শহীদ তারেকুল আলম

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ০২ মার্চ ১৯৮৯ | ২৭

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

শহীদ তারেকুল আলম ছিলেন জনাব আলী হোসেনের সুযোগ্য পুত্র। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ির নানুপুর গ্রামে। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন শহীদ। বৃদ্ধ পিতা আলী হোসেন মংলা পোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। শাহাদাতকালে তারেকুল ছিলেন ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

শিক্ষাজীবন
অত্যন্ত মেধাবী ও বুদ্ধিমান ছাত্র ছিলেন শহীদ। তিনি নানুপুর গাউছিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে দাখিল ও আলিম পাস করেন। এরপর উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ভর্তি হন নাজিরহাট জামেয়া আহমদিয়া সিনিয়র আলিয়া মাদ্রাসায়। তাঁর স্বপ্ন ছিল একজন বড় আলেমে দ্বীন হওয়া। কিন্তু ফ্যাসিস্টচক্র তাঁর সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়।

শাহাদাতের ঘটনা
১৯৮৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, বিকাল ৩টা; শিবিরকর্মী মেধাবী ছাত্র শহীদ তারেকুল আলম জরুরি কেনাকাটার জন্য ফটিকছড়ির নানুপুর বাজারে গিয়েছিলেন। তিনি দাড়ি রাখতেন। ইসলামের দুশমন ছাত্রলীগের ফ্যাসিস্টচক্র তাঁকে দেখা মাত্র খুনের উন্মাদনায় ঝাঁপিয়ে পড়ল তাঁর ওপর। এরপর উপর্যুপরি আঘাতের পর আঘাতে তাঁর হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষত-বিক্ষত করে সন্ত্রাসীরা। তবুও ক্ষান্ত হয়নি নরপিশাচরা; হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁকে নিয়ে যায় পাশের নির্জন ঝোপের আড়ালে। সেখানে তাঁকে দা, কিরিচ ও রড দিয়ে আঘাত হানে ইচ্ছামতো। এরপর দুর্বৃত্তচক্র তারেককে মৃত মনে করে ফেলে চলে যায়। বর্বরতার প্রত্যক্ষদর্শী কতিপয় স্থানীয় লোক সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ক্ষতের যন্ত্রণা ও রক্তক্ষরণে দিন দিন তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।

২৭ ফেব্রুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত হন তরিক। ২৮ ফেব্রুয়ারি অপারেশন করে ডান পা সম্পূর্ণ কেটে ফেলতে হয়। এরপর দুইদিন অজ্ঞান ছিলেন। ডাক্তার তিন এম্পুল দুষ্প্রাপ্য এন্টি গ্যাংগ্রিন সিরাম (এজিএম) প্রয়োজন বলে জানান। পত্রপত্রিকায় খবর ছাপিয়েও সারাদেশের কোথাও ঔষধটি পাওয়া যায়নি। শিবিরের পক্ষ থেকে বিদেশ থেকে ঔষধটি আনানো হয়। কিন্তু ডাক্তারদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও তরিককে বাঁচানো যায়নি। ২ মার্চ ১৯৮৯, সকাল সাড়ে দশটায় পঙ্গু হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভ রুমে কালেমায়ে শাহাদাত পড়তে পড়তে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান সকলের প্রিয় শহীদ তারেকুল আলম ভাই। সাতবার জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়।


একনজরে শহীদ তারেকুল আলম
নাম : তারেকুল আলম
মায়ের নাম : আনোয়ারা বেগম
বাবার নাম : আলী হোসেন
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- নানুপুর, থানা- ফটিকছড়ি, জেলা- চট্টগ্রাম
ভাই-বোনের সংখ্যা : ৩ ভাই, ১ বোন
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান : দ্বিতীয়
পরিবারের মোট সদস্য : ৬ জন
সাংগঠনিক মান : সাথী প্রার্থী
সর্বশেষ পড়াশোনা : ফাজিল ১ম বর্ষ, (দাখিল ও আলিম নানপুর মজহারুল উলুম গাউছিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে)
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : নাজিরহাট আলিয়া আহমদিয়া কামিল মাদ্রাসা
জীবনের লক্ষ্য : আলেমে দ্বীন হওয়া
আহত হওয়ার স্থান : চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নানুপুর বাজারের কাছে (দুপুর সাড়ে ১২টায় ঘর থেকে ডেকে নিয়ে আঘাত করে, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯)
আঘাতের ধরন : ডান পায়ে বিষাক্ত বেয়োনেটের প্রয়োগ, মাথা ও বাম হাতে দা, কিরিচ, ছুরি ও রড দিয়ে আঘাত
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রলীগ
শাহাদাতের তারিখ : ২ মার্চ, ১৯৮৯; সকাল ১০.৩০ মিনিট
শাহাদাতের স্থান : ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভ রুম
স্মরণীয় বাণী : “দুনিয়া কিছুই না, আমি শহীদ হব।”

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ তারেকুল আলম

পিতা

আলী হোসেন

মাতা

আনোয়ারা বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৩ ভাই, ২ বোন , তিনি সবার মাঝে

স্থায়ী ঠিকানা

ফটিকছড়ির নানুপুর গ্রাম

সাংগঠনিক মান

সাথীপ্রার্থী

সর্বশেষ পড়ালেখা

ফাজিল, চট্টগ্রাম আহমদিয়া মাদরাসা

শাহাদাতের স্থান

ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভ রুম