শহীদ জুয়েল রানা

২০ জানুয়ারি ২০০০ - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | ১৫৮

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা


“শোকে পাথর বাবা-মাকে সান্তনা দিতে প্রতিবাদ নয় শুধু লাশটা চাই- দাবি নিয়ে বড় ভাই জিয়ারুল কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলেন। পুলিশ এই ধৃষ্টতার জন্য উল্টো তাকেই গ্রেফতার করে এবং আদরের ছোট ভাইয়ের হত্যা মামলার আসামি করে জেলে পাঠায়। বেচারা! জিয়ারুল এই সভ্যদেশে ভাইয়ের লাশ চাওয়ার অপরাধে পাঁচ মাস জেল খাটলো। এতদিনে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন হওয়া আদরের ছোটভাই জুয়েল রানা এই বসুধার মাটির সাথে একাকার হয়ে গেছে। হায় আফসোস। মা বাবাকে তাদের কলিজার টুকরার লাশতো দূরের কথা, তার ঠিকানাটাও সে দিতে পারলো না।”

শহীদের পরিচিতি
শহীদ মো: জুয়েল রানা ২০০০ সালে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তালুক-বেলকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতা খোকা মিয়া ও মাতা জুলেখা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। তাদের বাড়ি-জমিজমা তিস্তার ১০-১২ ভাঙনের পর একেবারে হতদরিদ্র হয়ে যায়। পিতা-মাতা অভাবী সংসারে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে বড় ২ ছেলেকে পড়ালেখা করাতে পারেননি। তাদের আশা ছিল তৃতীয় সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলবেন। এ জন্য প্রাথমিক সমাপনীর পর ভর্তি করিয়েছিলেন পঞ্চানন্দ দাখিল মাদ্রাসায়। তিনিও পড়ালেখায় বেশ ভাল ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল বড় হলে আলেম হবেন। তিনি ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলেন। নিয়মিত নামাজ ও কুরআন হাদিস পড়তেন। কিন্তু আলেম সমাজের বিরুদ্ধে সরকারের আচরণ সর্বোপরি আল্লামা সাঈদী সাহেরের অন্যায় রায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সে চলে যান মহান প্রভুর সান্নিধ্যে।

বাবা-মার জুয়েল হলো বেওয়ারিশ লাশ
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মাওলানা সাঈদী সাহেরের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে হাজার হাজার জনতা সুন্দরগঞ্জ এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিল সুন্দরগঞ্জ শহরে প্রবেশ করলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করে। প্রায় ৫০ জনের মতো গুলিবিদ্ধ হয়। শহীদ জুয়েল রানা গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। পুলিশ তার লাশ থানায় নিয়ে যায় এবং গাইবান্ধা মর্গে পাঠায়। সবার অগোচরে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গাইবান্ধার কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করে। শোকে পাথর বাবা-মাকে সান্তনা দিতে প্রতিবাদ নয় শুধু লাশটা চাই, দাবি নিয়ে বড় ভাই জিয়ারুল কতৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলেন। পুলিশ এই ধৃষ্টতার! জন্য উল্টো তাকেই গ্রেফতার করে এবং আদরের ছোট ভাইয়ের হত্যা মামলার আসামি করে জেলে পাঠায়। বেচারা! জিয়ারুল এই সভ্যদেশে ভাইয়ের লাশ চাওয়ার অপরাধে পাঁচ মাস জেল খাটলেন। এতদিনে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন হওয়া আদরের ছোটভাই জুয়েল রানা এই বসুধার মাটির সাথে একাকার হয়ে গেছে! হায় আফসোস! মা-বাবাকে তাদের কলিজার টুকরার লাশতো দূরের কথা তার ঠিকানাটাও সে দিতে পারলো না।

মায়ের আর্তি, বাবা কান্না
বিকেল ৩টায় রায় ঘোষণার পরপরই এটা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। দরিদ্র বাবা জমিতে পেঁয়াজ নিড়ানিতে ব্যস্ত ছিলেন। শহীদ জুয়েল রানা বাড়িতে তার মাকে হাতের ঘড়ি এবং মোবাইল জমা দিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। তার এসব তোড়জোড় দেখে স্লেহময়ী মা সাঈদীর মুক্তির বিষয়ঢি গুরুত্ব দিলেও মা হিসেবে ছেলেকে বলেছিলেন, ‘বাবা যান্না (বাবা যাসনে)। ছেলে মাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিল, মা ছোট বড় সবাই যাচ্ছে। মা আজকে স্বপ্নে দেখে, তার ছেলে রাস্তা দিয়ে খালি গায়ে হেঁটে যায়। তার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। হয়তো জনম দুঃখিনী মাকে সান্তনা দিতে চায়, দ্যাখো আমার শরীরে কোন আঘাত নেই, আমি তোমার সেই ছোট্ট ছেলেটি আছি।

ব্যক্তিগত প্রোফাইল
নাম : শহীদ মো: জুয়েল রানা
সাংগঠনিক মান : কর্মী
জন্ম তারিখ ও বয়স : ২০.০১.২০০০, বয়স ১৩ বছর

আহত হওয়ার তারিখ : ২৮ ফেব্র“য়ারি ২০১৩, গুলিবিদ্ধ হন

শাহাদাতের তারিখ : ২৮ ফেব্র“য়ারি ২০১৩। স্থান : গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। দাফন করা হয় : নিজ এলাকার কবরস্থান।
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : তালুক- বেলকা, ডাকঘর : সুন্দরগঞ্জ, থানা : সুন্দরগঞ্জ, জেলা : গাইবান্ধা।
পিতা : মো: খোকা মিয়া, ৫৫ বছর, কৃষিকাজ করেন।
মাতা : মোসা: জুলেখা বেগম, ৪৫ বছর, গৃহিণী।
ভাইবোনের বিবরণ : মো: জিয়ারুল ইসলাম, ২৭ বছর, মনিহারী ব্যবসা করেন, জিল্লুর রহমান, ২২ বছর, কৃষি কাজ করেন, খুকি আক্তার, ১১ বছর, তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ জুয়েল রানা

পিতা

খোকা মিয়া

মাতা

জুলেখা বেগম

জন্ম তারিখ

জানুয়ারি ২০, ২০০০

ভাই বোন

৪ জনের মধ্যে ৩য়

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম : তালুক- বেলকা, ডাকঘর : সুন্দরগঞ্জ, থানা : সুন্দরগঞ্জ, জেলা : গাইবান্ধা

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

পঞ্চানন্দ দাখিল মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেনী

শাহাদাতের স্থান

সুন্দরগঞ্জ শহর


শহীদ জুয়েল রানা

ছবি অ্যালবাম: শহীদ জুয়েল রানা


শহীদ জুয়েল রানা

ছবি অ্যালবাম: শহীদ জুয়েল রানা