রবিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

জাতিকে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব এবং আদর্শ নাগরিক উপহার দিতে হবে-অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য হলো আদর্শ নাগরিক তৈরির মাধ্যমে স্বপ্নের সোনার দেশ গড়া। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিটি সেক্টরে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব উপহার দিতে হবে।
তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির আয়োজিত ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইন ও পরিকল্পনাবিধ সিরাজুল ইসলাম।
এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, যে লক্ষ্য সামনে রেখে এদেশের আপামর জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছিলো সে লক্ষ্য পূরণ হয়নি। সচেতন নাগরিকদের প্রকৃত সত্য জানতে হবে। গণতন্ত্র, স্বাধীন গণমাধ্যম ও স্বাধীনতার চেতনাকে হত্যা করে যে বাকশাল গঠন হয়েছিলো তা ছিলো এদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায়। এমন একটি অন্ধকারময় পরিস্থিতিতে ছাত্রশিবির আশার আলো নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলো।
তিনি বলেন, মানুষের তৈরি কোন মতবাদ নিয়ে ছাত্রশিবির আসেনি। ছাত্রশিবির, আল কুরআন ও রাসূল সা. আনীত সুমহান আদর্শের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলো। এ কারণেই হতাশায় নিমজ্জিত ছাত্রসমাজকে এত কম সময়ে আকৃষ্ট করতে পেরেছে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে পড়েও একটি ছেলে কুরআন, হাদিস, নামাজ ও সুমহান আদর্শের কথা বলবে এটি প্রায় অসম্ভব ছিলো। এখনকার ক্যাম্পাসগুলোর পরিস্থিতির চেয়েও তখন অবস্থা খারাপ ছিলো। কলেজে নামাজ পড়াটাও একটা অপরাধ ছিলো। ছাত্রশিবির সেই অসম্ভব কাজটিই সম্ভব করেছে। শত প্রতিকূলতাকে সামনে নিয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবির কার্যক্রম শুরু করেছিলো। আমল, যোগ্যতা ও ঈমানী দৃঢ়তার মাধ্যমে ছাত্রসমাজকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে সুশৃঙ্খল সংগঠনের নজির স্থাপন করেছিলো ছাত্রশিবির।
তিনি আরো বলেন, ছাত্রশিবিরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামের দাবীগুলো পূরণ করা। এ দাওয়াত ছাত্রশিবিরের দিকে নয় বরং আল্লাহর দিকে, কুরআনের দিকে ও রাসূল সা. এর আদর্শের দিকে। ফলে যারা নানা ইজমের দিকে ধাবিত ছিলো, যারা ছাত্রশিবিরকে আঘাত করেছে, রক্ত ঝড়িয়েছে তারাও সময়ের ব্যবধানে ছাত্রশিবিরের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। ছাত্রশিবিরের শহীদ, আহত, পঙ্গু, নির্যাতিতরা আমাদের বড় সম্পদ। কেননা যেখানেই দ্বীনের কর্মীদের রক্ত ঝড়েছে সেই জমিনটা ইসলামের জন্য বিকশিত হয়েছে। ছাত্রশিবির ইতিমধ্যেই জাতিকে সৎ, যোগ্য, আদর্শিক নাগরিক ও নেতৃত্বে উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে, তবে এতে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। ছাত্রশিবিরকে প্রতিটি সেক্টরে জাতির সেবক ও জাতি গড়ার কারিগর উপহার দিতে হবে। রাসূল সা. যেমন শত প্রতিকূলতার মাঝেও দাওয়াতি কাজ অব্যাহত রেখেছেন তেমনি ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের সেই সুমহান আদর্শকে পরিপূর্ণ রুপে ধারণ করে ধৈর্য্য ও ভালোবাসা নিয়ে ছাত্রদের কাছে যেতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ ইসলামের বাংলাদেশ হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইন বলেন, সার্বিক অপশাসনে জাতি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা কাঙ্খিত নাগরিক ও নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে। বাস্তবতা হলো, একটি ঘুণেধরা সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিবর্তণের মূল শক্তি হলো ছাত্রসমাজ। ছাত্রসমাজ যদি ঘুমিয়ে থাকে, ছাত্রসমাজ যদি না জাগে তাহলে বাংলাদেশ জাগবে না। এক্ষেত্রে ছাত্রশিবিরের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। কেননা ছাত্রশিবির জাতিকে কাঙ্খিত নাগরিক ও নেতৃত্ব উপহার দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। হতাশায় নিমজ্জিত জাতিকে আশার আলো দেখাতে হবে ছাত্রশিবিরকেই। কেননা জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক নাগরিক ও নেতৃত্ব তৈরির কারখানা হলো ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবির যদি ব্যর্থ হয় আগামী দিনের বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। সুতরাং সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সাহসিকতা, ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, মানুষকে মানুষ হিসেবে হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে জীবনের সঠিক অর্থ অনুধাবন করা ও সে অনুযায়ী জীবন গঠন জরুরি। দুনিয়া পরীক্ষা দেয়ার জায়গা আর ফলাফলের জায়গা আখেরাত। আখেরাত ও দুনিয়া অবিচ্ছেদ্য। দুনিয়ার জীবনটা গঠন করতে হবে আখেরাতের উপযুক্ত করে। আমাদের ক্যারিয়ার দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের সফলতাকে কেন্দ্র করে হতে হবে। যা ইবাদত ও আল্লাহর দেয়া খেলাফতের দায়িত্বের অংশ হবে। এ বুঝটি ছাত্রশিবির ছাত্রসমাজের মাঝে উপলব্ধি করাতে সহযোগিতা করেছে। ছাত্রশিবিরের প্রতিটি জনশক্তি একেকটি স্বপ্নের নাম। সুতরাং আমাদের ক্যারিয়ার শুধুমাত্র দুনিয়ায় হলে চলবে না সেটা অবশ্যই দুনিয়া এবং আখিরাতের জন্য হতে হবে। কাঙ্খিত সমাজ বিনির্মাণের জন্য যে ধরনের মানুষ ও গুণাবলী দরকার, সে ধরনের মানুষ ছাত্রশিবির জাতিকে উপহার দিচ্ছে। এ কর্মকান্ডের মাত্রা আরো বাড়াতে হবে। অন্যায়,অনাচার, অসততা থেকে দেশ এবং সমাজকে বাঁচাতে তাকওয়াবান সৎ এবং দক্ষ ও দেশ প্রেমিক নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই তা সর্বস্তরের জনগণকে বুঝাতে হবে।
সমাপনি বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বলেন, আখেরাতে নিজের মুক্তি ও দুনিয়ায় দ্বীনের বিজয়ের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিয়েছেন। এ মেসেজটি নিয়ে ছাত্রসমাজের কাছে যেতে হবে। দূর্ভাগ্যবশত ইসলাম নিয়ে সংকীর্ণতা রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্টপোষকতা করা হচ্ছে। এমনকি বিশ্বব্যবস্থা এ ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত। আজকে মুসলমান মুসলমানে বিবাদ সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এ অবস্থায় ইসলামের ব্যাপকতা ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার বাস্তব রুপটি ছাত্রশিবিরের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। ষড়যন্ত্র, প্রতিকূলতা থাকবেই। তবে আমাদের সকল প্রতিকূলতা মাড়িয়ে লক্ষ্য পানে এগেয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্রশিবির জাতি গঠনে নৈতিকতা সম্পন্ন যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির কাফেলা। ইসলামের সোনালী অতীত ও নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনার কাফেলা। ছাত্রশিবির অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী কাফেলা। এদেশ থেকে খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, টেন্ডারবাজি দূর করার প্রত্যয় ছাত্রশিবিরই গ্রহণ করেছে। আমাদের ২৩৪ শহীদ, আহত, পঙ্গুত্ব বরণকারী ভাইদের ত্যাগের নজরানা ছাত্রশিবিরকে এতটুকু বিচলিত করতে পারেনি। বরং তারা আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস। ছাত্রসমাজের অধিকার ফিরিয়ে আনতে ছাত্রশিবির ছিলো আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, ছাত্রশিবির পিতা-মাতার হাহাকারগুলো বুঝতে পারে। ছাত্রসমাজকে অনৈতিকতার করাল গ্রাস থেকে রক্ষায় ছাত্রশিবির সাংস্কৃতিসহ সার্বিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আমি সরকারের প্রতি আহবান রেখে বলতে চাই, অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমরা সকল ছাত্রকে নিয়ে সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন দেখি সেখানে আপনারা আমাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেন না। ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে ৫৩জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাদের মধ্যে ৩২জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আমরা আশাকরি বাকীদেরও মুক্তি দেয়া হবে। কারারুদ্ধ ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিয়ে আপনারা উদারতার পরিচয় দিন।
ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মানে ছাত্রশিবিরের যে অগ্রযাত্রা সে যাত্রায় সকলকে পাশে থাকার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।