শহীদ আকমল হোসেন

২২ জুলাই ১৯৯৯ - ০২ মার্চ ২০১৩ | ১৬০

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা


শহীদের পরিচিতি 

রংপুর পীড়গাছার জিগাবাড়ি গ্রামের শহীদ মো: আকমল হোসেন ১৯৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মাতার চার সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান তিনি। দুই ভাই দুই বোনের সংসারে দরিদ্র পিতা-মাতা সংসার পরিচালনা এবং এ সন্তাদের মানুষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। শত অভাব অনটন সত্ত্বেও দরিদ্রে পিতা তাদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করেছিলেন। শহীদ মো: আকমল হোসেন জিগাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে জ্ঞানগঞ্জ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি ছাত্রসংগঠনের কর্মী ছিলেন। বড়দের খুবই সম্মান করতেন ও বেশ লাজুক ছিলেন। আর সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলতেন। কিন্তু সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ঘাতকের আঘাত কেড়ে নিল তাঁর কচি প্রাণ।

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখ সন্ধ্যায় আল্লামা সাঈদীর মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার মুক্তিকামী জনতা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ভায়ারহাট থেকে জ্ঞানগঞ্জ হয়ে আবার ভায়ারহাটে আসে। এ সময় সরকারদলীয় লোকজন ও পুলিশ বাহিনী একযোগে লাঠি, রড ও কিরিচ নিয়ে মিছিলকারীদের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে প্রায় ২০-২২ জন আহত হয় এবং ৯ম শ্রেণীর ছাত্র আকমল হোসেন মাথায় আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন। এই বর্বরোচিত হামলার একপর্যায়ে এলাকার সাধারণ জনগণ একাত্রিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পরবর্তীতে বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মো: আকমল হোসেন হামলাকারীদের ছোড়া ইটের আঘাত মাথায় লেগে মারাত্মকভাবে আহত হন। আহতাবস্থায় তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় তার মাথার ডান পাশে খুলি ভেঙে মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে। সেখানে দুই দিন চিকিৎসার পর ২রা মার্চ দুপুর ১.৩০টায় শাহাদাত বরণ করেন। ৩রা মার্চ ২০১৩ ইং তারিখ রোববার সকাল ৯.৩০টায় জ্ঞানগঞ্জ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় প্রায় ১০ হাজার লোকের উপস্থিতি ছিল।

শাহাদতের আগের ঘটনা
শহীদ আকমল সেদিন মা আফরোজা বেগমকে বলে গিয়েছিলেন। যদিও মা মিছিলে যেতে আপত্তি করে বলেন, ‘বাবা যাসনে, কিন্তু তিনি বলেছিলেন, ‘মা আমাকে বাধা দিও না। আমি মারা গেলে তো শহীদ হবো।’ আকমলের বয়স কম হলেও বেশ কর্মঠ ছিলেন। পারিবারিক কাজে পিতাকে বেশ সহযোগিতা করতেন। এমনকি গরু চরানোর মতো কঠিন কাজেও। সেদিন তিনি পুকুর থেকে মাছ ধরেছিলেন। কিন্তু সেই মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য তার হয়নি। ফুফু স্বপ্ন দেখেন আকমল টুপি মাথায় জমকালো পোশাক পরে মসজিদে বসে কুরআন পড়ছে। আর বলছে আমি সুস্থ আছি, ভাল আছি। বাবা-মা কষ্টের ভেতরও সান্তনা খুঁজে দুনিয়াতে না পেলেও আকমলের সাথে জান্নাতে দেখা হবে; কেননা তিনি আল্লাহর পথে গেছেন। কিন্তু শতবর্ষের দাদা হযরত আলীর সাথে নাতির অন্যরকম সম্পর্ক ছিল। তিনি ব্যস্ত থাকতেন তার কখন কী লাগবে। দাদার ওজুর পানি ও গোছলের পানি তুলে দিতেন। আজ শতবর্ষী দাদার সামনে সাড়ে ১৩ বছরের নাতির লাশ। অন্ধের যষ্ঠির মতো তার একান্ত- আদরের বড় নাতিকে হারিয়ে তিনি নির্বাক হয়ে যান। লাঠি হাতে কবরের পাশে যখন দাঁড়ান মনে হয় এক হিমালয় হেলে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার দুই চোখে যেন বইছে স্রোতস্বিনী পদ্মা আর যমুনা।

৫. ব্যক্তিগত প্রোফাইল
নাম : শহীদ মো: আকমল হোসেন

পেশা : নবম শ্রেণীর ছাত্র।
শাহাদাতের সময় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলেন।
জন্ম তারিখ ও বয়স : ২২.০৭.১৯৯৯ ইং।
আহত হওয়ার তারিখ : ২৮.০২.২০১৩, সময় : রাত ৯.৩০টা।
শাহাদাতের তারিখ : ০২.০৩.২০১৩, সময় : দুপুর ১.৩০টা। দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : জিগাবাড়ি, ডাকঘর : জ্ঞানগঞ্জ, ইউনিয়ন : জ্ঞানগঞ্জ, উপজেলা : পীরগাছা, জেলা : রংপুর।
পিতা : মো: মোশারফ হোসেন, বয়স ৪৫ বছর, কৃষিকাজ

মাতা : মোছা: আফরোজা বেগম, বয়স ৩৫ বছর।
ভাইবোনের বিবরণ : শহীদ মো: আকমল হোসেন, মোছা: জাহান বেগম-১২ বছর, শ্রেণীর ছাত্রী, মোছা : মোসলেমা আক্তার-৫.৫ বছর নার্সারি, মো: আরমান হোসেন ৩.৫ বছর।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আকমল হোসেন

পিতা

মো: মোশারফ হোসেন

মাতা

মোছা: আফরোজা বেগম

জন্ম তারিখ

জুলাই ২২, ১৯৯৯

ভাই বোন

২ ভাই ২ বোনের মধ্যে ১ম

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম : জিগাবাড়ি, ডাকঘর : জ্ঞানগঞ্জ, ইউনিয়ন : জ্ঞানগঞ্জ, উপজেলা : পীরগাছা, জেলা : রংপুর

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

জ্ঞানগঞ্জ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণী

শাহাদাতের স্থান

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল


শহীদ আকমল হোসেন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আকমল হোসেন


শহীদ আকমল হোসেন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আকমল হোসেন