শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম

২৮ মে ১৯৯৪ - ০৩ ডিসেম্বর ২০১২ | ১৪১

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

“দায়িত্বশীলকে বলেছিলেন, ‘বাবার আন্দোলন করবেন বাবা, আমারটা আমি। আমাকে সর্বদা সামনে রাখবেন। ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেনকে শাহাদাতের ১৫-২০ দিন আগে তিনি বলেছিলেন, দাদা দোয়া করবেন, আমিতো মনে হয় শহীদ হবো। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা করে দিবেন। এলাকার বাজারে লোকেরা তাকে গন্ডগোলের কথা বলে মিছিলে যেতে না করলে তিনি তার উত্তরে বলেছিলেন, আপনারা দেখবেন আগামীকাল আমি শহীদ হবো ইনশাআল্লাহ।”

শহীদের পরিচিতি
শহীদ মো: মোজাহিদুল ইসলাম ১৯৯৪ সালে দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মাওলানা আতাউর রহমান সরকার ও মাতা শেফালী বেগমের ছয় ছেলে সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। মোজাহিদ দক্ষিণ গোয়ালডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে ৫ম শ্রেণী সমাপ্ত করার পর গোলাম রহমান আলিম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ২০১৩ সালের দাখিল পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি খেলাধুলাসহ সকল সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে বেশ পারদর্শী ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি একজন ভালো বক্তা, আবৃত্তিকার এবং একজন ভাল ক্রিকেটার হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। উপজেলা পর্যায়ে তিনি ১৫-১৬টি পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী ছিলেন এবং প্লান বাজার উপশাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার পিতা মাওলানা মো: আতাউর রহমান সরকার খানসামা উপজেলা জামায়াতের আমির। তিনি ছিলেন নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও উত্তর চরিত্রের অধিকারী। তার চরিত্রে বহুবিধ গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সমাহার ঘটেছিল। কিন্তু কে জানতো স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বুলেটের আঘাতে এ উদীয়মান তরুণের জীবনপ্রদীপ শুরুতেই নিভে যাবে?

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন
৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে বাড়িতে সারাদিন পারিবারিক আলু লাগানোর কাজ করে বিকেলে আসরের নামাজ পড়ে বাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে রানীর বন্দরে যান। পরের দিন জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে হরতালের সমর্থনে বাদ মাগরিব মিছিল হয়। রানীর বন্দর হাইওয়েতে মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা মোকাবেলা করে মিছিল সামনের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ প্রথম টিয়ার শেল এবং পরে গুলি করলে মোজাহিদ সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার মাথার ডান কানের লতি বরাবর বুলেট ঢুকে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন ৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহাদাতের প্রায় ২০ ঘণ্টা পর লাশ প্রশাসন হস্তান্তর করলে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ দিনই রাত ৮টায় বাড়ির পশ্চিম পাশের ধানক্ষেতে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজে ইমামতি করেন শহীদের গর্বিত পিতা মাওলানা আতাউর রহমান সরকার। স্থানীয় লোকদের ধারণা জানাজায় প্রায় লক্ষাধিক লোক উপস্থিত হন এবং শহীদের জন্য দোয়া করেন।

সামগ্রিক ঘটনার বিবরণ
৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখ বাদ মাগরিব রানীর বন্দর নামক স্থানে পরের দিন ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে হরতালের সমর্থনে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা মোকাবেলা করে মিছিল সামনের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ প্রথমে টিয়ার শেল এবং পরে গুলি করে। মাগরিবের পরে ঘটনা শুরু হয়ে তা ৩ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে রূপ নেয়। জামায়াত-শিবিরের উদ্যোগে মিছিল শুরু হলেও এলাকার স্থানীয় জনগণ এতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং চার-পাঁচ হাজার লোক অংশগ্রহণ করে। ঘটনা চলাকালীন পুলিশ বাজারের সমস্ত লাইট ভেঙে ফেলে। ফলে পুরো রানীর বন্দরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ৩ ঘন্টাব্যাপী এ সংষর্ঘ চলাকালে ১৫-২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়।

দাদা দোয়া করবেন, আমিতো মনে হয় শহীদ হবো
আগের দিন ২ ডিসেম্বর ২০১৩ সাথী বৈঠকে এসেছিল সরাসরি আলুক্ষেত থেকে কাজ করে। দায়িত্বশীলের কাছে সে আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে বলে। তার পিতাতো উপজেলা আমির অনেক কাজ করছে এ প্রসঙ্গে আলোচনা এলে সে বলে, ‘বাবার আন্দোলন করবেন বাবা আমারটা আমি। আমাকে সর্বদা আগে রাখবেন। ৬ নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেনকে শাহাদাতের ১৫-২০ দিন আগে তিনি বলেছিলেন, ‘দাদা দোয়া করবেন, আমি তো মনে হয় শহীদ হবো। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করে দিবেন।’ তার এলাকার বাজারে লোকেরা তাকে গন্ডগোলের কথা বলে মিছিলে যেতে না করলে তিনি তার উত্তরে বলেছিলেন, আপনারা দেখবেন আগামীকাল আমি শহীদ হবো ইনশাআল্লাহ। আমার নাম পত্রিকার হেডলাইনে দেখবেন। সত্যিই তিনি জাতীয় পত্রিকার হেডলাইন হয়েই বিদায় নিলেন। তার আচার-ব্যবহারে মানুষ ছিল মুদ্ধ। তাকে হারিয়ে সকল মানুষ বেদানার্ত।

ব্যক্তিগত প্রোফাইল
নাম : শহীদ মো: মোজাহিদুল ইসলাম
সাংগঠনিক মান : সাথী, উপশাখা সভাপতি
পেশা : দাখিল পরীক্ষার্থী, গোলাম রহমান আলিম মাদ্রাসা
জন্মতারিখ ও বয়স : ২৮ মে ১৯৯৪ : আহত হওয়ার তারিখ : ৩ ডিসেম্বর ২০১২
শাহাদাতের তারিখ : ৩ ডিসেম্বর ২০১২, দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : গোয়ালডিহি, ডাকঘর, গোয়ালডিহি, ইউনিয়ন : ১ নং খোড়াগাছ, উপজেলা : খানসামা, জেলা : দিনাজপুর
পিতা : মাওলনা মো: আতাউর রহমান সরকার, বয়স : ৫৬ বছর, সহকারী মৌলভী বাজার দরগাহ মাদ্রাসা
মাতা : শেফালী বেগম, গৃহিণী
ভাইবোনের বিবরণ : শফিউল আলম, নীলফামারী ইপিজেডে কর্মরত। নাজমুস সাফাত, জুয়েলারি ব্যবসা, আব্দুল্লাহ আল ফারুক, এইচএসসি পরীক্ষার্থী ২০১৩, শহীদ মো: মোজাহিদুল ইসলাম, আরিফুল হাসান, আরাফাত, নবম শ্রেণী, আবু নাসের মো: আব্দুজ জাহের, চতুর্থ শ্রেণী।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম

পিতা

মাওলনা মো: আতাউর রহমান সরকার

মাতা

শেফালী বেগম

জন্ম তারিখ

মে ২৮, ১৯৯৪

ভাই বোন

শফিউল আলম, নীলফামারী ইপিজেডে ক

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম : গোয়ালডিহি, ডাকঘর, গোয়ালডিহি, ইউনিয়ন : ১ নং খোড়াগাছ, উপজেলা : খানসামা, জেলা : দিনাজপুর

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

দাখিল পরীক্ষার্থী, গোলাম রহমান আলিম মাদ্রাসা

শাহাদাতের স্থান

রংপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল


শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম


শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম