সোমবার, ৩০ মে ২০২২

জীবন্ত শহীদেরা ইসলামী আন্দোলনের অনুপ্রেরণার বাতিঘর-আ জ ম ওবায়দুল্লাহ।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আ জ ম ওবায়দুল্লাহ বলেছেন, ইসলামী আন্দোলনে ত্যাগীদের কোন আফসুস বা হতাশা নেই। জীবন্ত শহীদেরা ইসলামী আন্দোলনের অনুপ্রেরণার বাতিঘর।

তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জীবন্ত শহীদ ভাইদের নিয়ে প্রীতি সমাবেশ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইন। এসময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ছাত্রশিবিরের জীবন্ত শহীদ ও শহীদদের পরিবার-পরিজনরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ জ ম ওবায়দুল্লাহ বলেন, এভাবে এতজন জীবন্ত শহীদদের একসাথে দেখতে পাবো তা ভাবিনি। ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এ সুযোগ করে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। যারা জীবনের গুরত্বপূর্ণ সম্পদগুলো হারিয়ে এখনো দ্বীন কায়েমের পথে এগিয়ে চলেছেন তাদের কোন অভিযোগ, আফসুস, হতাশা বা প্রশ্ন নেই। বরং তারা আনন্দিত যে, শরীরের একটি অংশ আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নিয়েছেন। হাশরের দিন আপনাদের অসম্পর্ণ শরীর আল্লাহ তায়ালার কাছে বড় প্রিয় হবে। আপনাদের রক্ত, হাত, পা, চোখগুলো শহীদ হানযালা রা., শহীদ খোবায়েব রা. এর মত মর্যাদা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ। আপনাদের হারানো অঙ্গ ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রেরণার বাতিঘর হবে ইনশাআল্লাহ। ছাত্রশিবির আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত। আমি তাদের ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা তাদের আহত, পঙ্গু ভাইদের খোঁজ-খবর রাখার চেষ্টা করেন। জীবন্ত শহীদেরাও অনেকে প্রতিষ্ঠিত আলহামদুলিল্লাহ। আমি বিশ্বাস করি, এ জমিনে আমাদের এ ভাইয়েরাই অসহায় মানুষের জন্য সহায়ক হবেন। এ আয়োজন আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখুন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জীবন্ত শহীদ দেলাওয়ার হোসাইন বলেন, হক বাতিলের দ্বন্দ্ব চিরন্তন। কেয়ামত পর্যন্ত এ দ্বন্দ্ব চলবে। সত্যের অনুসারিরা যুগে যুগে বাতিলের মোকাবেলা করে সত্যকে বিজয়ী করেছে, করছে এবং করবে ইনশাআল্লাহ। এ পথচলায় মহান আল্লাহ তায়ালা তার কিছু প্রিয় বান্দাকে শহীদ হিসেবে কবুল করে নেন। কিছু ভাই নিজেদের হাত, পা চোখ হারিয়ে নিজেদের জীবন্ত শহীদ হিসেবে নজরানা পেশ করেন। যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন নি:সন্দেহে তারা সফলকাম। শুধু শহীদেরাই আবার দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে আবারো শহীদ হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য। যারা আমাদের সন্তান, বাবা, ভাই, সঙ্গী ও প্রিয়জনদের হারিয়েছি অবশ্যই তারা মহান আল্লাহ কাছে তারা সম্মানিত মেহমান হিসেবে হাজির হয়েছেন। তারা সর্বোচ্চ পুরস্কারের অধিকারী। জীবন্ত শহীদেরা কখনো তাদের কষ্টগুলো কাউকে বুঝতে দেয়না। তারা হাসি মুখে ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রেরণা যোগান। দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্যের জন্য জীবন্ত শহীদেরা হাত-পা বা অঙ্গ পতঙ্গ হারায়নি বা শরীরে অসংখ্য বুলেট ধারণ করেনি। বরং প্রত্যোকের উদ্দেশ্যে ছিলো আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য। তারা আমাদের সান্তনা, আমাদের অনুপ্রেরণা। আসুন আমরা ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করি। আমরা যেনো লক্ষ্যপানে চেয়ে থাকি। ঈমানের উপর দৃঢ় থাকি। আল্লাহ তায়ালা যেনো আমাদের ত্যাগ ও কুরবানীকে কবুল করেন।

সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বলেন, যারা শাহাদাতের তামান্না নিয়ে ময়দানে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন তাদেরকেই আল্লাহ তায়ালা জীবন্ত শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন। দ্বীনের পথে হারানো হাত, পা, চোখগুলো আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেনা এটাই স্বাভাবিকতা। দ্বীনের পথে চলা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পরীক্ষা।

ইসলামী ছাত্রশিবির শুধু একটি ইসলামী আন্দোলনই বরং একটি ভালবাসার, মমতার নাম। আজকে যারা জীবন্ত শহীদ আছেন তাদের সবার মনেই আক্ষেপ কেন আমরা শহীদ হয়ে যেতে পারিনি। অথচ আমাদের সহযাত্রীরা আমাদেরই সামনে শহীদ হয়ে গেছেন। আমি বিশ্বাস করি এ আক্ষেপ কাল কেয়ামতের ময়দানে তাদের উচ্চ মর্যাদা দান করবে ইনশাআল্লাহ। আমরা আশা করি জীবন্ত শহীদেরকে আমরা সব সময় আমাদের পাশে পাবো ইনশাআল্লাহ।

তিনি জীবন্ত শহীদদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা প্রত্যোকেই বিজয়ের স্বপ্ন নিয়ে এ আন্দোলনে শামিল হয়েছি। মঞ্জিল আমাদের জান্নাত। এ মঞ্জিলে মাকসুদে পৌছানোর পথে হাত, পা, চোখ হারানো এগুলো সাময়িক প্রতিকূলতা। আমরা এসব প্রতিকূলতা নিয়েই মঞ্জিলে পৌছাতে চাই। তিলে তিলে এ সংগঠনকে আপনারাই তৈরি করেছেন। বিভিন্ন ময়দানে আমাদের ভাইয়েরা সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বীনের জন্য শাহাদাত বরণ করেছেন। আপনারা ইসলামী আন্দোলনের জীবন্ত সাক্ষী। আপনাদের ত্যাগের কোন মূল্যায়ন দুনিয়াতে সম্ভব নয়। আমি আশাকরি এ সংগঠনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আপনাদের পরামর্শ, দিকনির্দেশনা অব্যাহত থাকবে। আজকের এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ছাত্রশিবির ইতিহাস সংরক্ষণ করবে ও প্রেরণা গ্রহণ করবে ইনশাআল্লাহ।