মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

ছাত্রশিবির জাতির প্রত্যাশা পূরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাবে-শিবির সভাপতি

তিনি আজ রাজধানীতে শহীদ আব্দুল মালেক মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের প্রথম সাধারণ অধিবেশনে এসব কথা বলেন। সেক্রেটারি জেনারেল সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় কার্যকরী পরিষদে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা:সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন, সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাতসহ কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

শিবির সভাপতি বলেন, আগামী দেশ গড়ার কারিগর তরুণ ও ছাত্রসমাজ যখন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছিল, তখন জাতির এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ছাত্রশিবিরের পথ চলা শুরু হয়েছিল। এরপর থেকে এ দূর্জয় কাফেলা এগিয়ে চলেছে সম্মুখপানে। কিন্তু এ দীর্ঘ পথ চলার প্রতিটি বাঁকে বাঁকে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদেরকে সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। বাতিলের আঘাতে অকালে ঝরে গেছে হাজারো সম্ভাবনা। যা এখনো অব্যাহত আছে।

কিন্তু ছাত্রশিবিরের এই ত্যাগ বৃথা যায়নি। এই প্রচেষ্টা জাতিকে একটি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দূর্জয় কাফেলা উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে। ছাত্রশিবিরের পতাকা তলে আজ লাখো তরুণ সৎ, যোগ্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে দেশ গঠনের মাধ্যমে জাতির প্রত্যাশা পূরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যত বাধাই আসুক না কেন, ছাত্রশিবির তার লক্ষ্য থেকে পিছু হটবে না । জাতির প্রত্যাশা পূরণে ছাত্রশিবির তার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেই যাবে। এই আদর্শিক পথ চলায় সহযোগির ভূমিকা পালন করতে আমরা দেশের ছাত্র-জনতার প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

শিবির সভাপতি বলেন, দেশ এখন আরো মহাসংকটের মধ্যে পড়ে গেছে। গত ৩০শে ডিসেম্বর অবৈধ সরকার রাষ্ট্রীয় ও দলীয় বাহিনী দিয়ে রাতের আধারে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আরো একবার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দেশের জনগণ, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থা এই ভোট ডাকাতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। আইনের শাসন ও স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারকে ভূলুন্ঠিত করা হয়েছে। বিশেষ করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনিয়ম দূর্নীতি ও শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের কারণে লাখো শিক্ষার্থী আজ শঙ্কিত।

ছাত্রলীগ ও সরকার দলীয় লোকজন কতৃক ১ম শ্রেণী থেকে শুরু করে প্রতিটি পরিক্ষার লাগামহীন ও নজিরবিহীন প্রশ্নফাঁস এবং ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। অব্যাহত প্রশ্নফাঁস ও এই জাতি বিনাশী অপতৎপরতা বন্ধ করতে সরকারের রহস্যজনক ব্যর্থতায় পুরো জাতি আজ শঙ্কিত। প্রশ্নফাঁসের ঘটনার সঙ্গে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও সরকারের কর্মকর্তাদের নাম আসলেও দলীয় বিবেচনায় বিচারের মুখোমুখি না করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্যাম্পাসে মাদকের বিস্তার, লাগামহীন টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজী, আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।

বিরোধী সংগঠনের নেতা কর্মীদেরকে হল ও ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষাকে অগ্রাহ্য করে পাশ্চাত্য ভাবধারায় একটি ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে ইসলামী ভাবধারায় বিপরীত স্রোতে ধাবিত করার নির্লজ্জ অপপ্রয়াস চালাচ্ছে এবং তারা এ গুলো অব্যাহত রাখবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

তিনি বলেন, ছাত্রশিবির সেই কাফেলার উত্তরসূরি যারা কোরআনের আলোকে সমাজ রাষ্ট্র ও বিশ্বকে আলোকিত করেছিল। তবে ঐতিহাসিক বাস্তবতা হলো সত্য ও ন্যায়ের পথ মসৃন নয়। আমরা এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার ব্যপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ছাত্রশিবির তার পথ চলায় প্রতিটি প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করেছে আদর্শ আর চারিত্রিক শক্তি দিয়ে। এখনো তার ব্যতিক্রম হবে না। আমরা বিশ্বাস করি বাতিল পন্থা সময়ের ব্যবধানে আদর্শিক শক্তির কাছে অবশ্যই পরাজিত হবে।

সুতরাং নতুন বছরে নতুন উদ্যামে ঈমানের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, ছাত্রশিবির আজ এক বিশাল কাফেলায় পরিণত হয়েছে কিন্তু লাখো ছাত্র পথহারা বা বিপথে ডুবে আছে। তাই চারিত্রিক ও আদর্শিক শক্তি দিয়ে ছাত্রসমাজকে কুরআনের আলোকে সাজানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আর কুরআনের আলোকে আগামী প্রজন্ম গঠন করতে পারলেই জাতির প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব।