শহীদ রায়হান খন্দকার

২৮ অক্টোবর ১৯৮৬ - ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ | ১২২

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

কত মানুষ জন্ম নিয়ে আসে পৃথিবীতে কিন্তু মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করে যেতে হয়ে তাকে। এক্ষণিকের আসা-যাওয়ার কিয়ামত অবধি চলবে। জাহান্নাম কিন্তু আল্লাহর রাহে যারা জীবন দিয়ে যায়, তিনি কি তাদের ফেরে দেন।
১১ই ফেব্রুয়ারি ০৫ গাজিপুরে টঙ্গীস্থ তামিরুল মিল্লাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিভাগীয় সাথী সম্মেলন । এ কাজে স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন রায়হান, প্রথম দিন থেকেই সে ছিল তার দায়িত্ব পালনে যত্মবান। হাদিসের সেই কথা যে তিনি ধরনের চক্ষুকে আগুনের স্পর্শ করবে না। এই কথার বাস্তবায়নের মূর্তপ্রতিক ছিল রায়হান যিনি রাত জেগে সম্মেলনে আঘাত দ্বীনি ভাইদের পাহারাদেয়ার কাজ করতো এবং পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট ছিল। তাই সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই দিন সকালেই দুভাই মিলে চলে আসেন সম্মেলনের সেচ্চাসেবকের দায়িত্ব পালন করার জন্য। সকালে এসই তাদের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করে।

১১ ফেব্রুয়ারি যা ঘটেছিল
আগের রাত থেকেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল নির্ধাতির কাজ সম্মেলনের মুলগেইটে ধুলায় পানি দেয়া। খুব ভোর থেকেই শুরু করবো। আমাদের পরিকল্পনার আলোকে তাই হচ্ছে। দিনটি ছিল শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়তে হবে তাই দায়িত্বশীলদের কাছে ছুটি নিয়ে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে তা আর ফিরে আসেনি প্রিয় রায়হান। জুম্মার নামাজের সময় হয়ে যচ্ছে। কোথাও রাযহানকে খুঁজে না পেয়ে আমরা মাইকে ঘোষণা দিতে থাকলাম রায়হান যেখানেই থাক সম্মেলন অফিসে চলে আসে। কিন্তু এইডাক শুনার আগেই সে আল্লহর ডাকে সাড়া দিয়ে ওপারে পাড়ি জমালো। নামাজের পর ডুবুরী নামিয়ে তার মৃত দেহ পুকুর থেকে তোলা হয়। পরে রায়হানের ফুফার বাসায় নেয়ার উদ্দেশ্যে অ্যাম্মুলেন্সে করে মগবাজার নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে রাত ৯টার তার প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের। জানাযায় উপস্থিত ছিলে সেক্রেটারি জেনারেল ও কার্যকরী পরিষদ সদস্যবৃন্দ। দ্বিতীয় জানাযা ১২ তারিখে সাকলে তার স্কুল বাড্ডা আলাতুন্নেছা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় উপস্থিত ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কার্যকরী পরিষদ সদস্যবৃন্দ এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব তৈয়বুর রহামনসহ শিক্ষবৃন্দ এর জানাযা তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নওমহল প্রাইমারি স্কুল মাঠ অীনষ্ঠিত হয়। জানযায় ইমামতি করে নকাতরাশেন অলিয়া মাদ্রসার সাবেক হেড মোহাদ্দেস জনাব নুরুল ইসলাম .... ছিলেন পরিষদের সদস্য বৃন্দ। পরে স্থানীয় পৌরসভার গোরস্তানে দাফন করা হয়।

শহীদের কিছু স্মৃতি
শহীদ রায়হান সব সময় বলতো বাংলাদেশে কখন ইসলামী রাষ্ট্রে রূপ নেবে? নিতি ছিল নিজ গ্রামের বাড়িতে একটপা অফিসে তৈরি করবে যেখান থেকে শিবিরে দাওয়াত দেবে। সবসময় বলতো আমাদের জেলা সভাপতির নামবার ওটিকানা সংগ্রহ করে দেবেন। সম্মেলন যাওয়ার পর জেলা সভাপতিকে খুঁজে বের করে বাসায় যাওয়ার দাওয়াত দিয়েছিলেন। সংগঠনের কাজে সে সবসময় ছিল নিবেদিত। যখন যেখানেই প্রোগ্রামর খরব পেত ছুটে যেত। আর বলতে দুনিয়ার লেখাপড়া দিয়ে তো চুড়ান্ত সফলতা পাওয়া যাবে না, তাই খুব বেশি চিন্তা করি না।

শহীদের সাথে শেষ দেখা
১১ তারিখ ফজরের নামাজের পর মসজিদের পাশ্বে দঁড়িয়ে বলেছিলাম, আমরা এখন থেকেইে কাজ শুরু করবো। সাথে সাথেই বলল চলেন। সম্মেলনের ব্যস্তাতার কারণে পরে আর সেইভাবে কথা হয়নি। নাস্তার সময় জিজ্ঞেস করলাম খেয়েছে। সে বলল হ্যাঁ। বললাম কাজগুলো ভাগ করে সবাই মিলে করো সে চেষ্টা করতো একা একা করতে ।

ঝরে গেল সে গোলাপ
বদরের প্রান্তরে ইসলামের সবচেয় বড় দুশমনকে মারার জন্য দু’আই যুদ্ধে গিয়েছিলেন মায়াজ আর মুয়াওয়াজ। তাদের উত্তরসুরই ছিল সরায়হান ও জাকির। সম্মেলনে আসার অনুমতি নেয়ার জন্য ব্যস্ত। বারে বারে বলতো আমরা সম্মেলনে পাঠিয়েদিয়ে খবর নিতো তার ঠিক মতো কাজ করতো কিন। মার ইচ্চা ছিল দুই ছেলে ইসলামের বড় সেবক হবেঃ ইসলামের সেবা ও জাতির সেবা করার নৃছ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল তাইতো প্রস্থতি নিৃছল একদিকে আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে, পাশাপাশি শপথের কর্মী হবে। কিন্তু দুনিয়ার শপথ নেয়ার আগেই সে জান্নাতে চলে গেল। আমরা সবই মিলে তার স্বপ্ন পুরনে সামনে এগিয়ে যবো ইনশাআল্লাহ।

আব্দুল্লাহ আল রায়হান। একটি নাম। একটি আন্দোলন। ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ঘুণে ধরা এ সমাজকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে শান্তিময় সভ্যতা বিনির্মাণে তিনি ছিলেন বদ্ধ পরিকর। জৈন্তাপুরের বিশাল ও বিস্তৃত ময়দানে তাঁর মতো সৈনিকের আজ বড় প্রয়োজন। তাঁর শূণ্যতা ও ঘাটতি আজ পরিলতি হচ্ছে সর্বমহলে। যে রায়হান জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আল্লাহর দ্বীনের কথা বলতেন সে রায়হানকে তো আর আমরা পাব না। রায়হানের শ্রদ্ধেয় পিতা জহির উদ্দীন সাহেব আাক্ষেপ করে বলেন, মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে আমি আমার পুত্রকে বললাম, তুমি ফজরের নামাজ পড়ে যাও আর গভীর রাতে আস। এত পেরেশানী কেন? সে বলল, আব্বা আমারতো সময় নেই। আমি জেলা সভাপতিকে বলছি, জানুয়ারিতে আমার বিদায় হয়ে যাবে। তাই আমার দায়িত্বটা ভালভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। নতুন সভাপতি আসার পর যাতে কোন কষ্ট না হয়। রায়হান ভাই সংগঠনের নিবেদিত প্রাণ সৈনিক ছিলেন তার প্রমাণ হলো মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তিনি জেলা দায়িত্বশীলকে বলেছিলেন, আমার এক সাথী গাছবাড়িতে অপেক্ষা করছেন। সকালে সাথী বৈঠক। তাই তাকে নিয়ে আসতে রাত ৩ টার দিকে রওয়ানা দিতে হবে। তখন দায়িত্বশীলরা রাত্রে না যাওয়ার জন্য বলেন । মোটকথা মৃত্যুর মাস দুয়েক আগ থেকে রায়হান ভাই ব্যস্ত থাকতেন। ১২ ডিসেম্বর বেলা ২:৩০ টার সময় আলীয়া মাদ্রাসায় জেলা সদস্য বৈঠকে তিনি যোগদেন। পাঞ্জাবী পরিহিত অবস্থায় তাকে খুব মোলায়েম ও সুন্দর দেখাচ্ছিল। তিনি উদার, অতিথিপরায়ন ও মিশুক চরিত্রের অধিকারী ছিলেন বলে সব সদস্য ভাই তাঁর সাথে কথা বলতে খুবই পছন্দ করতেন। সবার সাথে তাঁর ভালো সম্পর্ক ছিল।

মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর শাহাদাতকে কবুল করেন এবং ল ল রায়হানকে জন্ম দিয়ে জৈন্তাপুরের মাটিকে ইসলামের আলোতে উদ্ভাসিত করুন। এই দোয়া করছি।

এক নজরে শহীদ মুহাম্মদ রায়হান খন্দকার
নাম : মুহাম্মদ রায়হান খন্দকার
পিতার নাম : বাতেন খন্দকার
মাতার নাম : মোসাম্মৎ নুরুন্নাহার লাভলী
সংগঠনিক মান : সাথী প্রার্থী
দায়িত্ব : উপশাখা সেক্রেটারি
লেখা পড়া : ১০ম শ্রেণী (বাণিজ্য)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : বাড্ডা আলাতুন্নেসা উচ্চ বিদ্রালয়
শহীদ হওয়ার স্থান : টঙ্গীস্থ তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার (পুকুর)
শাহাদাতের তারিখ : ১১ই ফেব্রুয়ারি ’০৫। দুপুর ১২.৩০ মি.
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- নওমহল, নন্দীবাড়ি, কোতোয়ালী, ময়মনসিংহ
ভাইবোন : দুই ভাই, এক বোন
জন্ম তারিখ : ১৯৮৬, ২৮ শে অক্টাবর

বাবার প্রতিক্রিয়া
আমার ছেলে পুকুর পারে শহীদ হলো কেন বাতিলের অঘাতে শহীদ হলো না কেন?

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ রায়হান খন্দকার

পিতা

বাতেন খন্দকার

মাতা

মোসাম্মৎ নুরুন্নাহার লাভলী

জন্ম তারিখ

অক্টোবর ২৮, ১৯৮৬

ভাই বোন

দুই ভাই, এক বোন

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম- নওমহল, নন্দীবাড়ি, কোতোয়ালী, ময়মনসিংহ

সাংগঠনিক মান

সাথী প্রার্থী

সর্বশেষ পড়ালেখা

১০ম শ্রেণী (বাণিজ্য), বাড্ডা আলাতুন্নেসা উচ্চ বিদ্রালয়

শাহাদাতের স্থান

টঙ্গীস্থ তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার (পুকুর)


শহীদ রায়হান খন্দকার

ছবি অ্যালবাম: শহীদ রায়হান খন্দকার


শহীদ রায়হান খন্দকার

ছবি অ্যালবাম: শহীদ রায়হান খন্দকার