শহীদ মুহাম্মদ রহিম উদ্দীন

০১ জানুয়ারি ১৯৭৫ - ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯ | ১০৬

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়, রক্তাক্ত একটি স্মৃতি। এদিন পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে হলে অবস্থান করে, যার যার পড়ালেখা ও ইবাদত বন্দেগীতে ব্যস্ত ছিল। ঠিক সে মুহূর্তে আওয়ামীলীগের সোনার ছেলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সোহরাওয়ার্দী হল দখলের পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে তৎকালীন ছাত্রলীগের সেক্রেটারি কলিমের নেতৃত্বে বাহার, মেজবাহ, রায়হান, তানভীরসহ চিহ্নিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা একে-৪৭, এস.এম.জি কাটা রাইফেলসহ মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল আক্রমণ করে। সেদিন শত শত পুলিশের উপস্থিতিতে তারা ফিল্মি কায়দায় ব্রাশ ফায়ার করতে করতে সোহরাওয়ার্দী হলে প্রবেশ করার চেষ্টা করে।

ছাত্রলীগের এ অভিযানে সংবাদ পেয়ে তখন আলাওল ও এ.এফ রহমান হলে অবস্থানরত ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা ‘নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবার’ শ্লোগান দিতে দিতে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে এগিয়ে আসে। আল্লাহর অকুতোভয় সৈনিকরা যখন সম্পূর্ণ আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ইসলামী আন্দোলনের এ ঘাঁটিকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন ঠিক তখন শয়তানের প্রেতাত্মা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শিবিরের মিছিল লক্ষ্য করে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ করতে থাকে। সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে লুটিয়ে পড়েন ইসলামী আন্দোলনের দুই মর্দে মুজাহিদ। সেদিন ঘটনাস্থলেই শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মেধাবী ছাত্র ফতেপুর শাখার সেক্রেটারি রহিম উদ্দীন ও ফাইন্যান্স বিভাগের মেধাবী ছাত্র মাহমুদুল হাসান। পায়ে বুলেট বিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন শিবির নেতা আবদুস শাকুর।

সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনা
সেদিন চরদখলের মত ক্যাম্পাস দখলের নেশায় আবু জেহেল-আবু লাহাবের উত্তরসূরিরা ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে দুই শিবির নেতাকে। মিষ্টভাষী ও সদা হাস্যোজ্জ্বল শহীদ রহিম উদ্দীন ছিলেন শান্তশিষ্ট। তিনি ইসলামী আন্দোলনের এক অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন। তার ভয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আতঙ্কে থাকতো। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শিবিরের মিছিলে একে-৪৭ এবং এস.এম.জির ব্রাশ ফায়ার করে শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের সন্ত্রাসের আখড়া বানাতে চেয়েছিল। তখন ইসলামের খাদেম এ দুই তরুণ নিজেদের বুক পেতে দিয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করেছিল। কিন্তু আওয়ামী প্রশাসনের নির্লজ্জ হাত সেদিনও অতীতের ধারাবাহিকতায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তারা ক্যাম্পাসবাসীকে এবং দুই শহীদের সাথীদেরকে ক্যাম্পাসে শহীদের জানাযা পর্যন্ত পড়তে দেয়নি। ছাত্র-ছাত্রীদের আহাজারির প্রতি কর্ণপাত করেননি কর্তৃপক্ষ।

মেধাবী ছাত্র শহীদ রহিম উদ্দীন এবং মাহমুদুল হাসান দক্ষিণাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপীঠে এসেছিলেন সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করতে। তারা চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী অর্জন করে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন। কিন্তু হায়েনাদের নির্মম ব্রাশ ফায়ার তাদের সে স্বপ্নকে ধুলিস্মাৎ করে দেয়। সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে পড়ে থাকা নিস্তব্ধ রহিম, নিথর হাসানের নির্বাক দ"ষ্টিতে একটিই প্রশ্ন ছিল, কী অপরাধ আমাদের? আমরা কি সন্ত্রাসী? চোর-ডাকাত? কেন তোমরা আমাদের হত্যা করলে? আমাদেরও তো স্বপ্ন ছিল সবার মত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী নিয়ে মায়ের কোলে ফিরে যাওয়ার । জবাব চাই আওয়ামী সরকার ও প্রশাসন। আজকে রহিম, হাসান, জোবায়েরের সাথীদেরও জিজ্ঞাসা, ‘কী ছিল তাদের অপরাধ? কেন আওয়ামী দুর্বৃত্তরা বিনা দ্বিধায় পাখির মত গুলি করে তাঁদেরকে হত্যা করল?’

এক নজরে শহীদ মুহাম্মদ রহিম উদ্দীন
নাম : রহিম উদ্দীন
পিতা : মরহুম মুহাম্মদ হোসাইন
মাতা : খুরশিদা বেগম
ঠিকানা : দক্ষিণ বরতী (পশ্চিম পাড়া) বরতী, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম
ভাই বোনদের সংখ্যা : ৪ ভাই ৩ বোন (তিনি সর্বকনিষ্ঠ)
জন্ম তারিখ : ১৯৭৫ ইং
একাডেমিক যোগ্যতা :বিএ অনার্স বাংলা ১ম বর্ষ
সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সাংগঠনিক মান : সদস্য
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী
আহত হওয়ার তারিখ : ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯ ইং
কবর যেখানে : স্থানীয় গোরস্থান
যে শাখার শহীদ : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মুহাম্মদ রহিম উদ্দীন

পিতা

মরহুম মুহাম্মদ হোসাইন

মাতা

খুরশিদা বেগম

জন্ম তারিখ

জানুয়ারি ১, ১৯৭৫

ভাই বোন

৪ ভাই ৩ বোন (তিনি সর্বকনিষ্ঠ)

স্থায়ী ঠিকানা

দক্ষিণ বরতী (পশ্চিম পাড়া) বরতী, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

সাংগঠনিক মান

সদস্য

সর্বশেষ পড়ালেখা

বিএ অনার্স, বাংলা ১ম বর্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শাহাদাতের স্থান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে


শহীদ রহিম উদ্দিন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ রহিম উদ্দিন


শহীদ রহিম উদ্দিন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ রহিম উদ্দিন