোসাইন
পুরো নাম : মো: আমীর হোসাইন
মায়ের নাম : মোসাম্মৎ খায়রুন্নেছা
বাবার নাম : মো: মোয়াজ্জেম হোসেন
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- ভাটিরটেক, ডাক- ধর্মপুর হাজির হাট, ইউনিয়ন- ৭ নং ধর্মপুর (৬ নং ওয়ার্ড), থানা- সুধারাম (সদর), জেলা- নোয়াখালী
জন্ম : ১৯৬৯ সাল
সাংগঠনিক মান : কর্মী
সর্বশেষ পড়াশোনা : দশম শ্রেণী
সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানের নাম : রেলওয়ে স্টেশন কলোনি উচ্চবিদ্যালয়
জীবনের লক্ষ্য : শহীদ হওয়া (আল্লাহর দ্বীন অনুসারে জীবন পরিচালনা করা)
আহত হওয়ার স্থান : লালদীঘির পাড়, মিছিলে বোমার আঘাতে
আঘাতের ধরন : শরীরের নিচের অংশের অর্ধেক উড়ে যাওয়া
শাহাদাতের স্থান ও তারিখ : আন্দরকিল্লা, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭
যাদের আঘাতে শহীদ : জাতীয় ছাত্রসমাজ
ভাই-বোন : ৫ ভাই, ৩ বোন
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান : সবার বড়

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আমীর হোসাইন

পিতা

মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন

মাতা

মোসাম্মৎ খায়রুন্নেসা

জন্ম তারিখ

জানুয়ারি ১, ১৯৬৯

ভাই বোন

৫ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে সবার বড়

স্থায়ী ঠিকানা

ভাটিরটেক, ধর্মপুর হাজির হাট, সদর, নোয়াখালী

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

রেলওয়ে স্টেশন কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়

শাহাদাতের স্থান

আন্দরকিল্লা


শহীদ আমীর হোসাইন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আমীর হোসাইন


শহীদ আমীর হোসাইন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আমীর হোসাইন