শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৩

রমজানের ছুটিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক র‌্যালির নির্দেশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

রমজানের ছুটির মধ্যে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে সরকার কর্তৃক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক র‌্যালির নির্দেশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, "রমজানের এই পবিত্র মাসে এমন অবিবেচক সিদ্ধান্তে শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা নয়; বরং পুরো দেশবাসী চরমভাবে ক্ষুব্ধ। ইতিমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি হয়ে গেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। হঠাৎ করে এ  নির্দেশনা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। স্কুলের ছুটি চলাকালে এ ধরনের অনুষ্ঠান পালনের বাধ্যতামূলক নির্দেশনা নজিরবিহীন।

অন্যদিকে, মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে সাম্প্রতিক যেসব কর্মকাণ্ড চলে আসছে তা কোনোভাবেই সার্বজনীন বা বাঙালির ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একসময়ের আনন্দ শোভাযাত্রাকে বিশেষ উদ্দেশ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রায় পরিণত করা হয়েছে। মূলত এ অনুষ্ঠান বাঙালি সংস্কৃতির পরিপন্থি।

সম্রাট আকবর ফসল রোপণ ও কর আদায়ের উদ্দেশ্যে ষোড়শ শতকে বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রচলন করেন। আবহমানকাল থেকে বাংলা বর্ষপঞ্জির অনুষ্ঠানে কখনোই মঙ্গল শোভাযাত্রার বিষয়টি ছিল না। মাত্র তিন দশক আগে উদ্দেশ্যেমূলকভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামক এ কুসংস্কারাচ্ছন্ন হাস্যকর অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।

তা ছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাসেরও পরিপন্থি। কেননা, মঙ্গল শোভাযাত্রায় অমঙ্গল কাটাতে যেসব প্রাণীর মূর্তি, প্রতিমা, মুখোশ, ছবি ও কার্টুন প্রদর্শিত হয় এগুলোর বেশির ভাগই মূলত একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষের ধর্মবিশ্বাসের সাথে খুব গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। অনেকগুলোই আবার তাদের ধর্মীয় দিক থেকে বিভিন্ন দেব-দেবীর বাহন হিসেবে স্বীকৃত। যেমন মঙ্গলশোভা যাত্রায় প্রদর্শিত প্যাঁচার মুখোশ সেই বিশেষ শ্রেণির ধর্মাবলম্বীদের মঙ্গলের প্রতীক ও লক্ষ্মীর বাহন। হনুমান রামের বাহন। হাঁস সরস্বতীর বাহন। হাতি, বাঘ ও সিংহ দেবী দুর্গার বাহন। ময়ুর কার্তিকের বাহন।

সুতরাং এ শোভাযাত্রা একটি সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান হতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই সার্বজনীন বা সবার জন্য বাধ্যতামূলক অনুষ্ঠান হতে পারে না। মঙ্গল শোভাযাত্রার এসব প্রতীকে কোনো মুসলমান বিশ্বাস করতে পারে না। এ অনুষ্ঠান একদিকে যেমন বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির সত্তাবিরোধী, তেমনি ইসলামবিরোধী। যা নিয়ে দেশের সচেনতন মহল ও আলেম-ওলামা একমত। তবুও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করে পবিত্র রমজান মাসের মহিমান্বিত দিনে অবৈজ্ঞানিক, ইসলামবিরোধী এ ব্রাক্ষ্মণ্যবাদী বিশেষ সংস্কৃতিকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে এই সরকার।

আমরা অবিলম্বে এ কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অবৈজ্ঞানিক, ইসলাম ও বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী মঙ্গল শোভাযাত্রার র‌্যালি করার বাধ্যতামূলক নির্দেশনা বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে পবিত্র রমজানের ভাবগাম্ভীর্যতা ও জাতির নিজস্ব স্বকীয়তা রক্ষায় মঙ্গল শোভাযাত্রা নামক অপসংস্কৃতি থেকে বিরত থাকতে জনগণের প্রতি আহ্বান করছি।"