বুধবার, ২৭ অক্টোবর ২০২১

২৮ অক্টোবর লগি বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরাই আজকের আগ্নেয়াস্ত্রধারী খুনি ধর্ষক-ছাত্রশিবির সভাপতি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, লগি বৈঠার নির্মমতা জাতির জীবনে একটি কালো অধ্যায়। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লগি বৈঠা দিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে-খুঁচিয়ে নিরাপরাধ মানুষকে খুন করে লাশের উপর নৃত্য করে জঘন্যতম বর্বরতার সূচনা করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী নির্মমতা, পৈশাচিকতা, বর্বরতা আরো বেড়েছে। সেদিনের লগি বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরাই আজকের আগ্নেয়াস্ত্রধারী খুনি ধর্ষক।
তিনি রাজধানীর এক মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন ট্রাজেডি দিবস স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে সেক্রেটারি জেনারেল রাশেদুল ইসলামসহ উপস্থিত ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিয়েট সদস্যবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন, সেদিন অগণতান্ত্রিক আওয়ামী রাজনীতির পৈশাচিক প্রতিহিংসার ভয়ানক হিংস্রতার জঘন্য ও বর্বর রুপ দেখেছিল বিশ্ববাসী। ক্ষমতার লোভ আওয়ামীলীগকে কতটা নিষ্ঠুর ও উন্মাদ করতে পারে, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে তা দেখেছিলো জাতি। লগি বৈঠা দিয়ে তারা শুধু ঢাকাতেই ৬ জন মানুষকে হত্যা করেছিল। হত্যা করে রক্তাক্ত মৃতদেহ নিয়ে টানাহেঁচড়া এবং মৃতদেহের ওপর নৃত্য করে মানবজাতির ইতিহাসকে কলংকিত করেছিল। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের মানুষ এই বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেছে। তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। ২৮ অক্টোবরের খুনিরা চিহ্নিত থাকলেও আজ পর্যন্ত তাদের বিচার করা হয়নি। উল্টো সরকার অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে মামলা প্রত্যাহার করে খুনিদের মদদ দিয়েছে। ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ড কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং নীল নকশার অংশ হিসেবে সুপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। বর্বর কায়দায় মানুষ হত্যা করেই তাদের ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি। বরং তারা গোটা জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। তারা একটি মানুষ হত্যা করেই পরিতৃপ্ত হয়নি বরং তারা একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনি যে নিকৃষ্ট বাহিনীকে লগি বৈঠা হাতে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ছিলেন তাদের আবারো ডাক দিন। দেখবেন তাদের হাতে এখন আর লগি বৈঠা নেই বরং আছে একে-৪৭। তাদের হাতে আগুন রয়েছে যে আগুন দিয়ে তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য হিন্দুদের বাড়ী ঘর মণ্ডপে আগুন দিচ্ছে। তাদের হাতে আজ ধর্ষণের ছড়ি , খুন হওয়া আবরারের পোষাক, বাংলাদেশের রক্ত। তাদের হাতে ভূলুন্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। তাদেরকে আপনি থামান। যদি থামাতে না পারেন তাহলে তারা কোন দিনই বাংলাদেশকে শান্তিতে থাকতে দিবে না। শহীদ মাসুম, শিপন, মুজাহিদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে যে অহঙ্কার করছেন তা বেশি দিন সুখকর হবে না। এর সুষ্ঠু সমাধান করতে হলে শহীদ মাসুম শিপনের সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে প্রতিটি ক্যম্পাসে, প্রতিটি ঘরে ঘরে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। যদি দিতে পারেন ছাত্রশিবির আপনাদের কুলাঙ্গার সন্তানদের মানুষে পরিণত করবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, ছাত্রশিবির ২৮ অক্টোবরের এই নিকৃষ্ট ঘটনাকে পরিবর্তন করে দিয়ে এই পল্টন থেকে বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করে বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে স্বাধীনতার সুফল পৌছে দিবে। নতুন করে এ বাংলাদেশকে একটি সুন্দর সুজলা-সুফলা দক্ষ দেশপ্রেমিক এবং সৎ নাগরিক পরিণত করে বাংলাদেশকে নতুন করে সোনার বাংলাদেশে পরিণত করার জন্যে উপযোগী লোক তৈরি করবে ইনশাআল্লাহ। আমি বিশ্বাস করি আজকের এই চিত্র প্রদর্শনী আমাদের মনকে যেভাবে নতুন করে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে তেমনি সাহস যোগাবে। সাহস যোগাবে নতুন করে আগামী প্রজন্মকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নেয়ার।
তিনি আরও বলেন, তারা সেদিন ষড়যন্ত্র করেছিল মূলত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার জন্যে। নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল ইসলামকে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে ঠেকিয়ে দেয়ার জন্যে। সেদিন না পারলেও পরবর্তীতে নেতৃবৃন্দকে তারা ঠিকই শহীদ করেছে। কিন্তু ইসলামের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে পারেনি এবং পারবেও না ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, প্রতি বছর ২৮ অক্টোবর এলে আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয় ঠিক কিন্তু হতাশ করে না। শহীদের রক্তাক্ত দেহ গুলো আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস। এ প্রেরণা মুছে দেয়ার ক্ষমতা জমিনে কারো নেই। যদিও চিহ্নিত খুনিদের রক্ষা করতে সরকার ক্ষমতার দাপটে মামলা প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু এ অপকৌশলে নিরপরাধ সন্তান হারানো মায়েদের বুকফাটা আর্তনাদ ব্যর্থ হবে না, রক্তের দাগও মুছে যাবে না। সময়ের পরিবর্তনে খুনি ও নিদের্শদাতাদের অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ২৮শে অক্টোবরসহ প্রতিটি খুন, গুম ও অবিচারের হিসাব আদায় করা হবে। বাংলার জমিনে কোরআনের আলোকে বিনির্মাণ করে শহীদদের প্রতিফোটা রক্তের বদলা চূড়ান্ত ভাবে নেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।