সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

জেরুজালেম রক্ষায় মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, বায়তুল মোকাদ্দাস মুলমানদের প্রথম কেবলা। মুসলমানদের পবিত্র ভুমি বায়তুল মোকাদ্দাসকে অবৈধ ইহুদিবাদী ইসরাইলের হাতে তুলে দিতে চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সাম্রাজ্যজ্যবাদী আমেরিকা। যার প্রতিফলন ঘটেছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া।এই অবস্থায় কোন মুসলমানের নিরব থাকা উচিৎ নয়। তাই জেরুজালেম রক্ষায় মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তিনি আজ ঢাকায় এক মিলনায়তনে ঢাকা মহানগরী পূর্ব শাখার বার্ষিক পরামর্শ সভার বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। শাখা সভাপতি এস আর মিঠুর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি তোফাজ্জল হোসেনের পরিচালনায় প্রোগ্রামে আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগরী অর্থ সম্পাদক সাইয়্যেদ মু. জোবায়ের, শাখা দপ্তর সম্পাদক হাফিজুর রহমানসহ মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল বৃন্দ।

শিবির সভাপতি বলেন, আল-আকসা মসজিদসহ জেরুজালেমে অবস্থিত ইসলামী স্থাপনাগুলোর সঙ্গে ইহুদিদের কোনো ধরনের ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নেই। রাসুল সঃ পবিত্র মেরাজে গমনকালে মসজিদুল আকসায় নামাজ আদায় করেন। তিনি ছিলেন নামাজে অংশগ্রহণকারী সব নবী-রাসুলের ইমাম।যা ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্য। কিন্তুু তা সত্ত্বেও ইসরাইল আল-আকসা মসজিদসহ জেরুজালেমে ইসলামী স্থাপনাগুলোয় ইহুদিবাদীদের কর্তৃত্ব ও সেগুলোর ইহুদিকরণের তৎপরতা দিনকে দিন জোরদার করেই চলেছে। জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার জন্য ইহুদীবাদী সরকার তাদের উপর হামলা চালানোসহ তাদের কৃষিজমি ধবংস করে দিচ্ছে এবং সেখানে নতুন নতুন ইহুদী উপশহর নির্মাণ করছে। এভাবে পূর্ব জেরুযালেমকে পুরোপুরি ইহুদীকরণ করে মসজিদুল আকসা ধবংসের কাজে হাত ইসরাইলের লক্ষ্য হয়ে দাড়িয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর থেকে তাদের এই ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারই ইশারায় ইসরাইল বায়তুল মোকাদ্দাস শহরসহ ফিলিস্তিনি অঞ্চল গুলোতে নানা হঠকারিতা ও ষড়যন্ত্র বিপজ্জনক পর্যায়ে জোরদার হয়েছে। ট্রাম্পের সহযোগিতা নিয়ে বর্ণবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এ অঞ্চলে ফিলিস্তিনি মুসলমানসহ অ-ইহুদিদেরকে ধর্মীয় অধিকার সহ সকল ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেই চলছে। যার বাস্তব প্রমাণ ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করলেন।এর মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাকে অস্বীকার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রাসূল (সা.) প্রায় সাড়ে নয় লক্ষ বর্গমাইল এলাকার রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে একটি অবিভাজ্য দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রাসূল (সা.)-এর পর তার উত্তরসূরি হযরত উমর (রা.) বারো লক্ষ বর্গমাইলের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অনুরূপ একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবীর মুসলমানরা নানা দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এটাই মুসলিম বিশ্বের পতনের বহুবিধ কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ।

আমাদের পবিত্র কেবলা নিয়ে মুসলিম ওম্মাহর সুদৃঢ় অবস্থান ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতাই আজকে ট্রাম্পকে এমন দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত নিতে সাহস জুগিয়েছে। এখনই বায়তুল মোকাদ্দাস নিয়ে মুসলিম ওম্মাহকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। প্রথম কেবলা রক্ষায় মুসলমানদের যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস ইহুদীদের কবল থেকে মুক্ত করতে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। প্রত্যেক মুসলমানকে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত ভাই বোনদের পাশে দাঁড়ানো এবং পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস ইসরাইলী দখলদারিত্বমুক্ত করতে এগিয়ে আসতে হবে।

শিবির সভাপতি বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসন বিশ্ব সভ্যতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আল আকসা মসজিদে মুসলমানদের প্রবেশে বাধা প্রদান, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা ও বর্বরোচিত হামলা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে রক্তক্ষরনের শামিল। ইসরাইল ইসলাম ও বিশ্ব মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করে চলছে, তা থেকে সরে না আসলে এর জন্য তাদেরকে অবশ্যই কঠিন খেসারত দিতে হবে। পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার এই ষড়যন্ত্রমূলক স্বীকৃতি বাতিল করার জন্য আহবান জানাচ্ছি। একই সাথে এই উস্কানিমূলক সিদ্ধান্ত বাতিলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, দেশ ও বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বকে সুদৃঢ় অবস্থান গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।

সংশ্লিষ্ট