শহীদ সাদেকুর রহমান সাঈদী

২৫ মে ১৯৯৮ - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | ১৫২

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

‘মাগো দুই রাকাত নামাজ পড়ে দোয়া করবেন আমি যেন শহীদ হই।”

শহীদের পরিচিতি
রংপুর মিঠাপুকুরের প্রত্যন্ত গ্রাম লতিফপুরের দরিদ্র পিতা-মাতার চার সন্তানের মধ্যে ২য় সন্তান শহীদ মো: ছাদিকুর রহমান ২৫ মে ১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের আগেই তাদের হাসিখুশি ১ ভাই ১ বোনের সুন্দর সংসারে বড় ভাই ১০ মাস বয়সেই জ্বরে মারা যান। এরপর শোকাতুর পিতা-মাতার কোল আলো করে ছেলেসন্তান হিসেবে জন্ম নেন তিনি। সবশেষে বোন রুকাইয়া। বয়স্ক পিতা দুর্বল শরীরে ভ্যান চালিয়ে প্রতিদিন ১০০-১৫০ টাকা এবং মাঝে মাঝে গাছকাটার কাজ পেলে কদাচিৎ শ'তিনেক টাকার মতো পেতেন। তাই দিয়েই দরিদ্র পিতা-মাতা কোন রকম তাদের সংসার এবং সন্তানের পড়ালেখা চালাচ্ছিলেন। ছাদিকেরও অনেক বড় স্বপ্ন ছিল কিন্তু মাত্র দশম শ্রেণীর পাঠ চুকানোর আগেই ১৫ বছর বয়সেই তিনি চলেন গেলেন আল্লাহর দরবারে। তিনি সবসময় মা-বাবা, বোনদের নামাজ ও পর্দার ব্যাপারে তাকিদ দিতেন। তার আব্বা মোকাদ্দাছ মিয়া এখন ঘোরের মধ্যে থাকেন আজানের আওয়াজ শুনলেই মনে হয় তার আব্বা (ছাদিকুর) যেন আজাদ দিচ্ছে। হাসি মুখে পাঞ্জাবি গায়ে নামাজের দিকে যাচ্ছে।

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন
দুই মাস আগ থেকেই তিনি আফসোসের সাথে বলে বেড়াতেন ‘সাঈদী সাহেব জেলে আর আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি।’ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। ঘটনাস্থল শহীদের নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার। হরতাল উপলক্ষে মিছিলের খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত লোক দলবেঁধে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ঘটনাস্থালে উপস্থিত হয়। তেমনি খবর পেয়ে শহীদ ছাদিকুর যেতে উদ্যত হন। ভোরে ছাদিকুর নাশতা করার জন্য বাসি ভাত খুঁজছে কিন্তু পাননি। ষষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া বোন রুকাইয়া বলেন ফজরের পর পরই ভাইয়া রেডি হতে থাকে। কিছুটা ইতস্তত করে বলেন আমাদের কোন টয়লেট না থাকায় আমরা প্রয়োজনে পাশের বাসায় বা জঙ্গলে যেতাম। সে সময় আম্মা টয়লেটে ছিলেন। ভাইয়া চাচার সাইকেল নিয়ে রওনা দেয়। এমন সময় আম্মা এসে হাজির হয়ে ভাইয়াকে টেনে ধরেন। বাসি ভাত খেয়ে যেতে বলেন। ভাইয়ার যেন সেদিন কী হয়েছিল, মায়ের হাত থেকে ছোটার জন্য বলেন, “আমার ভাত খাওয়ার টাইম নাই। মাগো, দুই রাকাত নামাজ পড়ে দোয়া করবেন আমি যেন শহীদ হই।”

আজ রশি দিয়েও আমাকে বেঁধে রাখতে পারবেন না। আপনারা সবাই রোজা থাকেন বলেই সে বের হয়ে যায়। মা মোহাবিষ্টের মতো তার গন্তব্যের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তারপর বাইসাইকেলযোগে সকালে মিঠাপুকুর যান। সেখানে প্রায় ৫০ হাজার এলাকাবাসীর সাথে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। তার প্রস্তুতিও ছিল সুনিপুণ। আগের দিন পাশের দর্জির দোকানে ১০০ টাকার পাওনা ছিল সেটি শোধ করে গেছেন। পাশের বাড়ির তার চাচাতো ভাই মোমিনুলের কাছে তিনি তার হৃদয়ের একান্ত আকুতির কথা বলে যান “সাঈদী হুজুরের ফাঁসির রায়ের আগে যেন আমার শহীদি মৃত্যু হয়।”

শাহাদাতের ঘটনা
২৮ ফেব্রুয়ারি ১৩ জোহর নামাজ পড়েই পাশেই তার চাচাতো বোনের বাসায় যান এবং দুপুরে কিছু খাবার চান। তার বোন খাবার দিলে তিনি খাওয়া শুরু করেন। এমন অবস্থায় মিছিল শুরু হলে তিনি খাবার রেখে মিছিলে শামিল হন। (এ যেন সেই রাসূলের সাহাবা মুজাহিদের মতো, যিনি হাতের খেজুর ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলেছিলেন ওহুদ পাহাড়ে যেন জান্নাতর সুঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে।) শাহাদাতের মাত্র কয়েক মিনিট আগে তার মোবাইল থেকে তিনি তার মামা রবিউলকে ফোন করে চাপা উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন ‘আমি আপনার বইনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসছি।’

মিছিলে পুলিশ, বিজিবি গুলি করলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন। ঐ দিন রাত ৯টায় জানাজা শেষে বাড়ির পাশে তাদের প্রতিবেশীর জমিতে দাফন করা হয়।

বর্তমান বাড়িঘরের অবস্থা
মানুষের দান করা জায়গার ওপর বাড়ি, নিজস্ব কোন ভূমি নেই। টিনের ঘর ১টি। কোন কৃষিজমি নেই, টয়লেট নেই, নিজস্ব একমাত্র টিউবওয়েলটিও নষ্ট। আয়ের উৎস : ভ্যানচালক, গাছকাটে, শরীর দুর্বল, অসুস্থ।

ব্যক্তিগত প্রোফাইল
নাম : শহীদ মো: ছাদিকুর রহমান

মিঠাপুকুর কলেজের ছাত্র, এইচএসসি পরীক্ষার্থী
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথী ছিলেন এবং উপশাখার সভাপতি ছিলেন
জন্মতারিখ ও বয়স : ২৫ মে ১৯৯৮

আহত হওয়ার তারিখ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
আহতের ধরন ও পরবর্তী অবস্থা : কপালে গুলি লেগে পেছন দিকে দিয়ে বের হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই শহীদ হন।
শাহাদাতের তারিখ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, দাফন করা হয় বাড়ির পাশে প্রতিবেশীর জমিতে।
জানাজা পড়ান স্থানীয় মসজিদের খতিব জনাব মোস্তাফিজুর রহমান। উপস্থিত ছিল প্রায় দশ হাজার মানুষ 

স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : লতিফপুর, ডাকঘর : জায়গিরহাট, ইউনিয়ন : ১০ নং লফিতপুর, উপজেলা : মিঠাপুকুর, জেলা : রংপুর।
পিতা : মো: মোকাদ্দাছ মিয়া, ৫০ বছর বয়স্ক ভ্যানচালক, গাছ কাটেন, শরীর দুর্বল ও অসুস্থ' হওয়ায় ভালভাবে কাজ করতে পারেন না
মাতা : ছল্লুমা বেগম, গৃহিণী।
ভাইবোনের বিবরণ : মুক্তা খাতুন, বিবাহিতা; শহীদ মো: ছাদিকুর রহমান; রুকাইয়া, ১৩ বছর, ষষ্ঠ শ্রেণী, মাদ্রাসার ছাত্রী

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ সাদেকুর রহমান সাঈদী

পিতা

মো: মোকাদ্দাছ মিয়া

মাতা

ছল্লুমা বেগম

জন্ম তারিখ

মে ২৫, ১৯৯৮

ভাই বোন

২বোন ১ভাই, ২য়

স্থায়ী ঠিকানা

স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : লতিফপুর, ডাকঘর : জায়গিরহাট, ইউনিয়ন : ১০ নং লফিতপুর, উপজেলা : মিঠাপুকুর, জেলা : রংপুর

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

মিঠাপুকুর কলেজের ছাত্র, এইচএসসি পরীক্ষার্থী

শাহাদাতের স্থান

কপালে গুলি লেগে পেছন দিকে দিয়ে বের হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই শহীদ হন


শহীদ সাদেকুর রহমান সাঈদী

ছবি অ্যালবাম: শহীদ সাদেকুর রহমান সাঈদী


শহীদ সাদেকুর রহমান সাঈদী

ছবি অ্যালবাম: শহীদ সাদেকুর রহমান সাঈদী