৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মুহতারাম কেন্দ্রীয় সভাপতির বিবৃতি


বুধবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ - বুধবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
শুকরিয়া সেই মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে,যিনি শূন্য থেকে এই পৃথিবীকে পূর্ণতায় ভরিয়ে দিয়েছেন এবং মুমিনদের শঙ্কাকুল হৃদয়কে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ করেছেন চুড়ান্ত বিজয়ের জন্য। দরুদ ও সালাম সারা পৃথিবীর জন্য রহমতের বার্তাবাহী রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতি।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার কাছে ইসলামের জন্য শাহাদাতবরণকারী সকল শহীদদের রুহের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করছি। আল্লাহ এই দ্বীনের জন্য যুলুমে নিপতিত প্রতিটি প্রাণকে উত্তম প্রতিদান দিন।

প্রতিটি সমাজ কিংবা সভ্যতার পরিবর্তনের সাথে জড়িয়ে থাকে কিছু স্বপ্নবাজ মানুষ। তাদের একসময়ের হাটি হাটি পা পা করে এগুনো পথ,কালের আবর্তনে পরিণত হয় মহাসড়কে। যাদের বোনা বীজের বদৌলতেই মরুভূমি পরিণত হয় সুশোভিত জমিনে।

১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে ছয় জন মেধাবী ছাত্রের দেখা স্বপ্ন আজ অজস্র তরুণের চোখে-মুখে, সেদিনের নিভু নিভু সে সলতে আজ আলোর রোশনাই ছড়াচ্ছে লাখো-কোটি হৃদয়ে। শুকরিয়ার কোন ভাষা সত্যিই আমাদের জানা নেই।

জাহেলিয়াতের অবশ্যম্ভাবী চ্যালেঞ্জের সামনে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার যোগ্যতাসম্পন্ন মুখলিস কর্মী গড়ে তোলার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলো ছাত্রশিবির। প্রতিজন ছাত্রকে মন-মানসিকতায় আধুনিক ও একইসাথে মোহনীয় চরিত্রের অধিকারী করে গড়ে তুলতে চেয়েছে শিবির।

রাসূল (সা.) এর আদর্শকে বুকে ধরে আমরা কুরআনের আলোয় রাঙাতে চেয়েছি আমাদের ভুবন। চেয়েছি এ জমিন থেকে অন্যায় আর অনাচারের মূলোৎপাটন ঘটিয়ে অনাবিল শান্তির এক সমাজ উপহার দিতে। মত-পথ-পদ্ধতির বিতর্ক এড়িয়ে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার মিশনে আমরা নিরত অবিচল ছিলাম।

ছাত্রশিবির বাংলাদেশের প্রচলিত ছাত্ররাজনীতির গুণগত মান পরিবর্তনে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থেকেছে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। ছাত্রদেরকে পড়াশোনায় মনোযোগী হবার পরামর্শ দেওয়ার সাথে সাথে দেশের ক্রান্তিকালে রাজপথে নেমে আসার উদাত্ত আহ্বানও ছাত্রশিবির রেখেছে।

দেশকে পুঁজি করে ব্যবসা করা কায়েমী স্বার্থান্ধ গোষ্ঠী কখনোই ছাত্রশিবিরের এই পথচলাকে মসৃণ রাখতে দেয়নি। গুম, খুন, নির্যাতন ও হুমকির মাধ্যমে তটস্থ করতে চেয়েছে বারবার। চেয়েছে যেন ছাত্রশিবির তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে অর্থহীন প্রতিহিংসামূলক রাজনীতিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। কিন্তু আমরা কখনোই সংকীর্ণমনা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলাম না।

ছাত্রশিবির বিভিন্ন সময়ে ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম, লেখক ফোরাম, বিজ্ঞানমেলা, কুইজ প্রতিযোগিতা, সাধারণজ্ঞানের আসর, মেধাবৃত্তিসহ বিভিন্ন আয়োজনে শানিত করতে চেয়েছে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে। উদ্বুদ্ধ করেছে আগামীদিনের দেশ গড়ার কারিগর হতে, ভবিষ্যতের রঙিন নায়ের মাঝি হতে। বিভিন্ন জাতীয় সমস্যার মোকাবেলায় ছাত্রশিবির তার সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে এগিয়ে এসেছে। দেশ এবং বিদেশে নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য আন্তরিক সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছে ছাত্রশিবির।

ছাত্রশিবির আলো ঝলমলে দিন এনে দেবার শপথে দীপ্ত এক বিশ্বাসী কাফেলা। ছাত্রশিবির সামগ্রিক বিশ্বায়ন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের এই যুগে কালেমার পতাকা ওড়ানোর মত সোনার মানুষ তৈরীর শপথ নিয়েছে। হাজারো পথহারা তরুণের কাছে ইসলামের সুমহান আহ্বান পৌঁছে দেওয়ার আয়োজনে ছাত্রশিবির অঙ্গীকারাবদ্ধ।

আমাদের এই পথচলা বদর-ওহুদ-মূতার প্রান্তর হয়ে আজও চলমান রয়েছে একই উদ্যমে, একই তেজে। আমরা সাময়িক কোন পরাজয়ে মুষড়ে পড়ি না,প্রিয় কোন সঙ্গীর বিদায়ে হতোদ্যম হই না; বরং স্রষ্টার প্রতি আমাদের ভরসা আরও বেশি মজবুত
হয়।

"নয়া বুনিয়াদে গড়ে তুলি নব স্বপ্নসাধ
পাল তুলে দাও ঝান্ডা উড়াও সিন্দাবাদ

আল্লাহ হাফিজ
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
ইসলামী ছাত্রশিবির জিন্দাবাদ

ড. মোবারক হোসাইন
কেন্দ্রীয় সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির